লেবেল প্লেয়িং ফিল্ডের নমুনা হিসেবে গণগ্রেফতার

লেবেল প্লেয়িং ফিল্ডের নমুনা হিসেবে গণগ্রেফতার

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাথে সরকারের দ্বিতীয় দফায় সংলাপ শেষ হয়েছে গতকাল। এর আগে প্রথম দফায় সংলাপের কথা আসতেই দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে একটি স্বস্তির ছাপ দেখা যায়। জনগণ সুস্থ রাজনীতির একধরনের হাওয়া অনুভব করছিল। কিন্তু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একগুয়েমিপনায় সুস্থ রাজনীতির সে গুড়ে বালি। আর “সংলাপ নয় তবে আলোচনার পথ খোলা আছে” ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যে আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হওয়া সংলাপে একটি আলোচ্য বিষয় ছিল ‘লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড’। অর্থাৎ সকল দলের সমান সুযোগের মাধ্যমে একটি সুস্থ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি। সংলাপে প্রধানমন্ত্রী কথা দিয়েছেন লেবেল প্লেয়িং ফিল্ডের নিশ্চয়তা দিবেন। যদিও প্রধানমন্ত্রী কথায় জনগণ ভেবেচিন্তেই বিশ্বাস স্থাপন করে থাকেন।

সংলাপ শেষের সংবাদ সম্মেলনে ক্ষমতাসীনদের বক্তব্যে মনে হল, তারা লেবেল প্লেয়িং ফিল্ডকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছেন। আদৌ কি তাই! তারা সভা সমাবেশের অনুমতি দেবেন। তবে কি এতদিন তারা বিরোধীদের রাজনীতি করার এই অধিকার খর্ব করেছিলেন? এসব প্রশ্নে না হয় নাই আসলাম কিন্তু ‘লেবেল প্লেয়িং ফিল্ডের নমুনা ইতোমধ্যে আমাদের সামনে এসে হাজির হয়েছে। আর তা হলো গণগ্রেফতার। শ্রেফ আদালতেই হাজির করা হয়ে ৪ শতাধিক ঐক্যফ্রন্টের নেতা-কর্মীদের, যার মধ্যে ৩ শতাধিকের মিলেছে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড।

অনেক আগে থেকেই ঐক্যফ্রণ্ট এবং বিএনপি গ্রেফতারের ব্যাপারে অভিযোগ করে আসছিল। সংলাপে আওয়ামীলীগ গ্রেফতারের তালিকাও চেয়েছেন। বলা হয়েছে গ্রেফতারের ব্যাপার খতিয়ে দেখা হবে এবং প্রয়োজনে জামিনের ব্যবস্থা করা হবে। তবে সংলাপ শেষ হতে না হতেই ঠিক তার উলটো চিত্র দেখছি আমরা। দুই দিন আগেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশ থেকে ফেরার সময় গ্রেফতার হন বাংলাদেশ ছাত্রদল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সভাপতি সোহেল রানা। জানা যায় ডিবি পুলিশের কাছে আটক হন তিনি। এই সংলাপ মৌসুমেই বিএনপি এবং ঐক্যফ্রন্টের অনেক নেতা-কর্মীর গ্রেফতারের খবর পাওয়া গিয়েছে।

এদিকে গত দুই মাসে গ্রেফতার হওয়া নেতা-কর্মীদের একটি তালিকা জমা দেয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। বিএনপি দাবি করেছে হাজারেরও বেশি মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দিয়ে তাদের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করে রাখা হয়েছে। এই বিষয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সই করা একটি চিঠি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পৌছে দেন বিএনপির সহকারী দপ্তর সম্পাদক সাইফুল আলম টিপু। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, গত পহেলা সেপ্টেম্বর থেকে ১০৪৬ টি মামলায় ১০,২৯৮ জন নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়েছে এবং ৪৬,৭৪৮ জন নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারি আব্দুর রশিদের কাছে চিঠিটি হস্তান্তর করার সময় সাইফুল আলম টিপু জানায় তালিকাটি সম্পন্ন নয় আংশিক।

আজ ঢাকার আদালতে ৪৩১ জনকে হাজির করা হয় যাদের সবাইকে গত মঙ্গলবার আটক করা হয়েছিল। এদের মধ্যে ৩০০ জনকে আদালত পুলিশকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছে। এদের বিরুদ্ধে পুলিশের একমাত্র অভিযোগ ছিল এরা রাজপথে সরকার বিরোধী স্লোগান দিয়েছে, যান চলাচলে বাঁধা দিয়েছে এবং গাড়ি ভাংচুর করেছে। এর মধ্যে আদালত প্রাঙ্গনে গ্রেফতার হওয়া আসামিদের স্বজনদের ভিড় করতে দেখা যায় এদের মধ্যে অনেকের সম্পর্কে জানা যায় কোন ভাবে রাজনীতিতে জড়িত ছিলোনা তারা। তাদের আইনজীবিরা আদালতের আর্জিতে উল্লেখ করেন, হয়রানি করার জন্য এসকল নিরীহ লোকদের ধরে এনেছে পুলিশ।

এদিকে এই বিষয়টিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা এই বিষয়টিকে খুবই হতাশাজনকভাবে দেখছে। তাদের মতে সংলাপে ডেকে এনে নতুন ভাবে হয়রানি করাটা পিঠ পিছনে ছুরি মারার সামিল। আর বিএনপি এরকম ন্যাক্কারজনক গণগ্রেফতারের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন তাদের মতে নির্বাচনের আগে তাদেরকে দুর্বল করার ষড়যন্ত্র করছে আওয়ামীলীগ।

মুখে ‘লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড’র প্রতিশ্রুতি দিয়ে। গায়েবি মামলা, গণগ্রেফতারের যে খেলা আওয়ামী লীগ শুরু করেছে, তা শুধু রাজনীতি নয় বরং দেশের জন্যও বিপজ্জনক।