মাস দেড়েক পরেই পর্দা উঠতে যাচ্ছে ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ খ্যাত বিশ্বকাপ ফুটবলের। একবিংশতম ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজনের গুরুদায়িত্ব পেয়েছে ভৌগলিকভাবে বিশ্ব মানচিত্রের সবচেয়ে বড় দেশ রাশিয়া। বিংশ শতাব্দীর সেরা গোলরক্ষক ‘স্পাইডার’ লেভ ইয়াসিনের বদৌলতে ফুটবলে রাশানদের আছে আলাদা নামডাক। এবার সেটা ছাপিয়ে যাবার চ্যালেঞ্জ পুতিনের দেশের। ইতিহাস সমৃদ্ধ ও প্রকৃতিদেবীর অপার সৌন্দর্য্যে ঘেরা এই স্বর্গ রাজ্যে বিশ্বকাপকে ঘিরে সবকিছুই করা হচ্ছে বেশ ঢালাওভাবে। বিশ্বকাপকে মাথায় রেখে রাশিয়ার ১১ টি শহরে প্রস্তুত করা হয়েছে ১২ টি স্টেডিয়াম, যার ছয়টিই তৈরি হয়েছে বিশ্বআসর উপলক্ষ্যে! বাকিগুলোতে চলেছে ক্রেন, করাতের শব্দ। বিশ্বকাপে স্টেডিয়াম নির্মাণ ও পুনঃসংস্কারে ব্যয় করা হয়েছে প্রায় ৫.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার!
বিশ্বকাপের স্টেডিয়াম নিয়ে দুই পর্বের ধারাবাহিকের শেষ দিনে আজ থাকছে বাকি ছয়টি স্টেডিয়ামের টুকিটাকি।
০৭. রোস্তভ অ্যারেনা, রোস্তভ
• স্থাপনকাল : ২০১৭ সাল
• ধারণক্ষমতা : ৪৫ হাজার (প্রায়)
২০১৮ বিশ্বকাপ আয়োজনের দায়িত্ব পাওয়ার পর ২০১২ সালের ডিসেম্বরে রাশিয়ার রোস্তভ অঞ্চলের ডন নদীর দক্ষিণ পাড় ঘেঁষে ‘রোস্তভ অ্যারেনা’ তৈরির সিদ্ধান্ত নেয় রাশিয়া সরকার। রোস্তভ অ্যারেনার ডিজাইন করা হয় রাশিয়ার উড়াল অঞ্চলে অবস্থিত ঐতিহাসিক ‘কু্র্গন’ এর ডিজাইন থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে। ২০১৩ সালে স্টেডিয়ামের কাজ শুরুর কথা থাকলেও মূল কাজ শুরু হয় ২০১৫ সালে। এর সিংহভাগ কাজ শেষ হলেও এখনো পুরোপুরি কাজ শেষ হয়নি। রোস্তভের নির্মাণ ব্যয়ের পরিমাণ ৩৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। রাশিয়া বিশ্বকাপের সুন্দরতম এই স্টেডিয়ামে আয়োজিত হবে ৫ টি ম্যাচ।
• রোস্তভ অ্যারেনায় অনুষ্ঠিতব্য ম্যাচসমূহ…
১৭ জুন ২০১৮ : ব্রাজিল বনাম সুইজারল্যান্ড
২০ জুন, উরুগুয়ে বনাম সৌদি আরব
২৩ জুন, কোরিয়া বনাম মেক্সিকো
২৬ জুন, আইসল্যান্ড বনাম ক্রোশিয়া
২ জুলাই, রাউন্ড অব সিক্সটিন
০৮. সামারা স্টেডিয়াম, সামারা
• স্থাপনকাল : ২০১৮ সাল
• ধারণক্ষমতা :৪৫ হাজার (প্রায়)
রাশিয়ার ষষ্ঠ বৃহতম শহর সামারা। আসন্ন বিশ্বকাপ মাথায় রেখে শহরের নামেই স্টেডিয়ামটি তৈরি করা হয়।রাশিয়ার পর্যটন এলাকা সামারার ভোলগা ও সামারা নদীর মিলন স্থলের পাশে তৈরি করা হয়েছে মনোমুগ্ধকর স্টেডিয়ামটি। স্টেডিয়ামের উপরের অংশ ৬৫ দশমিক ৫ মিটার কাঁচের তৈরি গম্বুজ দ্বারা আবৃত যা এর সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করেছে। গম্বুজটি ৩২টি প্যানেলের উপর স্থাপিত। সামার স্টেডিয়াম তৈরি করতে প্রায় ৩ বছর সময় লেগেছে। এবছর এপ্রিলের ২৪ তারিখ উদ্বোধন করা স্টেডিয়ামটির নির্মাণ ব্যয় ৩৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। স্থানীয় লোকজনের কাছে ‘কসমস অ্যারেনা’ নামে পরিচিত সামারার মাঠে গড়াবে বিশ্বকাপের ৬টি ম্যাচ।
• সামারা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিতব্য ম্যাচসমূহ…
১৭ জুন ২০১৮, কোস্টারিকা বনাম সার্বিয়া
২১ জুন, ডেনমার্ক বনাম অস্ট্রেলিয়া
২৫ জুন, উরুগুয়ে বনাম রাশিয়া
২৮জুন, সেনেগাল বনাম কলম্বিয়া
২ জুলাই, রাউন্ড অব সিক্সটিন
৭ জুলাই, কোয়াটার ফাইনাল
০৯. মোর্দোভিয়া অ্যারেনা, সারানস্ক
• স্থাপনকাল : ২০১৭ সাল
• ধারণ ক্ষমতা : ৪৫ হাজার (প্রায়)
রাশিয়ার ছোট শহর সারানস্কে বিশ্বকাপ সামনে রেখে তৈরি হয়েছে। ২০১১ সালে মোর্দোভিয়া অ্যারেনার নির্মাণ কাজ শুরু হলেও ২০১২ সালে অপর্যাপ্ত অর্থায়নের জন্য কাজ থেমে যায়। ২০১৪ সালে পুণরায় নির্মাণ কাজ শুরু হয়। মোদোর্ভিয়া প্রস্তুতে ব্যয় হয়েছে ৩৩৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। স্থানীয় মানুষ মোদোর্ভিয়া অ্যারেনাকে ভিন্ন ভিন্ন নামে চিনে। কারো কাছে এটি ‘সারানস্ক স্টেডিয়াম’, কেউ বা বলে ‘স্তাদিওন উবিলেননি’। এখানে একবিংশতম আসরের মাত্র একহালি ম্যাচ দেখা যাবে।
• মোর্দোভিয়া অ্যারেনায় অনুষ্ঠিতব্য ম্যাচসমূহ…
১৬ জুন ২০১৮, পেরু বনাম ডেনমার্ক
১৯ জুন, কলম্বিয়া বনাম জাপান
২৫ জুন, ইরান বনাম পর্তুগাল
২৮ জুন, পানামা বনাম তিউনিশিয়া
১০. ভোলগোগ্রাদ অ্যারেনা, নভোলগোগ্রাদ
• স্থাপনকাল : ২০১৭
• ধারণক্ষমতা: ৪৫ হাজার (প্রায়)
ভোলগোগ্রাদ শহরের ভোলগা নদীর উত্তর পাশের তীর ঘেঁষে বেড়ে উঠে ভোলগোগ্রাদ স্টেডিয়াম। আগে ওখানে ভোলগোগ্রাদ প্রিন্সিপাল স্টেডিয়াম ছিল। ওটা ভেঙ্গে ২০১৪ সালে ভোলগোগ্রাদ স্টেডিয়াম তৈরির কাজ শুরু হয়। এই স্টেডিয়ামের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হচ্ছে ঝুলন্ত গ্যালারি! ৪৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় হয়েছে স্টেডিয়াম নির্মাণে। ভোলগোগ্রাদে গ্রুপ পর্বের ৪ ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে।
• ভোলগোগ্রাদ অ্যারেনায় অনুষ্ঠিতব্য ম্যাচসমূহ…
১৮ জুন ২০১৮, তিউনিশিয়া বনাম ইংল্যান্ড
২২ জুন, নাইজেরিয়া বনাম আইসল্যান্ড
২৫ জুন, সৌদি আরব বনাম মিশর
২৮ জুন, জাপান বনাম পোল্যান্ড
১১. স্পার্তাক স্টেডিয়াম, মস্কো
• স্থাপনকাল : ২০১৪ সাল
• ধারণক্ষমতা : ৪২ হাজার (প্রায়)
স্পার্তাক মস্কো ১৯৯০ সালে শুরু থেকেই তাদের নিজস্ব স্টেডিয়াম তৈরির জন্য বহু চেষ্টার চালায়। ২০০৫ সালে তারা অনুমোদন পায়। ২০১০ এ শুরু হয় কাজ। বিশ্বকাপের আয়োজক হিসেবে রাশিয়া দায়িত্ব পাবার পর বিশ্বকাপের ভেন্যু হিসেবে নির্মাণ কাজে নতুন মাত্রা যোগ করা হয়। প্রথমে ৩৫ হাজার ধারণক্ষমতা সম্পূর্ণ স্টেডিয়াম তৈরির কথা থাকলেও বিশ্বকাপের জন্য স্পার্তাকের ধারণক্ষমতা বাড়িয়ে ৪২ হাজারে রূপান্তর করা হয়। ২০১৪ সালে ৪৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচে স্পার্তাক স্টেডিয়ামের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়। এই স্টেডিয়ামের আরেক নাম ‘আতক্রিতাই অ্যারেনা’। বিশ্ব মহারণে পাঁচটি ম্যাচ স্পার্তাক স্টেডিয়ামে বসে উপভোগ করতে পারবে দর্শকরা।
• স্পার্তাক স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিতব্য ম্যাচসমূহ…
১৬ জুন ২০১৮, আর্জেন্টিনা বনাম আইসল্যান্ড
১৯ জুন, পোল্যান্ড বনাম সেনেগাল
২৩ জুন, বেলজিয়াম বনাম তিউনিশিয়া
২৬ জুন, সার্বিয়া বনাম ব্রাজিল
৩ জুলাই, রাউন্ড অব সিক্সটিন
১২. কালিনীগ্রাদ স্টেডিয়াম, কালিনীগ্রাদ
• স্থাপনকাল : ২০১৮ সাল
• ধারনক্ষমতা : ৪৫ হাজার (প্রায়)
রাশিয়ার প্রেগোলায়া নদীর তীরে অক্টাব্রস্কিত অঞ্চলে তৈরিকৃত কালিনীগ্রাদ স্টেডিয়ামের গায়ে সাঁটানো এবারের আসরের সবচেয়ে ছোট স্টেডিয়ামের তকমা। মাঝে নির্মাণকাজ বাজেটের গড়মিলের কারণে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। যার ফলে ২০১৭ তে সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও বিলম্বিত হয়। রাশিয়া সরকার এতে স্টেডিয়াম ডিজাইনকারী প্রতিষ্ঠানকে দায়ী করে। প্রথমে ৩৫ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতা অনুযায়ী ডিজাইন করা হলেও পরে পরিবর্তন এনে তা ৪৫ হাজার করা হয়। ৩৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে নির্মিত কালিনীগ্রাদ স্টেডিয়ামের অন্য নাম ‘বাল্টিকা অ্যারেনা’। বিশ্বকাপের ৪ টি ম্যাচ এই স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে।
• কালিনীগ্রাদ স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিতব্য ম্যাচসমূহ…
১৬ জুন ২০১৮, ক্রোশিয়া বনাম নাইজেরিয়া,
২২ জুন, সার্বিয়া বনাম সুইজারল্যান্ড
২৫ জুন, স্পেন বনাম মরক্কো
২৮ জুন, ইংল্যান্ড বনাম বেলজিয়াম
১ thought on “রাশিয়া বিশ্বকাপের স্টেডিয়াম পরিচিতি (শেষ পর্ব)”
কমেন্ট বন্ধ।