এই মুহূর্তে সিরিয়ার মানবিজের নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে আছে আমেরিকা- কুর্দি এসডিএফ বাহিনী। কিছুদিন আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সিরিয়ায় আইসিসের পরাজয় ঘোষণা করে আমেরিকান সেনাদের সরিয়ে নেয়ার কথা জানিয়েছেন। আর আমেরিকান সেনারা সরে আসার পর শহরের কন্ট্রোল নেয়ার কথা আছে তুর্কি বাহিনির। সব কিছুই প্ল্যান মত এগোচ্ছিল, কিন্তু শেষ মুহূর্তে তুর্কি অ্যাডমিনিস্ট্রেশানের সাথে আমেরিকান অ্যাডমিনিস্ট্রাশেনারের মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে। আর গত পরশু ট্রাম্প তুরস্ককে হুশিয়ারি দিয়েছে যে তুর্কিরা যদি এসডিএফ (কুর্দি কোয়ালিশান বাহিনী) কে আক্রমন করে তাহলে আমেরিকা তুরস্কের অর্থনীতির বারোটা বাজিয়ে দিবে।
সিরিয়া তথা মানবিজে আমেরিকানদের মুল ল্যান্ড ফোর্স হচ্ছে কুর্দিদের ওয়াইপিজি, তুর্কিদের মতে ওয়াইপিজি হচ্ছে তুরস্কের পিকেকের সিরিয়ান ব্রাঞ্চ, অতএব জঙ্গি বাহিনী। স্বভাবতই কুর্দিরা আমেরিকানদের মাঠ থেকে এভাবে উঠে যাওয়ার পর তুর্কি বাহিনির প্রবেশ নিয়ে খুব চিন্তায় আছে। তাই এই তিন পক্ষের মধ্যে এখন চলছে অনেক দেন দরবার।
গত বুধবার মানবিজে এক রেস্তোরাঁতে চলছিল আমেরিকান-ফ্রেঞ্চ-কুর্দি বাহিনির এক মিটিং আর সেখানে আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিহত হয়েছে ২ জন আমেরিকান সেনা সহ মোট ৮ জন, আর আহত হয়েছে ১৯ জন । আইসিস ক্লেইম করেছে তারা এই হামলা চালিয়েছে। অথবা আইসিসের নামে হামলা চালিয়েছে তুর্কিরা। কিংবা প্যাঁচে খেলতে সৌদি-আমিরাতি কোন প্লট। ব্যাপারটা এখনও ক্লিয়ার না।
কিছুদিন আগে, কুর্দি কন্ট্রোল্ড এই শহরের একেবারে কেন্দ্র থেকে তুর্কিরা কুর্দিদের এক মিলিট্যান্ট নেতাকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল। মনে হচ্ছে তুর্কিরা কিছুতেই তাদের সীমান্তের এত কাছে কুর্দি বাহিনীকে স্ট্র্যাটেজিক কারণে ক্ষমতায় থাকতে দিবে না।
সিরিয়ায় আমেরিকার সেনা সংখ্যা ২ হাজারের মত, যারা মূলত স্পেশাল ফোর্স । এখানে তাদের মেইন ল্যান্ড ফোর্স হচ্ছে কুর্দিরা, যাদের অস্ত্র, ট্রেইনিং, লিজিস্টিক্স, আর ইন্টালিজেন্স দিচ্ছে আমেরিকা। প্রথম থেকেই এর বিরোধিতা করে আসছে তুরস্ক। আমেরিকা তুরস্কের সাথে ডিল করেছিল যে তারা যখন সিরিয়া ছেড়ে যাবে, তখন সেই সাথে তারা আমেরিকান সব অস্ত্র নিয়ে যাবে। সেই ডিলের বাস্তবায়ন খুব একটা হচ্ছে না।
আরও যে কথাটি মনে রাখতে হবে, ট্রাম্পের সিরিয়া থেকে আমেরিকান সেনা তুলে নেয়ার ঘোষণার পর ডিফেন্স সেক্রেটারি জেনারেল ম্যাটিস থেকে শুরু করে উচ্চ পর্যায়ের আরও তিনজন পদত্যাগ করেছে। অর্থাৎ, তারা এই প্রস্তাবে মোটেই রাজি নন। ট্রাম্প এখন ডিফেন্স সেক্রেটারি বানিয়েছে বয়িং’র এক কর্মকর্তাকে। একেবারে খিঁচুড়ি অবস্থা।
দ্বিতীয়ত, বুশ পর্যন্ত আমেরিকান ফরেন পলিসি এক স্পেসিফিক ধারায় চলছিল। লিড অল নেশান্স নীতি ছিল তখন। কিন্তু যুদ্ধের ব্যাপারে ওবামা সেই পথ থেকে সরে আসেন। আঞ্চলিক শক্তিকে দিয়ে কাজ হাসিলের নীতি নিয়েছিল ওবামা প্রশাসন। আর এখন ট্রাম্পের বেলায় বাস্তবে কোন ফরেন পলিসি নাই বলেই মনে হচ্ছে।
তিনি ব্যায় কমাতে চান। ফলে তিনি আমেরিকান ডলারে অন্যদের যুদ্ধ করার ব্যাপারে নারাজ। ভিতরের খবর ট্রাম্প সিরিয়া ব্ল্যাকওয়াটারের হাতে ছেড়ে দিবে। ব্ল্যাক ওয়াটার হচ্ছে আমেরিকান মার্সেনারি একটা কোম্পানি। পয়সা দিয়ে তাদের যে কেউ হায়ার করতে পারে। পয়সা দাও, সার্ভিস নাও। এটা একটা এক্সপেরিমেন্ট, আর আমেরিকান জেনারেলেরা ট্রাম্পের সাথে এই ব্যাপারে সিরিয়াস দ্বিমত পোষণ করছেন।
তাই বলে এটা মনে করার কোন কারণ নাই যে আমেরিকার দিন শেষ। না, আমেরিকা দুর্বল হয়ে যায়নি। গত ১৭ বছর ধরে তারা আফগানিস্তান আর ইরাকে বিভিন্ন ক্যাপাসিটিতে যুদ্ধরত। তারপরেও এখন পর্যন্ত আমেরিকা বিশ্বের সবচেয়ে বড় ইকোনমিক পাওয়ার। বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাশীল মিলিটারি পাওয়ার, আর সবচেয়ে বড় ডিফেন্স বাজেট আমেরিকার। যেখানে আফগানিস্তানে মাত্র ১০ বছর যুদ্ধ করেই সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে খানখান হয়ে পড়েছিল, রাস্তায় রাস্তায় মানুষকে রুটির জন্য লম্বা লাইনে দাড়িয়ে থাকতে হয়েছিল। এসবের কানাকড়ি ক্ষতিও আমেরিকার হয় নাই। আর হওয়ার কোন লক্ষণও নাই।
তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে, তারা এসব যুদ্ধে লিড পজিশন নিচ্ছে না কেন? কারণ তারা তাদের ট্যাক্টিক বদলাচ্ছে। তারা দেখেছে অন্য দেশে গিয়ে দীর্ঘদিন যুদ্ধ করে কোন লাভ হয় না। সবকিছু আল্টিমেটলি সেইসব দেশের মানুষের উপরেই নির্ভর করে। যেই পন্থা বা পলিসি আসলে কাজ করে না তা জোর করে ধরে রাখলে দীর্ঘ মেয়াদে আমেরিকার ক্ষতি হতো। তাই তারা ট্যাক্টিক্যাল পজিশনে যাচ্ছে, এক্সপেরিমেন্ট চালাচ্ছে এখন।
আমেরিকা নিজেদের জন্য সুইসাইডাল কোন পলিসি নিবে না। সোভিয়েত ইউনিয়নের মত ভুলও করবে না। আপাতদৃষ্টিতে অনেকের কাছে আমেরিকা হেরে যাচ্ছে মনে হলেও আমেরিকা আসলে রি-পজিশোনিং হারসেলফ।