পশ্চিমাবিশ্বের ভূমিকায় সরকারের অস্বস্তি

পশ্চিমাবিশ্বের ভূমিকায় সরকারের অস্বস্তি

গত ৩০ ডিসেম্বরের একাদশ জাতীয় নির্বাচন ভোট কারচুপির মাধ্যমে বিপুল বিজয় দেখিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলেও স্বস্তিতে নেই তারা। উপরে উপরে কথাবার্তায় যেমন তেমন ভেতরে এক ধরনের অস্বস্তি বিরাজ করছে পশ্চিমা বিশ্বের ভূমিকা নিয়ে। ভারত, রাশিয়া ও চীনসহ গুটি কয়েকটি রাষ্ট্র নবগঠিতক সরকারকে অভিনন্দন জানালেও ইউরোপ-আমেরিকার শক্তিধর ৩০টিরও অধিক দেশ বিপরীত অবস্থানে রয়েছে।

এদিকে সহিংসতা আর ব্যাপক কারচুপির কারণে ৩০ ডিসেম্বরের একাদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সন্তুষ্ট নয় কেউই। সরকার নিয়ন্ত্রিত এ নির্বাচনে দেশে এবং দেশের বাইরে সমালোচনা আর নিন্দার ঝড় বইছে। কারচুপির অভিযোগের স্বচ্ছ তদন্ত এবং সব পক্ষকে নিয়ে শান্তিপূর্ণ সমাধানের তাগাদা দেয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষকে। নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে বলে মুখে হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ব্যাপক প্রচার করলেও এর বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছে পশ্চিমাবিশ্ব।

সহিংসতায় প্রাণহানির ঘটনায় উদ্বেগ এবং কারচুপির সুষ্ঠু তদন্তের তাগাদা দিয়ে ইতিমধ্যে বিবৃতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাতিসংঘ।

নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমাবিশ্ব শক্ত ভাষায় তাদের যে মূল্যায়ন এবং অবস্থান তুলে ধরেছেন তাতে নিজের ভাবমূর্তি নিয়ে বেকায়দায় পড়তে পারেন বর্তমান সরকার। বুধবার যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী গণমাধ্যম রয়টার্স তাদের এক প্রতিবদনে এমন অভিমত ব্যক্ত করেছে।

নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমাবিশ্ব কড়া ভাষায় তাদের যে মূল্যায়ন তুলে ধরেছেন সেটি বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর ভাবমূর্তির ক্ষতির কারণ হতে পারে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যাপক কারচুপি আর ভোটারদের আতঙ্কিত করে নির্বাচন করা হয়েছে অভিযোগ এনে এর ফলাফল প্রত্যাখান করেছে শেখ হাসিনার বিরোধী সকল রাজনৈতিক দল। তবে অনিয়ম হয়নি বলে দাবি করেছে হাসিনা। তার ভাষ্যমতে ভোট ছিলো শান্তিপূর্ণ, আর তাতে উৎসব মুখর পরিবেশে অংশ নিয়েছে তার সমর্থকরা।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাদের পাঠানো এক বিবৃতিতে বলেছে, “নির্বাচনের দিনে ব্যাপক সহিংসতা ঘটেছে, পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়া জুড়ে ছিল লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের ঘাটতি। এসকল প্রতিবন্ধকতার কারণেই নির্বাচনের প্রচার এবং ভোটদান প্রক্রিয়া কলুষিত হয়েছে”। নির্বাচনের সময় হওয়া কারচুপির অভিযোগসমূহের একটি যথার্থ তদন্ত করার আহবান জানিয়েছে সংস্থাটি।

বিদেশে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্রও এ নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এক বিবৃতিতে দেশটি জানিয়েছে, হয়রানি, ভীতিকর পরিস্থিতি এবং সহিংস কর্মকাণ্ডের জন্যই নির্বাচন পূর্ববর্তী সময়ে বিরোধী দলের প্রার্থী এবং সমর্থকেরা স্বাধীনভাবে তাদের সভা-সমাবেশ করতে পারেনি, কোনো প্রচারণা চালাতে পারেনি। এঘটনাগুলোর স্বপক্ষে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য রয়েছে, আর তাতে উদ্বিগ্ন যুক্তরাষ্ট্র। ভোটে বাধা দেবার বিষয়টিতে অসন্তোষ জানিয়ে দেশটি বলেছে, ভোটের দিনে সংগঠিত অনিয়মগুলোর কারণে অনেক ভোটার ভোট দিতে পারেননি। এ বিষয়টিতে আমরা উদ্বেগ প্রকাশ করছি। কারচুপির এসব বিষয় নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

আর এ অস্বস্থি আরো বাড়িয়ে দিয়ে ঐক্যফ্রন্টের গঠনমূলক রাজনীতি, বক্তব্য ও বিবৃতি। এবারের নির্বাচনের আগে-পরের ঐক্যফ্রন্টের ভূমিকা ছিল খুবই ইতিবাচক। তারা অন্যদের উস্কে দেয়া কোনো সহিংস পথে না গিয়ে শান্তিপূর্ণ উপায়ে বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে।

গত ৬ জানুয়ারি বিকেলে রাজধানীর হোটেল আমারি-তে বিদেশি কূটনীতিকদের সাথে বৈঠক করেন ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণের পর কূটনীতিকদের সাথে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এটিই প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠক। এই বৈঠকে নির্বাচন সম্পর্কে নিজেদের মূল্যায়ন, অভিজ্ঞতা এবং অভিযোগের খুঁটিনাটি তুলে ধরা হয়েছে।

ড. কামাল হোসেন বলেছেন, আমরা তাদের কাছে নির্বাচনের কিছু ডকুমেন্ট দিয়েছে যে নির্বাচনের আগের দিন ও পরের দিন কী হয়েছে। সেই সঙ্গে ডকুমেন্ট অনুসারে আমরা তাদের একটা পেনড্রাইভ দিয়েছি, যাতে তারা দেখতে পারেন নির্বাচনের আগের এবং পরের দিন কী হয়েছিল।

অবশ্য নির্বাচনের পরের দিন নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ বিষয়ে বিদেশি সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছে, “ভোটে কোনো কারচুপি হয়নি। কেউই যদি প্রমাণ করতে পারে কারচুপি হয়েছে। তাহলে পুনরায় ভোট হতে তো আমাদের আপত্তি নেই।”এখন দেখার বিষয় আসলেই কারচুপির তথ্য-উপাত্তের প্রমাণ মেলার পর তিনি কি বলেন?