নির্বাচনের আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হালচাল

নির্বাচনের আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হালচাল

নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ গণতন্ত্র ও উন্নয়নের ধারাকে শক্তিশালী করবে। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করাই সরকারের লক্ষ্য। জনগণ যাদের ভোট দেবে, তারাই বিজয়ী হবে। এই কথাগুলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।  এই যে নির্বাচন, এটাকে অবাধ ও সুষ্ঠু করবার যে কথা প্রধানমন্ত্রী বলছেন, এর জন্য প্রথমেই যে বিষয়টি থাকতে হবে তা হল ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কী? মাঠের লড়াইয়ে সমানে সমানে সুযোগ পাওয়াকে সহজ ভাষাতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বলা চলে।

তবে প্রধানমন্ত্রী ‘অবাধ’, ‘সুষ্ঠু’ প্রভৃতি শব্দ নিত্যদিন আউড়ে গেলেও আদতে পরিস্থিতির ভিন্নতা চোখ এড়াচ্ছে না কারোরই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতির আঁতুড়ঘর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে দেশের সর্বোচ্চ মেধাবীদের প্রতিষ্ঠান বলা হয়। এরই সূত্র ধরে বলা চলে, এখানে যারা ছাত্ররাজনীতি করে, দেশের সর্বোচ্চ মেধাবীদের মাঝে তাদেরই গুণতে হয়। বলা বাহুল্য, মধুর ক্যান্টিনেই নিয়ন্ত্রিত হয় এখানের রাজনীতি। স্বাভাবিক মননে এখানে থাকার কথা সহাবস্থানের রাজনীতি; বিভিন্ন দলের, বিভিন্ন মতের ছাত্রসংগঠনগুলো তাল মিলিয়ে মধুর ক্যান্টিনে রাজনীতি করবে, আর ঐখান থেকেই জাতীয় নেতৃত্ব বের হবে। কিন্তু ঘটনার ঠিক উল্টো পিঠই দেখাছে বর্তমান বাস্তবতা। সহাবস্থানের বদলে সেখানে চলে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের একচেটিয়া কার্যক্রম। কেন এমন হয়? কেন অন্যান্য দলের, অন্যান্য মতের ছাত্রসংগঠনের নামগন্ধও মধুতে পাওয়া যায় না?

সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা প্রবাহের দিকে লক্ষ্য করলে হয়তো পরিষ্কার হবে বিষয়টি। গত ২৭ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে চায়ের দোকানে মারধরের শিকার হয়েছেন ছাত্রদলের দুই নেতা। রাত ৯ টার দিকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাদের উপর হামলা চালায়। ছাত্রদল নেতার একজন কেন্দ্রীয় সাহিত্য ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম ভূঁইয়া এবং অন্যজন বঙ্গবন্ধু হল ছাত্রদলের সদস্য রায়হানুল আবেদিন। নিজের ক্যাম্পাসেই আড্ডা দিতে গিয়ে মার খেলেন দু’জন ছাত্র। দোষ তাদের ছাত্রদলের ট্যাগ!

গত ০১ নভেম্বর বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক সাড়ে ৮ টার সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল শাখা ছাত্রদলের কর্মী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ইংলিশ স্পিকিং ফর আদার ল্যাংগুয়েজ’ বিভাগের ১৫-১৬ সেশনের নিয়মিত ছাত্র মোঃ ইমন টিএসসির সামনে বসে চা পানরত অবস্থায় তার উপর ছাত্রলীগের জহুরুল হক হল শাখার সহ-সম্পাদক আই আর বিভাগের ১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী সাকিবুর রহমান সায়েম ও তার অনুসারীরা আক্রমণ করে। এবারও একই রকম ব্যাপার। সহাবস্থানের রাজনীতি দূরে থাক; ক্যাম্পাসেই থাকা দায়ের ব্যাপার হয়ে যাচ্ছে ছাত্রদলের।

এইতো কয়দিন আগে, ১৮ই নভেম্বর ডাকসুর পাশে আমতলায় ছাত্রলীগ মারলো প্রথম বর্ষের ছাত্রদল করা এক শিক্ষার্থীকে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পড়ুয়া মেহেদি হাসান জহুরুল হক হল ছাত্রলীগের কর্মী। রাজনৈতিক আধিপত্যের দরুণ হলে থাকতে না পারা এই ছেলে মার খেলো পরীক্ষা দিতে এসে। কীভাবে আর চিন্তা করা যায় সহাবস্থানের কথা?

ক্যাম্পাসের বামসংগঠনগুলোও নেই শান্তিতে। নানা অত্যাচার সইতে হয় তাদেরও। পক্ষেবিপক্ষে যৌক্তিক তর্ক-বিতর্কের বিপরীতে এখানে চলে একপক্ষীয় অনাচার। ক্যাম্পাসের প্রায় ১৯টি হলের কোনোটিতেই ছাত্রলীগ ব্যতিরেকে অন্য কোনও ছাত্রসংঠনের নামমাত্রও পাওয়া যায় না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিজয় একাত্তর হলের ছাত্রদলের এক কর্মী জানান, আমি ছাত্রদল করি। এটা কেউ জানে না। জানলে আমি হলে থাকতে পারবো না। প্রত্যেকদিন আতঙ্কে থাকি।

জানা যায়, কোনও ছাত্র নিজে অন্যদল না করার সত্ত্বেও তার বংশের কেউ যদি আওয়ামীলীগ ব্যতিত অন্য কোনও দল করে, সেক্ষেত্রে তাকেও রেহাই দেয়া হয় না। এই হলো এইখানকার রাজনীতির বর্তমান অবস্থা।

এদিকে ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলে যাচ্ছেন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের কথা। ক্যাম্পাসেই এই অবস্থা। বাইরের অবস্থা আরও করুণ! তফসিল ঘোষণার পর বেশ কিছুদিন অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত সরকার বা নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে তেমন কিছুই করেছে বলে বোধ হয় না কিংবা চক্ষুগ্রাহ্য হয় না। রাজধানীসহ সারাদেশ এখনো নৌকার বিল বোর্ড, ব্যানার ও পোস্টারে পরিপূর্ণ। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ও বেতার যেন আওয়ামী লীগের সম্পতিতে পরিণত হয়েছে। বলা বাহুল্য, সরকারি অফিসের সামনেও নৌকার পক্ষে ভোট চেয়ে লাগানো বিলবোর্ডগুলো এখনো দৃশ্যমান। রাজধানীর এমন কোনো স্থান নেই যেখানে নৌকার বিল বোর্ড, পোস্টার বা ব্যানার পাওয়া যাবে না। এখনো রাজধানীর অধিকাংশ কমিশনার কার্যালয় ব্যবহৃত হচ্ছে নৌকার প্রার্থীদের পক্ষে। এ ছাড়া থেমে নেই বিরোধীপক্ষীয়, স্পষ্ট করে বলতে গেলে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর মামলা-গ্রেফতারের ব্যাপারও থেমে  নাই।