একটি আবেদন নিয়ে একটি হ্যাশট্যাগ সংবলিত স্ট্যাটাস। সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে ভার্চুয়াল দুনিয়ায় বিরাটাকার জোয়ার। অতীতে কি কখনও কোনও পুরুষ দ্বারা যৌন নিগ্রহের শিকার হয়েছেন? এই প্রশ্নের উত্তরে সামাজিক মাধ্যমে ‘#মিটু’ স্ট্যাটাস দিয়ে নির্দ্বিধায় মুখ খোলার আর্জি জানিয়েছিলেন হলিউড অভিনেত্রী অ্যালিসা মিলানো। তিনি তোপ দেগেছিলেন বিখ্যাত প্রযোজক হার্ভি ওয়াইনস্টেইনের বিরুদ্ধে। সময়টা অক্টোবর, ২০১৭। এই পন্থায় তখন থেকে আজ পর্যন্ত অনেক কুকীর্তির পর্দা ফাঁস হয়েছে বহু গুণধরের! ইদানিং ‘#মিটু’ জোয়ার ভারতে যেন নতুনভাবে আছড়ে পড়ছে!
ভদ্রজন, সমাজসেবী, পরোপকারী হিসাবে পরিচিত ছিলেন অভিনেতা নানা পাটেকর। কয়েকদিন আগে তাঁর বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ করেছেন অভিনেত্রী তনুশ্রী দত্ত। একটি সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তনুশ্রী দাবি করেছেন, ২০০৮ সালে ‘হর্ন ওকে প্লিজ’ চলচ্চিত্রের শুটিং চলাকালীন তাঁর সঙ্গে অসভ্য আচরণ করেছেন নানা। তার অভিযোগ, “নানা পাটেকর আমার ক্যারিয়ার শেষ করে দিয়েছেন। তিনি বারংবার আমাকে যৌন হেনস্থা করেছেন। তাঁর কারণেই বাধ্য হয়ে আমি ইন্ডাস্ট্রি ছেড়েছি।” তবে ক্যারিয়ার যখন অস্তাচলে, তখন তিনি মুখ খুললেন কেন? তার বক্তব্য, ক্যারিয়ারের স্বার্থে তিনি চুপ ছিলেন। নানা পাটেকর যথারীতি অভিযোগ নস্যাৎ করে আইনি পথে মোকাবিলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। নানা কি সত্যিই যৌন হেনস্থা করেছিলেন? নাকি তাকে বিড়ম্বনায় ফেলতে মিথ্যা গল্প ফাঁদছেন তনুশ্রী দত্ত? জোর তরজা চলছে সামাজিক মাধ্যমে।
মোদির মন্ত্রিসভার অন্দরেও ঢুকে পড়েছে ‘#মিটু’ জোয়ার। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাষ্ট্রমন্ত্রী এম জে আকবরের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ তুলেছেন প্রিয়া রামানি নামের এক মহিলা সাংবাদিক। তার অভিযোগ, আকবর সাংবাদিক পেশায় থাকাকালীন ১৯৯৪ সালে মুম্বইয়ের এক অভিজাত রেস্তোরাঁয় তার সঙ্গে অসভ্য আচরণ করেন। ‘ভোগ’ ম্যাগাজিনে তিনি এই বিষয়ে বিস্তারিত লিখেছেন। সেই প্রতিবেদনে তার বক্তব্য, তখন তার বয়স ছিল ২৩ এবং আকবরের বয়স ছিল ৪৩। একটি সংবাদপত্রের তরফে আকবরের সাক্ষাৎকার নিতে তাকে এক রেস্তোরাঁয় পাঠানো হয়। সেখানে আকবর তাকে লবিতে দেখা না করে রুমে যেতে বলেন। রুমে আকবর তাকে মদ্যপান করতে বলেন, কিন্তু তিনি তা করতে অস্বীকার করেন। মদ্যপ আকবর গুনগুন সুরে গান গাইতে শুরু করেন। প্রিয়াকে তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে আবেদন জানান। প্রিয়া রামানি মুখ খোলার পর শুমা রাহা নামের এক সাংবাদিক টুইটার মাধ্যমে লিখেছেন, আকবরের সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে তারও তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে। আকবরের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন আরও কয়েকজন মহিলা। এই বিতর্ক নিয়ে কোনও আভ্যন্তরীণ তদন্ত শুরু হয়েছে কি? সাংবাদিকদের এই প্রশ্নে কোনও মন্তব্য করেননি পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। আকবর বর্তমানে নাইজেরিয়ায়, এই বিষয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি তার।
বিখ্যাত গায়ক অভিজিৎ ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধেও যৌন হেনস্থার অভিযোগ করেছেন বোধিসত্ত্বা ইয়ামাইওহো নামের এক এয়ারহোস্টেস। ফেসবুক পোস্ট দ্বারা তার দাবি, “প্রায় ২০ বছর আগে একটি পানশালায় আমাকে জোর করে চুম্বন করার চেষ্টা করেছিলেন অভিজিৎ। আমার কান চুষে আমাকে উত্ত্যক্ত করেছিলেন।” তখন গায়কের বিরুদ্ধে কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের করেননি তিনি। প্রত্যুত্তরে অভিজিৎ কটাক্ষ করে বলেছেন, “পেজ থ্রি পার্টি কিংবা পানশালায় আমি যাই না। আজকাল মোটা, কুৎসিত মেয়েরা খবরের শিরোনামে আসতে গল্প ফাঁদছে। যদি তারা আমাদের নাম ভাঙিয়ে অন্নসংস্থান করার চেষ্টা করছে, তাতেও সবুর!” গায়কের এহেন মন্তব্য কুরুচিকর, এই মর্মে সামাজিক মাধ্যমে তাকে তুলোধুনা করছে লাখো নেটিজেন।
এছাড়াও ‘#মিটু’ স্ট্যাটাস দিয়ে যৌন হেনস্থার অভিযোগ করা হয়েছে ‘সংস্কারী বাপুজি’ আলোক নাথ, পরিচালক বিকাশ বেহেল, প্রযোজক গৌরাঙ্গ দোশি প্রমুখের বিরুদ্ধে। নেতা থেকে অভিনেতা- অনেকে দূর্বলতার সুযোগে কিংবা সহায়তার বিনিময়ে যৌন নিগ্রহ করতে পিছপা হননি। লাখো নেটিজেন প্রহর গুনছে, এরপর ফাঁস হবে কার কীর্তি?