ভারতের কাছে আরো একবার হেরে এশিয়া জয়ের স্বপ্নভঙ্গ হল টাইগারদের। কিন্তু এ পরাজয়ে গ্লানি নেই। আছে, গৌরব। কারণ লড়াইটা শুধু ভারতের সাথেই না, ছিল দ্বাদশ খেলোয়াড় আম্পায়ারের বিপক্ষেও। পরাক্রমশালী দুটো পক্ষের বিপক্ষে শেষ বল পর্যন্ত লড়াই করাটা যে কোনো দলের জন্যই গৌরবের।
কেও যদি প্রশ্ন করেন যে, লিটনের আউটটা নিয়ে এত হৈচৈ এর কি আছে? সে ক্ষেত্রে পাল্টা প্রশ্ন করতে হয়, আপনি শেষ পর্যন্ত খেলা দেখেছেন কি না? মাত্র ২২২ এর জওয়াবে ভারতে খেলতে হয়েছে শেষ বল পর্যন্ত। এখন, লিটন যেমন সেট ছিলেন, যেভাবে খেলছিলেন তাতে আরো ২০-৩০ রান যদি আসত তাহলে ফলটা যে অন্যরকম হত না, তা কে বলতে পারে? যেহেতু, ক্রিকেট যদি-কিন্তুর ওপরে ভর করে চলে না; সুতরাং বাংলাদেশ হেরে গিয়েছে এটাই সত্য। এ ম্যাচটির সাথে সাথে আমি বরং গোটা এশিয়া কাপটা নিয়েই আলোচনা করতে চাই।
অর্জনের দিকগুলোর দিকে যদি লক্ষ্য করি, তাহলে প্রথমেই যেটি চোখে আসবে, সেটি হচ্ছে আমাদের খেলোয়াড়দের মানসিক নৈপুণ্য । প্রথম ম্যাচে তামিম, তারপর মুশফিক-সাকিব এবং সবশেষে মাশরাফি দেখা গিয়েছে আঘাত সয়ে খেলতে। তামিম-সাকিব পুরো টুর্নামেন্ট শেষ না করে দেশে ফিরলেও মুশফিক এবং মুশফিক লড়াই করেছেন শেষ পর্যন্ত।
কার কথা রেখে কার কথা বলব? প্রত্যেকেই যেন দলের জন্য দেশের জন্য নিজের ক্যারিয়ার জলাঞ্জলি দিয়ে হলেও অবদান রাখতে চেয়েছেন। আঙ্গুলে চোট নিয়ে আমিরাতে যাওয়া তামিম প্রথম ম্যাচেই কব্জি ভেঙ্গে মাঠের বাইরে চলে গেলেন। সে ভাঙ্গা কব্জি নিয়েও দলের স্বার্থে শেষের দিকে ব্যাটিং এ নেমে যে নজিরটি গড়েছেন তা ক্রিকেট ইতিহাসেই বিরল।
মুশফিক ভাঙ্গা পাজর নিয়ে খেললেন পুরো ম্যাচ। তার আগে নিয়েছেন অসংখ্য ব্যাথানাশক। সে ব্যাথানাশক যে ব্যাথাকে পুরো বিনাশ করতে পারেনি তা খুঁব সহজেই বোঝা যাচ্ছিল ব্যাটিং এর সময়। যখন বড় কোনো শট খেলার পরেই ব্যাথায় মুখটায় ফুঁটে উঠছিল অসহ্য যন্ত্রণার চিহ্ন।
বোর্ড সভাপতির অবিবেচকের মতন সিদ্ধান্তে আরেকটু হলে আঙ্গুলই খুঁইয়ে বসেছিলেন সাকিব আল হাসান। শেষ পর্যন্ত আর সহ্য করতে না পারায় দেশের পথ ধরেছেন বটে, তবে ক্ষতবিক্ষত আঙ্গুল নিয়েই বল হাতে দেখিয়েছেন ক্যারিশমা।
আর এদের অগ্রদূত নিঃসন্দেহে মাশরাফি বিন মুর্তজা। মাঝে মধ্যেই বিভ্রম জাগে যে তিনি আসলে মানুষ কি না। দু পায়ে সাতটি অস্ত্রপোচারের ইতিহাস তো সবাই জানে। পাকিস্তানের বিপক্ষে মালিকের অবিশ্বাস্য ক্যাচটি নিতে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ করেছেন নিজের আঙ্গুল। মিনিটখানের পর সে আঙ্গুলে টেপ বেঁধে শুধু মাঠেই নামলেন না, বোলিং করলেন, ফিল্ডিংয়ে নিলেন আরো একটি ক্যাচ।
দলের সিনিয়ররা যখন দেশের জন্য নিজের ক্যারিয়ারের ঝুঁকি নিয়ে হলেও দলের জন্য সবটুকু উজাড় করে দিতে সামান্য দ্বিধা করে না, তখন সেটি বাকিদের জন্য হয় দারুণ অনুপ্রেরণার। বাংলাদেশ দলের চার মূল স্তম্ভ আমিরাতের বৈরি আবহাওয়ার সাথে ময়দানি লড়াইয়ের পাশাপাশি শারীরিক যে যুদ্ধের যে নজিরটি দেখিয়েছে সেটি বহুকাল মনে থাকবে ক্রিকেট প্রেমীদের কাছে। (চলবে…)