একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বহু প্রতীক্ষিত সংলাপ শেষ হয়েছে ইতোমধ্যে। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মধ্যকার এই সংলাপের দিকে দেশবাসী দৃষ্টি দিলেও কোন সন্তোষজনক ফল আসবে না, সে বিষয়ে ছিল অনেকটাই নিশ্চিত। নির্বাচন পূর্ববতী সংলাপের ইতিহাসেও তেমন সফলতা নেই। তারপরও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের গ্রহণযোগ্যতা হয়তো ক্ষমতাসীনদের একটা সমঝোতার জন্য তাড়া দেবে বলেই ভেবেছিল জনগণ। কিন্তু তা আর হলো না। স্পষ্টতই ‘বিচার যাই হোক তাল গাছটা আমার’ রয়ে গেল।
গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টার পরপরই শুরু হয়ে সংলাপ চলে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত। এই সংলাপে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলীয় জোটের ২১ সদস্যের দলের নেতৃত্ব দেন আওয়ামী সভানেত্রী শেখ হাসিনা। অন্যদিকে নবগঠিত রাজনৈতিক জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ১৯ সদস্যের দলের নেতৃত্ব দেন গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন।
সংলাপ শেষে বিভিন্ন নেতার কাছ থেকে বিভিন্ন মন্তব্য আসে। তবে ফলাফল দাঁড়ায় শূন্য। সংলাপের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেতা এবং বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংলাপ শেষে মন্তব্য করেন, “আমরা এই আলোচনায় সন্তুষ্ট হতে পারিনি।” অন্যদিকে ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্বে থাকা ড. কামাল হোসেন জানান, “ভালো আলোচনা হয়েছে।” এবার প্রশ্ন হচ্ছে, কার মন্তব্যকে গ্রহণ করবে জনগণ? এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে আরেকটি প্রশ্নের উত্তরে। তা হল, আওয়ামী লীগ কি ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফা দাবি মেনে নিয়েছে। যদি না নেয় তবে আলোচনায় সন্তুষ্ট হওয়ার কিছু নেই।
অন্যদিকে, সংলাপ শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, সংসদ ভেঙে দিয়ে নিরপক্ষে সরকারের অধীনে নির্বাচনের যে দাবি বিরোধীদল করেছে, সে প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে সংবিধানের বাইরে গিয়ে কোন কিছু করা হবে না। সুতরাং এটা পরিষ্কার যে নির্বাচনে যেতে হলে শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই যেতে হবে। যদি তাই হয় তবে আর আলোচনার ফল কি হলো!
আবার ক্ষমতাসীনদের সৃষ্ট রাজনৈতিক সংকটেরও কোন সুরাহা হয়নি দীর্ঘ সংলাপে। খালেদা জিয়ার মামলা প্রত্যাহারের বিষয়টি সংলাপে উত্থাপিত হলে ‘ওটা আদালতের এখতিয়ার’র মতো কৌশলী উত্তর দেয় আওয়ামী লীগ।
সংলাপ শেষে সেনাবাহিনীকে ম্যজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়ার দাবিকে ‘যৌক্তিক নয়’ বলেও মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগ সাধরাণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
উল্লেখ্য, গত ২৮শে অক্টোবর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে একটি চিঠিতে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই তাদের সাত-দফা দাবি নিয়ে সরকারকে আলোচনা বসার প্রস্তাব করা হয়। ঐ প্রস্তাবের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সংলাপে বসতে রাজি হয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। কিন্তু ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফার একটিও মানতে রাজি নন তারা। তাহলে এমন পূর্বপরিকল্পিত সিদ্ধান্ত নিয়ে সংলাপে বসার কি অর্থ? সুতরাং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ধোঁয়াশা থেকেই যাচ্ছে। পুনরায় সংলাপে বসার ইচ্ছা পোষণ করেছে আওয়ামী লীগ। আজ শুক্রবার মুন্সীগঞ্জে পদ্মাসেতু ভিজিটর সেন্টার উদ্বোধন কালে এ কথা জানান। কিন্তু একগুঁয়েমি নিয়ে সংলাপের কোন সুপরিণতি হবে বলে মনে করেন না রাজনীতি বিশ্লেষকেরা।