‘চৌকিদার হি চোর হ্যায়’— উক্তিটি এখন ভারতেব্যাপী প্রচলিত। চৌকিদারই যখন চোর তখন গেরস্থের অবস্থা কি, ভাবা যায়? তবে এই উক্তিটি খুব আলোচিত আসন্ন লোকসভা নির্বাচন ২০১৯’কে কেন্দ্র করে। এখানে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেই ‘চৌকিদার’ হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে। গতবার ক্ষমতায় আসার জন্য মোদি যা কিছু আশ্বাস দিয়েছিলেন তার প্রায় সিংহভাগই এখনো অধরা। এই নিয়ে ক্ষোভ আছে জনমনে। তার উপর রাফাল চুক্তি নিয়ে দুর্নীতি ও এর নথি হারিয়ে যাওয়া যেন আগুনে ঘি ঢেলেছে মাত্র।
গত বছর পর্যন্ত ভারতে বিজেপি’র অনেকটা একচেটিয়া লাঠিয়াল রাজনীতির ফলে দলের প্রধান হর্তা-কর্তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ফিরছিল যে মোদিই হতে চলেছে প্রধানমন্ত্রী। তবে কংগ্রেস এবং অন্যান্য দলগুলোর জোট ‘ইউনাইটেড প্রোগ্রেসিভ অ্যালায়েন্স’ গঠিত হওয়ার পর বিজেপি শিবির একটুও হলেও কেঁপে ওঠে। এর পরেই এ বছর কাশ্মিরের বালাকোটে ভারতীয় সেনাদের উপর জঙ্গি হামলা হয়। নিহত হয় ৪৪ জন জওয়ান। এর পরেই ভারত তাদের হিংস্র জাতীয়তাবাদী রূপ দেখায় গোটা বিশ্বকে। হামলা করা হয় পাকিস্তানে। যদিও হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় ভারত নিজেই। তাদের একজন বিমান বাহিনীর কর্মকর্তাকে আটক করে পাকিস্তান। পরবর্তীতে পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের নির্দেশে তাকে ভারতের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপরেই ভারতের নানা বিশ্লেষকদের মতামত আসতে থাকে। ভারতের অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকের ধারণা যুদ্ধের যে আমেজ মোদি তৈরি করেছিল তা শুধুই নির্বাচন থেকে সবার দৃষ্টি সরিয়ে নিতে। তাদের ধারণায় ছিল, যুদ্ধ যুদ্ধ রব এনে ভারতীয়দের মাঝে একটি হিংস্র জাতীয়তাবাদের পুনঃজন্ম দেওয়া এবং তার সাথে মোদির নিজের জনপ্রিয়তা বাড়িয়ে নেওয়া। মোদি যেভাবে অর্থনীতির উন্নয়নের আশ্বাস দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন তা ধরে রাখতে না পারার কারনেই মোদি যুদ্ধের চাল চেলেছিলেন। এক্ষেত্রে কাশ্মিরে জৈশ-ই-মুহাম্মেদের হামলা মোদির জন্য ছিল জ্যাকপটসরূপ। রাজনৈতিক বিশ্লেষক তানভীর আলম দ্যা নিউ ইয়োর্কার’র কলামিস্ট এলিজা গ্রিসওল্ড’র কাছে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন “যেহেতু এই গতিহীন অর্থনীতিতে তার কোন সাফল্য নেই, সে চাইবে জাতীয়তাবাদী প্লাটফর্ম ব্যবহার করতে।” উগ্র হিন্দুত্ববাদ, অসফল অর্থনীতি ও লাগামহীন দুর্নীতির জেরে নরেন্দ্র মোদির জনসমর্থন যে তলানিতে এখন তা বলাই বাহুল্য।
অন্যদিকে কংগ্রেস ও অন্যান্য দলগুলোর জোটের মাধ্যমেও যে কী রকম কি হতে যাচ্ছে তাও বলা কঠিন। উত্তরপ্রদেশ ও দিল্লিই তার প্রমাণ। গতবার উত্তরপ্রদেশের মোট ৮০টি লোকসভার আসনের মধ্যে কংগ্রেস প্রার্থী দিয়েছিল মোট ৬৭টিতে যার মধ্যে মাত্র ২টি আসনে জয় পেয়েছিল তারা। এবার যদিও কংগ্রেস সেখানে ৮০ জনই প্রার্থী দিতে চায় আর এ নিয়েই সেখানে ছোট দলগুলোর সাথে চলছে টানাপড়েন। অন্যদিকে দিল্লিতে আম আদমি পার্টির থেকেও জনসমর্থনে পিছিয়ে রয়েছে কংগ্রেস। সেখানেও চলছে টানা পড়েন। পশ্চিম বঙ্গ, বিহার, তামিলনাড়ু, অন্ধ্র-প্রদেশ, পাঞ্জাব সবখানেই স্থানীয় দলগুলোর প্রভাবকে কাজে লাগিয়েই আসতে হবে কংগ্রেসকে। তবে বিজেপির অতি আত্মবিশ্বাসী রাজনীতি যা মোটামুটি গত বছর পর্যন্ত নিশ্চিত ছিল যে ‘মোদিই হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী’ এমন অবস্থা যে সেখানে আর বিদ্যমান নেই তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
তবে উগ্র-হিন্দুত্ববাদের হাত থেকে বাঁচতে লড়াই করতে হবে সে দেশের জনগণকেই না হলে ভারতকে পিছিয়ে যেতে হবে শত বছর। অন্যদিকে কংগ্রেসকেও এগিয়ে আসতে হবে জনগণের স্বার্থরক্ষার ইশতেহার নিয়ে।