ভারতীয় মিডিয়ার মিথ্যাচার ও মোদির সিনেমাটিক আচরণ

ভারতীয় মিডিয়ার মিথ্যাচার ও মোদির সিনেমাটিক আচরণ

নির্বাচনকে সামনে রেখে নরেন্দ্র মোদির আগবাড়িয়ে বিমান হামলার সাথে সাথে দলীয় মিডিয়া এবং ভারতীয় ও ভারতবান্ধব মিডিয়ার মিথ্যাচার শুরু হয়েছে।জনগণকে ফেলে দেয়া হচ্ছে চরম ধোঁয়াশার মধ্যে।

সবচেয়ে হতাশাজনক আচরণ করছেন ভারতের তথাকথিত বড় বড় তরকারা। এমন অন্যায় বিমান হামলাকে সমর্থন করেছেন শচীন ও শেবাগের মতো খ্যাতিমান ক্রিকেটারও! এবং এই হামলার খবর প্রচার নিয়ে চলছে প্রপাগান্ডার মহোৎসব। এই হামলার পর পরই পাকিস্তান বিমান বাহিনী পাল্টা প্রতিরোধ শুরু করলে ভারতীয় বাহিনী দ্রুত সটকে পড়ে। এই হামলায় তেমন কোন ক্ষয়ক্ষতি না হলেও ভারতীয় মিডিয়াতে প্রচার করা হয়েছে ৩০০ লোক নিহত হয়েছে। ভারতীয় মিডিয়ায় যাদের ‘জঙ্গি’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু মূলত ওই হামলায় বেসামরিক কিছু লোক আহত হয়েছে। অন্যদিকে ভারতীয় মিডিয়ায় বিমান ভূপাতিত হওয়ায় খবরও মেলেনি।

নির্বাচনকে সামনে রেখে মিথ্যা খবর রটিয়ে ভারতীয় উগ্রজাতীয়তাবাদী আবেগে হাওয়া দেওয়ার জন্যই এমন আচরণ করছে বিজেপি এবং বর্তমান প্রশাসন।সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্নজন লিখছেন, মোদি মূলত এই আক্রমণ নিয়ে ঢালাও মিথ্যাচার করছেন। কেউ কেউ এই আচরণকে বলিউড সিনেমার প্রভাব হিসেবে দেখছেন। বলিউডি সিনেমায় সব সময় ভারতীয় সেনাদের বীর হিসেবে এবং পাকিস্তানকে পরাজিত হিসেবে দেখানোর যে উগ্র জাতীয়তাবাদী উপস্থাপন দেখা যায় বাস্তবেও মোদি তাই-ই করছেন। কিন্তু বাস্তব সিনেমার মতো না!

বিমান হামলার প্রত্যুত্তরে পাকিস্তান ভারী মর্টার হামলা চালিয়েছে সীমান্তবর্তী তিনটি এলাকা দিয়ে। এতে ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ভিডিওতে দেখা গেছে ভারতীয় জনগণ প্রাণভয়ে দৌড়ে নিরাপদ স্থানের দিকে ছুটছেন। এর পরে সর্বশেষ পাকিস্তান ২টি ভারতীয় বিমান ভূপাতিত করেছে যার ভিডিও বিশ্ব মিডিয়াতে প্রচারিত হচ্ছে। ভিডিওতে সয়লাব হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া।কিন্তু ভারতের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে এটা ভূপাতিত হয়েছে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে। কিন্তু এই মিথ্যাচার দিয়ে পার পাওয়ার সুযোগটা হাত ছাড়া হয়ে গেছে যখন ভারতীয় ২ জন পাইলটকে আটক করে পাকিস্তানের সেনা হেফাজতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেই আটক বিমান সেনার ভিডিও প্রচারিত হচ্ছে। ফলে পাল্টা জবাবে, এখনকার হিসেবে পাকিস্তান যে বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে তা বলাই বাহুল্য।

আর ঠিক এই অবস্থাকে কাজে লাগিয়ে আলোচনার প্রস্তাব দিলেন পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। এখন দেখা যাক ভারত এই ডাকে সাড়া দেয় কি না? ভারতের সামনে এখন সংকট হল এই বন্দিকে ছাড়িয়ে নিতে হলে আলোচনায় বসতে হবে। আর যদি এই বিমান সেনার প্রাণের তোয়াক্কা না করে পাল্টা আক্রমণের দিকে যায় তখন যুদ্ধ পুরোদমে শুরু হবে তাতে কোন সন্দেহ নাই। অন্যদিকে কাশ্মির সংকটকে সমাধানের কোন উদ্যোগ না নিয়ে বরং এই সীমান্তে পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধ শুরু করার পরিণতি ভারতের জন্য শোচনীয় হবে তাতে কোন সন্দেহ নাই।

এই জন্যই এখনও পর্যন্ত সংঘাতের যে চিত্র দেখা যাচ্ছে তাতে ভারত বিমান হামলার দিকে বেশি আগ্রহী হলেও পাকিস্তান ভূমিযুদ্ধে বেশি আগ্রহী। আর এটাই কৌশলগতভাবে পাকিস্তানের এগিয়ে থাকার কারণ। ভূমিযুদ্ধে স্থানীয় জনগণের সমর্থন পাবে পাকিস্তান। অন্যদিকে পাকসেনারা অনেকদিন থেকেই যুদ্ধাবস্থার মধ্যে থাকার ফলে ভূমি যুদ্ধে তাদের দক্ষতাও সুবিদিত।

তবে পাক-ভারত যুদ্ধ শুধু দক্ষিণ এশিয়া না গোটা দুনিয়াকেই তাঁতিয়ে তুলবে। চীন-রাশিয়া-পাক ব্লক এবং এর সাথে থাকবে তুরস্ক-ইরানসহ আরও কিছু মুসলিম দেশ। অন্যদিকে আমেরিকা-ভারত ব্লক। এমন সমীকরণে যুদ্ধের দিকে এগিয়ে গেলে গোটা দুনিয়া ক্ষতিগ্রস্থ হবে। কাজেই উভয় দেশের বিবেকবান চিন্তক ও বিশ্লেষকরা দ্রুত এই যুদ্ধাবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে আলোচনার মাধ্যমে পরিস্থিতির শান্তিপূর্ণ সমাধানের কথা বলছেন।

অন্যদিকে মোদির সিনেমাটিক আচরণ ও মিডিয়া ব্যবহার করে মিথ্যচার করে জনগণকে বোকা বানানোর ঘৃণ্য এ রাজনীতি বন্ধ না করলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে ভারতের সাধারণ জনগণ। যুদ্ধ কোন মুভির শুটিং নয় এটা ভারতকে বুঝতে হবে। তিলকে তাল বানিয়ে প্রচার করে উগ্র জাতীয়তাবাদী জোশ তৈরি করে ক্ষমতায় আসার জন্যই এই কৌশল যে মোদি গ্রহণ করেছে, তা সবার কাছেই এখন পরিস্কার। কিন্তু সাধারণ জনগণ ও  সেনাদের জীবন নিয়ে এমন পরিকল্পিত খেলায় মোদি কেন মেতেছেন তা নিয়ে বিবেকেবান ভারতীয় নাগরিকরা বিষ্ময় প্রকাশ করছেন। এখনই সময় সারা দুনিয়ার যুদ্ধবিরোধী কন্ঠগুলোর জেগে ওঠার। না হলে এই পরমাণু অস্ত্রধারী দেশ দু‘টির মধ্যে এমন প্রতিযোগিতা দুনিয়াকে করুণ পরিণতির দিকে নিয়ে যাবে।