রাশিয়া বিশ্বকাপের স্টেডিয়াম পরিচিতি (১ম পর্ব)

রাশিয়া বিশ্বকাপের স্টেডিয়াম পরিচিতি (১ম পর্ব)

মাস দেড়েক পরেই পর্দা উঠতে যাচ্ছে ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ খ্যাত বিশ্বকাপ ফুটবলের। একবিংশতম ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজনের গুরুদায়িত্ব পেয়েছে ভৌগলিকভাবে বিশ্ব মানচিত্রের সবচেয়ে বড় দেশ রাশিয়া। বিংশ শতাব্দীর সেরা গোলরক্ষক ‘স্পাইডার’ লেভ ইয়াসিনের বদৌলতে ফুটবলে রাশানদের আছে আলাদা নামডাক। এবার সেটা ছাপিয়ে যাবার চ্যালেঞ্জ পুতিনের দেশের। ইতিহাস সমৃদ্ধ ও প্রকৃতিদেবীর অপার সৌন্দর্য্যে ঘেরা এই স্বর্গরাজ্যে বিশ্বকাপকে ঘিরে সবকিছুই করা হচ্ছে বেশ ঢালাওভাবে। বিশ্বকাপকে মাথায় রেখে রাশিয়ার ১১টি শহরে প্রস্তুত করা হয়েছে ১২টি স্টেডিয়াম, যার ছয়টিই তৈরি হয়েছে বিশ্বআসর উপলক্ষ্যে! বাকিগুলোতে চলেছে ক্রেন, করাতের শব্দ। বিশ্বকাপে স্টেডিয়াম নির্মাণ ও পুনঃসংস্কারে ব্যয় করা হয়েছে প্রায় সাড়ে পাঁচ বিলিয়ন মার্কিন ডলার!

বিশ্বকাপের স্টেডিয়াম নিয়ে দুই পর্বের ধারাবাহিকের প্রথম দিনে আজ থাকছে ছয়টি স্টেডিয়ামের টুকিটাকি।

১. লুজনিকি স্টেডিয়াম, মস্কো

• স্থাপনকাল : ১৯৫৫-‘৫৬ সাল
• দর্শক ধারণ ক্ষমতা : ৮১ হাজার (প্রায়)

মস্কো সেন্ট্রালে মস্কো নদীর পাড় ঘেঁষে ১৯৫৫-৫৬ সালে ‘লেনিন সেন্ট্রাল স্টেডিয়াম’ নামে যাত্রা শুরু হয় এই স্টেডিয়ামের। মূলত তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের ক্রীড়া ক্ষেত্রে উন্নয়নের লক্ষ্যে নির্মিত হয় এটি। সোভিয়েত ইউনিয়ন বিভক্তের পর এর নাম পরিবর্তন করে ‘লুজনিকি স্টেডিয়াম’ রাখা হয় এবং বর্তমানে এটি রাশিয়ার জাতীয় স্টেডিয়াম। ১৯৮০ সালের অলিম্পিক গেমস আয়োজিত হয় এখানেই। রাশিয়া ২০১৮ সালে বিশ্বকাপ আয়োজনের দায়িত্ব পাওয়ার পর বিশ্বকাপের প্রস্তুতিস্বরূপ লুজনিকিকে ৩৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে সংস্কার করা হয়। এবারের আসরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও ফাইনাল ম্যাচ ছাড়াও বিশ্বকাপের আরো সাতটি ম্যাচ আয়োজনের ভার রাশিয়ার সর্ববৃহৎ এই স্টেডিয়ামের ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে।

• লুজনিকি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিতব্য ম্যাচসমূহ–

১৪ জুন ২০১৮, রাশিয়া বনাম সৌদি আরব
১৭ জুন, জার্মানি বনাম মেক্সিকো
২০ জুন, পর্তুগাল বনাম মরোক্কো
২৬ জুন, ডেনমার্ক বনাম ফ্রান্স
১ জুলাই, রাউন্ড অব সিক্সটিন
১১ জুলাই, সেমি ফাইনাল
১৫ জুলাই, ফাইনাল

 

২. সেন্ট পিটার্সবার্গ স্টেডিয়াম, সেন্ট পিটার্সবার্গ

• স্থাপনকাল : ২০১৭
• ধারণ ক্ষমতা : ৬৭ হাজার (প্রায়)

২০০৫ সালে রাশান ফুটবল ক্লাব জেনিত সেইন্ট পিটার্সবাগ তাদের নিজস্ব মাঠের জন্য সেন্ট পিটার্সবার্গে স্টেডিয়াম নির্মাণের অনুমতি পেলে পিটার্সবার্গের সমুদ্র তীরবর্তী ক্রেস্তভসস্কি এলাকায় স্টেডিয়ামটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। পূর্বে এখানে ‘কিরোভ স্টেডিয়াম’ ছিল। এটি ভেঙ্গেই নতুন করে পিটার্সবার্গ স্টেডিয়াম নির্মাণ করা হয়। পিটার্সবার্গ স্টেডিয়ামটি ২০০৯ সালের মধ্যে সম্পন্ন করার পরিকল্পনা থাকলেও নির্মাণাধীন ঠিকাদারের কাজের গাফিলতিতে তা হয়ে ওঠেনি। বিশ্বকাপ আয়োজনের দায়িত্ব পাওয়ার পর রাশিয়া সরকার বিশ্বকাপের ভেন্যু হিসেবে প্রস্তুত করার জন্য ‘সেন্ট পিটার্সবার্গ স্ট্রেট গভমেন্ট’ এর কাছে নির্মাণ কাজের দায়িত্ব হস্তান্তর করেন। স্টেডিয়ামটি নির্মাণ করতে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করে রাশিয়া সরকার। ২০১৭ সালে উদ্বোধন করে সে বছরের ফিফা কনফেডারেশন্স কাপের ভেন্যু হিসেবে পরীক্ষামূলক ব্যবহার করা হয় পিটার্সবার্গ স্টেডিয়ামকে। এই স্টেডিয়ামের রয়েছে নানান নামের পরিচিতি। পিটার অ্যারেনা, জেনিত অ্যারেনা, ক্রেস্তভসস্কি অ্যারেনাসহ বিভিন্ন নামে পরিচিত এই মাঠে অনুষ্ঠিত হবে ২০১৮ বিশ্বকাপের সাতটি ম্যাচ।

• সেন্ট পিটার্সবার্গ স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিতব্য ম্যাচসমূহ–

১৫ জুন ১৮, মরক্কো বনাম ইরান
১৮জুন, রাশিয়া বনাম মিশর
২২ জুন, ব্রাজিল বনাম কোস্টারিকা
২৬ জুন, নাইজেরিয়া বনাম আর্জেন্টিনা
০৩ জুলাই, রাউন্ড অব সিক্সটিন
১০ জুলাই, সেমি ফাইনাল
১৩ জুলাই, তৃতীয় স্থান নির্ধারণী

 

৩. ফিস্ট স্টেডিয়াম, সচি

• স্থাপনকাল : ২০১৩ সালে
• ধারণ ক্ষমতা : ৪৭৬৫৯

ক্রাসনোভারিস্কিক্রাই এলাকায় ২০১৪ সালের শীতকালীন অলিম্পিক আয়োজনের লক্ষ্যে ফিস্ট অলিম্পিক স্টেডিয়ামকে তৈরি করা হয়। পরবর্তীতে সংস্কার করে ২০১৮ বিশ্বকাপের ভেন্যু হিসেবে প্রস্তুত করতে ব্যয় হয় ৭৭৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১৪ শীতকালীন অলিম্পিক, ২০১৭ কনফেডারেশন কাপের ম্যাচ সফলভাবে সম্পন্ন করা রাশিয়া বিশ্বকাপের অন্যতম সুন্দর এই স্টেডিয়ামে আয়োজিত হবে একবিংশতম আসরের ৬টি ম্যাচ।

• ফিস্ট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিতব্য ম্যাচ সমূহ–

১৫ জুন ১৮, পর্তুগাল বনাম স্পেন
১৮ জুন, বেলজিয়াম বনাম পানামা
২৩ জুন, জার্মানি বনাম সুইডেন
২৬ জুন, অস্ট্রেলিয়া বনাম পেরু
৩০ জুন, রাউন্ড অব সিক্সটিন
০৭ জুলাই, কোয়াটার ফাইনাল

 

৪. ইয়াকতেরিনবার্গ অ্যারেনা, ইয়াকতেরিনবার্গ

• স্থাপনকাল : ১৯৫৭ সাল
• ধারণ ক্ষমতা: ৪৫ হাজার

রাশিয়ার শীতলতম অঞ্চল ইয়াকতেরিনবার্গে মাল্টি স্পোর্টস স্টেডিয়াম হিসেবে পরিচিত এই কমপ্লেক্স মূলত শীতকালীন খেলাধুলার জন্য ব্যবহৃত হত। এর পূর্ব নাম ছিল সেন্ট্রাল স্টেডিয়াম। রাশিয়া বিশ্বকাপে ইয়াকতেরিনবার্গ হোস্ট সিটি হিসেবে বিবেচিত হলেও আসন বিন্যাস কম থাকায় ইয়াকতেরিয়ানবার্গ স্টেডিয়ামকে ‘ফিফা স্টান্ডার্ড নয়’ বলে ভেন্যু হিসেবে প্রত্যাখান করে ফিফা। তখন সেখানে মাত্র ২৭ হাজার দর্শক খেলা দেখতে পারত। ২১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করে আসন সংখ্যা ২৭ হাজার থেকে ৪৫ হাজারে উন্নীত করার পর তবেই ফিফার স্বীকৃতি মেলে। ইয়াকতেরিনবার্গের মানুষজন বিশ্বকাপের মাত্র ৪টি ম্যাচ তাদের ঘরের মাঠে বসে দেখতে পারবে।

• ইয়াকতেরিনবার্গ অ্যারেনায় অনুষ্ঠিতব্য ম্যাচ সমূহ–

১৫ জুন,  মিশর বনাম উরুগুয়ে
২১ জুন, ফ্রান্স বনাম পেরু
২৪ জুন, জাপান বনাম সেনেগাল
২৭ জুন, মেক্সিকো বনাম সুইডেন

 

৫. কাজান অ্যারেনা, কাজান

• স্থাপিত : ২০১৩ সাল
• ধারণ ক্ষমতা : ৪৫ হাজার

২০১০ সালে ফুটবল ক্লাব রুবিন কাজান নিজেদের জন্য স্টেডিয়াম তৈরি করতে সরকারকে প্রস্তাব দেয়। রাশিয়া সরকার ২০১৮ বিশ্বকাপ ও রুবিন কাজানের চাওয়া মাথায় রেখে রাশিয়ার তাতারস্থান এলাকায় একটি মাঠ নির্মাণে অনুদান দেয়। ৪৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে ২০১৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে নির্মিত হয় কাজান অ্যারেনা। দৃষ্টিনন্দন এই স্টেডিয়ামে ২০১৭ কনফেডারেশন কাপের কয়েকটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। আসন্ন বিশ্বকাপে কাজান অ্যারেনায় রেফারিরা কিক অফের বাঁশি বাজাবেন মোট ৬ ম্যাচে।

• কাজান অ্যারেনায় অনুষ্ঠিতব্য ম্যাচ সমূহ–

১৬ জুন, ফ্রান্স বনাম অস্ট্রেলিয়া
২০ জুন, ইরান বনাম স্পেন
২৪ জুন, পোল্যান্ড বনাম কলম্বিয়া
২৭ জুন, কোরিয়া বনাম জার্মানি
৩০ জুন, রাউন্ড অব সিক্সটিন
০৬ জুলাই, কোয়াটার ফাইনাল

 

৬. নিঝনি নভোগোরাদ স্টেডিয়াম, নিঝনি নভোগোরাদ

• স্থাপনকাল : ২০১৭ সাল
• ধারণ ক্ষমতা: ৪৫ হাজার

বিশ্বকাপের জন্য নতুন করে তৈরি করা স্টেডিয়ামগুলোর মধ্যে নিঝনি নভোগোরাদ অন্যতম। এটি মস্কো ও নিঝনি নভোগোরাদ শহর দুটির মাঝামাঝি জায়গা ‘ডলসহাস্কায়া উলিৎসা’র ভলগা এবং ওকা নদীর তীরবর্তী এলাকায় ২৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়। ২০১৭ সালের মাঝামাঝি এর নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কিছু কাজ বাকি রয়েছে। এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে ফিফার পরিদর্শক দল। যার ফলে নির্মাণের দ্বায়িত্বরত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ আদায়ের জন্য মামলা করেছে রাশিয়া সরকার। অত্যাধুনিকভাবে তৈরিকৃত স্টেডিয়ামের বাইরে লাগানো হয়েছে বৃহৎ আকৃতির ডিজিটাল পর্দা। এখানে অনুষ্ঠিত হবে মেগা আসরের হাফডজন ম্যাচ।

• নিঝনি নভোগোরাদে অনুষ্ঠিতব্য ম্যাচ সমূহ–

১৮ জুন ১৮, সুইডেন বনাম কোরিয়া
২১ জুন, আর্জেন্টিনা বনাম ক্রোয়েশিয়া
২৪ জুন, ইংল্যান্ড বনাম পানামা
২৭ জুন, সুইজারল্যান্ড বনাম কোস্টারিকা
০১ জুলাই, রাউন্ড সিক্সটিন
০৭ জুলাই, কোয়াটার ফাইনাল

 

রাশিয়া বিশ্বকাপের স্টেডিয়াম পরিচিতি (শেষ পর্ব)