আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে উপমহাদেশ। পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে শুরু হয়েছে যুদ্ধ পরিস্থিতি। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি কাশ্মিরে জঙ্গি হামলায় নিহত হয় ভারতের ৪৪ জন জওয়ান। তখন থেকেই উত্তপ্ত আগ্নেয়গিরির রূপ ধারণ করেছে দুই দেশের সীমান্ত থেকে মন্ত্রীদের দপ্তর। ভারতীয় বাহিনীর উপর ঐ হামলার দায় স্বীকার করে কাশ্মিরি সশস্ত্র সংগঠন জৈশ-ই-মুহাম্মেদ। এটি পাকিস্তানি একটি সংগঠন হলেও খোদ সেদেশেই সংগঠনটি সম্পুর্ণভাবে নিষিদ্ধ। এরপর থেকেই অনেকটা দৃঢ়ভাবেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে ভারত। এই রেষারেষির জের ধরেই মঙ্গলবার ভোরে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে বিমান হামলা চালায় ভারত। এতে প্রমাণিত ভাবেই ১ জন আহত হলেও ভারত সরকার ও মিডিয়া বিবৃতি ও খবরে প্রকাশ করে মোট ৩০০ জন নিহত হয়েছে। ওই হামলার পালটা জবাবে আজ ভারতীয় ভূখণ্ডে হামলা চালায় পাকিস্তান। এদিকে ভারতীয় বিমান বাহিনীর দু’জন পাইলট আটক হয় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে।
তাছাড়াও ভারতীয় বিমান বাহিনীর দুটি বিমানও ভূপাতিত হয়। ভারত-পাকিস্তানের বর্তমান অবস্থান নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দুই দেশকেই ঠাণ্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নেওয়ার অনুরোধ জানায় তারা। তাছাড়া ভারত হামলার হুমকি দেওয়ার পরপরই চীন-ভারত সীমান্তে ক্ষেপণাস্ত্র তাঁক করে মহড়া দেয় চীন। এতে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে মারাত্মক পরিবর্তনের আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
বুধবার বাংলাদেশ সময় বিকাল ৪টার দিকে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তিনি খুব ঠাণ্ডা মাথায় পুরো পরিস্থিতির বর্নণা করেন। তিনি এখন পর্যন্ত ভারতকে আলোচনার সুযোগ দিতে চান। তিনি চান সৌহার্দ্য পূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে একটি সমাধানে যেতে। এদিকে ভারতের পরররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ জানিয়েছেন তারাও যুদ্ধ এগিয়ে নিতে আগ্রহী নয়। এদিকে পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান স্পষ্টভাবেই বলেছেন নরেন্দ্র মোদি এই যুদ্ধটা করতে চাচ্ছেন শুধুই তার নিজের নির্বাচনী ফায়দা হাসিলের জন্যে। এই বিষয়টি নিয়ে স্বয়ং ভারতেই তর্ক বিতর্ক দু’টোই রয়েছে। ভারতের অনেক সাধারণ জনগণও যুদ্ধের পক্ষে কথা বলছেন না।
তবে ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধ যদি হয় তবে কোন দিকে যাবে বাংলাদেশ? এমন প্রশ্ন আসতেই পারে। আমরা খুব সাধারণতই বাংলাদেশের বর্তমান সরকারি দলকে ভারতের একটি বন্ধু প্রতিম রাজনৈতিক দল হিসেবেই জানি। এমনকি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নরেন্দ্র মোদির এদেশ সফরের পর বলেছিলেন “ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক সর্বকালের সেরা একটি সময় পার করছে”। তাছাড়া ঐতিহাসিকভাবেই আওয়ামী লীগ ও ভারতের বন্ধুত্ব প্রমাণিত। তাছাড়া ৭১এর মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সাহায্যের কথা সর্বদা মনে রেখে কৃতজ্ঞতা বোধে ভারতের কাছে নিজের দেশকেই ছোট করে যারা সেসব চেতনাবাজরাও এক্ষেত্রে চোখ বন্ধ করেই ভারতের গুণ গাইবে। তবে এখন বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মেরুকরণ সম্পূর্ণভাবেই ভিন্ন। ৩০ শে ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর থেকে বাংলাদেশ যে সম্পূর্ণভাবেই চীনের বলয়ে ঢুকে পরেছে তা অনস্বীকার্য। তাছাড়া বাংলাদেশে চীন যে ২৪ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তা কখনোই বাংলাদেশ ভারতের পক্ষে গিয়ে হাসিল করতে পারবে না। আর চীন অন্ধভাবেই এ যুদ্ধে পাকিস্তানকে সরাসরি সহায়তা করবে। সেক্ষেত্রে ভারতের প্রতিপক্ষের তালিকায় রয়েছে স্বয়ং চীন। এখন রাজনৈতিক সমীকরণ তাইই বলছে, যদি যুদ্ধ হয় বাংলাদেশ ঘুরিয়ে-পেঁচিয়েই হোক আর সামনা সামনিই হোক চীনের মাধ্যমে পাকিস্তানের পক্ষ নিতে বাধ্য। তখন দেখার বিষয় হবে বাংলাদেশের ঐরকম অবস্থানে ভারত বাংলাদেশের সাথে পরবর্তীতে কোন ধরনের সম্পর্কে জড়ায়। ভারতই বা বাংলদেশের সাথে সম্পর্ক কোন দিকে নেয়। এছাড়াও বাংলাদেশ তখন চাপে পড়েই মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি পাকিস্তানের পক্ষ নেবে। নিতে বাধ্য!
এখন দেখার বিষয়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অতি উজ্জীবিত যে প্রজন্ম এই সরকার তৈরি করেছে, বাংলাদেশের পাকিস্তানের পক্ষে যাওয়াটাকে তারা কীভাবে গ্রহণ করবে। বাংলাদেশের তথাকথিত পাকিস্তানকে ঘৃণা করা গণমাধ্যমই বা এই ইস্যুটিকে কিভাবে নেবে। তারা কি ধামাচাপা দিতে পারবে, নাকি বাংলাদেশের নব্য চাইনিজ-পাকপ্রীতিকে জায়েজ করার চেষ্টা করবে? তবে যাই হবে সেটা যে বর্তমান সরকারের জন্য খুব একটা সুখকর বিষয় হবে না, তা চোখ বন্ধ করেই বলে দেওয়া যায়।