মেসি-রোনালদোর এক দশকের শাসনের অবসান ঘটিয়ে ফিফার বর্ষসেরা হয়েছেন বলকান ম্যাজিশিয়ান লুকা মদ্রিচ। তার এই অসামান্য অবদানের সম্মানে এ সপ্তাহে জবানে এর বিশেষ আয়োজন থাকছে এ ফুটবল জাদুকরকে নিয়ে।
সদ্য ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা ফিফা কর্তৃক এ বছরের সেরা ফুটবলারের মুকুট চড়েছে ক্রোয়াট ও রিয়াল মাদ্রিদ মিডফিল্ডার লুকা মদ্রিচের মাথায়। যাকে আজ পুরো বিশ্ব এক নামে চিনছে, যার পায়ের জাদুতে মন্ত্রমুগ্ধ হচ্ছে পুরো ফুটবল বিশ্ব তার শৈশবটা মোটেই অন্য দশজন স্বাভাবিক বাচ্চার মত ছিল না।
১৯৮৫ সালে স্বাধীনতাকামী ক্রোয়েশিয়ার জাদার শহরের মদ্রিচি নামক ছোট্ট গ্রামে স্ত্রিপে ও রাদোইকার ঘরে জন্ম গ্রহন করেন লুকা মদ্রিচ জুনিয়র। জন্ম নেয়ার প্রথম ছয় বছর বেশ ভালো ভাবেই কেটেছিল এই ফুটবল জাদুকরের। তবে ১৯৯১ সালের ৮ ডিসেম্বর যখন ক্রোয়েশিয়াকে রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করা হয় তখন সার্বিয়ার সৈনিকদের গুলিতে তার দাদা নিহত হন। লুকা মদ্রিচ ও তার পরিবার প্রাণের ভয়ে নিজ গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে আশ্রয় নেন তাদের গ্রাম থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরের এক শরণার্থী শিবিরে। যুদ্ধে নিজের গ্রাম থেকে নির্বাসিত মদ্রিচের জীবনের বেশ লম্বা সময় কেটেছে শরণার্থী শিবিরে।
শরনার্থী শিবিরে প্রতিটি মানুষের মত মদ্রিচকেও লড়াই করতে হতো খাদ্য ও নিজের অধিকার পাওয়ার জন্য। সে সময়টায় লুকা মদ্রিচের পরিবার চরম আর্থিক সংকটে পড়ে যায়। তবে এর কোনো কিছুই মদ্রিচের ফুটবলের প্রতি ভালোবাসায় কোনো আঘাত করতে পারেনি। শরণার্থী শিবিরে থাকাকালীন সময়েও তার আশে পাশের রাস্তার ধারে ফুটবল নিয়ে খেলায় মত্ত থাকতেন ছোট্ট লুকা মদ্রিচ। তার ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা দেখে তার বাবা স্ত্রিপে চাইতেন তার ছেলে ফুটবলার হোক তবে আর্থিক সমস্যার কারণে চাইলেও সে সময়টায় স্ত্রিপে তার ছেলেকে কোনো ক্লাবে ভর্তি করাতে পারেনি। ১৯৯৬ সালে তাকে স্থানীয় ফুটবল ক্লাব জাদার’এ ভর্তি করে দেন মদ্রিচের বাবা স্ত্রিপে। সেখানে প্রায় ৫ বছর কাটানোর পর নিজেকে ইউরোপিয়ান মানের ফুটবলার হিসেবে প্রমাণ করার লক্ষ্যে তাকে স্থানীয় আরেক ক্লাব হাজদুক স্প্লিটে নিয়ে যায় মদ্রিচের বাবা। তবে মদ্রিচ সে সময় বয়সের তুলনায় শারীরিক ভাবে ছোট গড়নের হওয়ায় তাকে হাজদুক স্প্লিটে রিজেক্ট করে। তার কিছুদিন পরই মদ্রিচ হাজদুক স্প্লিটের চির প্রতিদ্বন্দ্বী ডায়নামো জাগ্রেব ফুটবল ক্লাবে যোগ দেন।
সে সময় তাদের আর্থিক অবস্থা এমন নিদারুণ অবস্থা ছিলো যে তার বাবা তাকে এক জোড়া সিন প্যাড কিনে দেয়ার সামর্থ্য ছিলো না। তখন তার বাবা কাঠের টুকরোতে চামড়া ও কাপড় মুড়িয়ে সিন প্যাড বানিয়ে দিতো। প্রাথমিক ভাবে ডায়নামো জাগ্রেব’র যুব দলে যোগ দিলেও তার খেলায় মুগ্ধ হয়ে কোচ তাকে মূল দলে জায়গা করে দেয়।
সেখান থেকেই শুরু হয় লুকা মদ্রিচের উত্থান। তারপর খেলেছেন ইংল্যান্ডের টটেনহ্যামের হয়ে। ২০১২তে যোগ দেয় স্প্যানিশ জায়ান্ট রিয়াল মাদ্রিদে।
সেই শরণার্থী শিবিরে বড় হওয়া ছেলেটি ২০১৮ বিশ্বকাপের ফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার হয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন। বিশ্বকাপে অসাধারণ পারফর্মেন্সের জন্যে পেয়েছেন গোল্ডেন বল। কিছুদিন আগেই ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলার হয়েছেন তিনি। যেখানে পিছনে ফেলেছেন রোনালদো-মেসিদের।
যুদ্ধ বিদ্ধস্ত মদ্রিচি গ্রাম থেকে বাঁচার তাগিদে পালিয়ে আসা লুকা মদ্রিচই জায়গা করে নিয়েছেন বর্তমান সেরা ফুটবলারের জায়গা।