অনেক দিন ধরেই সতর্কবার্তা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু কিছুতেই যেন কিছু হচ্ছে না। কেউ গুরুত্ব দিচ্ছেন না আসন্ন এই ভয়াবহ সংকটকে।
‘গ্লোবাল ওয়ার্মিং’ অর্থাৎ ‘বৈশ্বিক উষ্ণতা’ বর্তমান সময়কালে একটি পরিচিত শব্দ। সচেতন মানুষ মাত্রই জানেন, জীবনযাপন তথা কৃষি-শিল্প-শক্তিনীতিতে ব্যাপক রদবদলের ফলে ভূপৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রা উপর্যুপরি বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হচ্ছে। ফলস্বরূপ ক্রান্তীয় অঞ্চলের বরফ গলে গিয়ে সমুদ্রতলের উচ্চতা বাড়বে, স্বভাবতই ঘটবে মহাপ্লাবন। মারাত্মক বিপর্যস্ত হবে বহু দ্বীপরাষ্ট্র এবং বদ্বীপ, রক্ষা পাবে না আরব সাগর তীরবর্তী ভারতবর্ষও। অনেক সংস্থার সমীক্ষা, গবেষণাপত্র বৈশ্বিক উষ্ণতা বিষয়ে সতর্কবার্তা জানিয়েছে; তবু টনক নড়েনি কারও। সম্প্রতি প্রকাশিত আরও একটি রিপোর্ট দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানিয়ে দিয়েছে, মহাবিপদ থেকে আর মাত্র বারো বছর দূরে আছে পৃথিবী।
এদিকে কলকাতায় ও ঢাকার আবহাওয়া ইতোমধ্যে জনমনে ভীতি তৈরি করেছে। দিন দিন বাড়ছে তাপমাত্রা। সোমবার জাতিসংঘ ‘ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ’ (আইপিসিসি) একটি সমীক্ষার ফল প্রকাশ করে জানিয়েছে, অদূর ভবিষ্যতে মারাত্মক তাপপ্রবাহের সম্মুখীন হতে হবে বেশ কয়েকটি দেশকে। শিয়রে শমন ভারতীয় উপমহাদেশের কয়েকটি দেশের। সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, তাপমাত্রা বৃদ্ধির ভয়ঙ্কর প্রভাব পড়বে কলকাতা এবং করাচিতে। সাম্প্রতিক অতীতে ২০১৫ সালে ভারতে অস্বাভাবিক গরম পড়েছিল, মৃত্যু হয়েছিল প্রায় আড়াই হাজার মানুষের। একই হারে তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে ভূপৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রা আরও দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যাবে, যার ফল হবে ভয়ঙ্কর। সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৫ সালে ভারতে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, সেই পরিস্থিতি এবার তৈরি হবে কলকাতা এবং করাচিতে বাদ যাবে না ঢাকাও। অসহ্য গরমের ফলে মানুষের মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়বে। জলবায়ু পরিবর্তনের অনিবার্য ফল হিসাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে চাষাবাদ, বাড়তে থাকবে দারিদ্রতা।
এই সংকট থেকে মুক্তির উপায় কী? ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তি সইয়ের সময়ে বিজ্ঞানীরা মনে করতেন, ভূপৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রা সর্বাধিক দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হলে তা নিরাপদ। পরবর্তীকালে সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, গত ১৫০ বছরের তুলনায় বিগত কয়েক বছরে ভূপৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রা এক ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গিয়েছে, এই তাপমাত্রা সমুদ্রতলের বিপদসীমা অতিক্রম করার জন্য যথেষ্ট। তাই মহাবিপর্যয় থেকে রক্ষা পেতে হলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসে বেঁধে রাখা আবশ্যক। আইপিসিসি রিপোর্টের সমীক্ষক মাইলস অ্যালেন সাফ জানিয়েছেন, পৃথিবীতে অবিলম্বে ‘কার্বন-নিরপেক্ষ’ হতে হবে; অর্থাৎ কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রহণ এবং ত্যাগের মধ্যে সমতা রাখতে হবে। গ্রিন হাউস গ্যাস উৎপাদন কমাতে হবে। অতিরিক্ত গ্যাজেট ব্যবহার কমাতে হবে। জৈবজ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে হবে। এবং সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ, ব্যাপক হারে বৃক্ষরোপণ করতে হবে, বাঁচাতে হবে বনজঙ্গল।
পরিবেশের ক্ষতি করে ব্যাপক হারে নগরায়ণের প্রভাব ইতোমধ্যেই পড়তে শুরু করেছে আমাদের জনজীবনে। নগরের দূষণের মাত্রা বৃষ্টির সাথে সাথে তাপমাত্রা বৃদ্ধির এই বিপদ যুক্ত হলে হুমকির মুখে পড়বে মানুষের জীবন। দেখা দিবে রোগ বালাই।
পরিবেশবিদ ও সচেতন নাগরিকরা মনে করেন আর সময় নষ্ট না করে দ্রুত এই বিপদ মোকাবেলায় আমাদের কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে।