ছাত্রদলের প্যানেল ঘোষণা, ডাকসুতে তাদের ভবিষ্যত কী?

ছাত্রদলের প্যানেল ঘোষণা, ডাকসুতে তাদের ভবিষ্যত কী?

সর্বশেষ ডাকসু নির্বাচন হয়েছিল ১৯৯০-৯১ সালে। সে নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের দেয়া আমান-খোকন প্যানেল জয়লাভ করে। ভিপি নির্বাচিত হন আমান উল্লাহ আমান ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন খায়রুল কবির খোকন। সেবারই প্রথম বিএনপি সমর্থিত বা ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল ডাকসুর প্রতিনিধিত্ব করে। এরপর থেকে আর কোন ডাকসু নির্বাচন হয়নি। গণতান্ত্রিক সরকারেরা তাদের সমর্থিত প্রার্থী নাও জয়ী হতে পারে সে শঙ্কায় ডাকসু নির্বাচন দিতে গড়িমসি করেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩তম উপাচার্য একে আজাদ চৌধুরী ডাকসু নির্বাচনের উদ্যোগ নিলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। ২০১২ সালে উচ্চ আদালতের রিট এবং ২০১৮ সালে উকিল নোটিশের সূত্রধরে ছাত্র সংগঠনগুলোর আন্দোলনের মুখে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ডাকসু নির্বাচন। এই নির্বাচন না হওয়ার ফলে শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই অরাজক পরিস্থিতি তৈরি হয়নি বরং ভেঙে পড়েছে ছাত্র রাজনীতির ভিত। বিশ্ববিদ্যালয়ে কায়েম করা হয়েছে ক্ষমতাসীনদের দৌরাত্ম।

ইতিমধ্যে বর্তমান ডাকসু নির্বাচন তফসিল ঘোষণা করা হয় ২৩ জানুয়ারি। ভোটগ্রহণ ১১ই মার্চ। ইতিমধ্যে প্যানেল ঘোষণা করেছে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের অঙ্গ সংগঠন ছাত্রলীগ, ছাত্রলীগের সাবেক নেতাকর্মীরাও একটি পৃথক প্যানেল দিয়েছে, প্যানেল দিয়েছে বাম রাজনৈতিক সংগঠন ও কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয় ‘সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। এসবের সাথে প্যানেল দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্ষমতাসীনদের আধিপত্যে কোণঠাসা হয়ে পড়া ছাত্রদল। ছাত্রদলের সমর্থন নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে মোস্তাফিজ-অনিক প্যানেল। মোস্তাফিজুর রহমান সলিমুল্লাহ মুসলিম হল শাখা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক এবং আনিসুর রহমান খন্দকার অনিক শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক। এই প্যানেলে এজিএস হিসেবে লড়াই করবেন খোরশেদ আলম সোহেল।

ডাকসু নির্বাচনকে উপলক্ষ্য করে দীর্ঘ নয় বছর পর ক্যাম্পাসে মিছিল করেছে ছাত্রদল। কোন ধরণের সহিংসতা ছাড়াই অবস্থান করেছে মধুর ক্যান্টিনে। এমনকি ছাত্রলীগের সাথে আলিঙ্গনের ঘটনাও ঘটেছে। কিন্তু আদৌ কি এই ঘটনাগুলো ‘সহাবস্থান’র। অনেকে সেটা মনে করলেও এর পিছনে রয়েছে দূরভিসন্ধি। কেননা, নির্বাচন নিয়ে করা ছাত্রদলের কোন দাবিই প্রশাসন রাখেনি। যে সাতদফা তারা দাবি করেছে তাতে করেনি কোন কর্ণপাত। ২৯ জানুয়ারি ছাত্রদলসহ অন্যান্য সংগঠনগুলোর দাবি উপেক্ষা করেই হলে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এতে সবাই অসন্তোষ হলেও সন্তুষ্ট ছিল ‘ছাত্রলীগ’। আমাদের সবারই জানা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো ছাত্রলীগের দখলে। ইতিপূর্বে শিক্ষার্থীর পা কাটা, ক্যালকুলেটর চাওয়ার মারধর করাসহ হলগুলো থেকে ছাত্রলীগের আধিপত্যের বহু নিদর্শন প্রকাশ্যে এসেছে। এই অবস্থায় হলে ভোট কেন্দ্র হওয়ার তার দখল রাখা ছাত্রলীগের পক্ষে কোন অর্থেই অসম্ভব নয়।

ডাকসু নির্বাচনের বন্ধ্যা অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য ছাত্রদল প্রার্থী দিয়েছে। কিন্তু আদৌ তাদের মধ্যে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার নিশ্চয়তা নেই। সে কথা প্যানেল ঘোষণার সময়ও বলেছেন তারা। তার জানিয়েছেন, প্যানেল ঘোষণা করলেও সাত দফা দাবিতে এখনো তারা অনড় রয়েছেন।

ডাকসু নির্বাচন নিয়ে আশাবাদী নন কেউই। এক সময়ের ডাকসু’র ভাইস প্রেসিডেন্ট সিপিবি’র সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম বলেছেন, ডাকসু নির্বাচনেও ভোটাররা প্রতারিত হবেন। তিনি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে একথা বলেন।

মূলত বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে যেখানে রাতের বেলাই ভরে যায় ব্যালট বাক্স এবং ভোট পড়ে ভোটারের চেয়ে বেশি, সেখানে ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদলের প্রার্থী দেয়া না দেয়া সমান ব্যাপারর। তবু দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্বাবিদ্যালয়ের রাজনৈতিক পরিস্থিতিটিও জনগণের সামনে অন্তত সাধারণ শিক্ষার্থীদের সামনে আনা জরুরি। নির্বাচনের আর বাকি দুই সপ্তাহ। দেখা যাক কি ঘটে?