যেভাইবেই হোক, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কার্যক্রম এগোচ্ছে তার নিজস্ব গতিতে। বাংলাদেশের রাজনীতির বড় দুই দলের সাথে ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনে যাচ্ছে অন্যান্য রাজনৈতিক দলও। ইতোমধ্যে মনোনয়ন ক্রয়-বিক্রয়, প্রার্থী ঘোষণার মধ্য দিয়ে এক রকম নির্বাচনী আমেজই পাওয়া যাচ্ছিল। কিন্তু এর মধ্যেও রাজনৈতিক খেলা কম দেখা যাচ্ছেনা। ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’র ন্যাক্কারজনক উদারহরণ তৈরি করা ছাড়াও বিরোধীদের দমনে ক্ষমতাসীনরা ব্যবহার করছে নিজেদের ‘আইনি কৌশল’। আদালতকে ব্যবহার করছে রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্যে।
একথা এ জন্য বলা যে, আওয়ামী লীগের প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপি নির্বাচনে আসছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে। যেখানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সামনে থেকে নেতৃত্ব দিলেও চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান দলীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের বাইরে নয়। ইতোমধ্যে বগুড়া’র দু’টি আসনসহ ফেনির একটি আসনে নির্বাচনে প্রার্থীতা দেয়া হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে। আর এ ঘটনার পরদিনই নড়েচড়ে বসলেন, আওয়ামী মনোনয়ন প্রার্থী অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। জানালেন, নির্বাচন করতে পারবে না খালেদা জিয়া। বগুড়া ৬, ৭ এবং ফেনি ১ আসনে বেগম খালেদা জিয়া থাকতে অন্য কারও জয়ী হওয়া কল্পনা করা সম্ভব না। হয়তো তাই তাকে আটকানোটাই সরকারের প্রথম কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার হাইকোর্ট রায় দিয়েছেন এই যে, বিচারিক আদালতে দুই বছরের বেশি সাজা হলে এবং আপিলে মামলাটি বিচারাধীন থাকা অবস্থায় কোন ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। আদালত পর্যবেক্ষণে বলেছে, সংবিধানের ৬৬ (২) (ঘ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কারও দুই বছরের বেশি সাজা বা দণ্ড হলে, সেই দণ্ড বা সাজার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না, যতক্ষণ না আপিল বিভাগ ওই রায় বাতিল বা স্থগিত করে তাকে জামিন দেয়। আদালত যে শাস্তি স্থগিত করবে না তা পরিস্কার। আর খালেদা জিয়াকেও যে এই কৃত্রিম আইনি জালে আটকে ফেলা হয়েছে, তাও পরিস্কার।
এই একই রায়ে আটকে যাচ্ছে তারেক রহমানের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সম্ভাবনা। অন্যদিকে, তারেক রহমানের স্ত্রী জোবাইদা রহমানও ভোটার তালিকা হাল নাগাদ বা জাতীয় পরিচয়পত্র প্রচলনের সময় তিনি অনুপস্থিত থাকায় নতুন আইনি জটিলতায় পড়তে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। যার ফলে, জোবাইদা রহমানেরও নির্বাচনে অংশগ্রহণের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।
প্রশ্ন উঠছে, শেষ মুহূর্তে আদালতের এই রায় ‘জিয়া পরিবার’রকে মাইনাস করার কোন ষড়যন্ত্র নাতো? যে ষড়যন্ত্র কার্যকর করতে ক্ষমতাসীনরা আশ্রয় নিচ্ছেন ‘আদালত’র। মূলত আদালততো তাদেরই! যেখানে রাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল দলীয় মনোনয়ন ফর্ম কেনেন, তিনি যে দলের হয়ে কাজ করবেন না। তা কি করে বিশ্বাস করা সম্ভব।
অথচ আওয়ামী লীগ শামীম ওসমান, পংকজ দেবনাথদের মতো দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের ওই একইভাবে আইনি মারপ্যাচে প্রমাণ করেছেন ‘দুধে ধোয়া তুলসী পাতা’ আর মনোনয়ন দিয়ে দায়িত্ব দিতে চলেছেন ‘দেশের সেবা’ করার।