শুধু সম্পদই নয়- নির্বাচন, রাজনীতি, মিডিয়াও ধনীদের দখলে

শুধু সম্পদই নয়- নির্বাচন, রাজনীতি, মিডিয়াও ধনীদের দখলে

নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আমরা যেটাকে গনতন্ত্র বলি সেটি তো গণতন্ত্র নয়। সমাজের কতিপয় মানুষ শুধু সব সম্পদ নিয়ন্ত্রণ করছে তা নয়- তারা নিয়ন্ত্রণ করছে নির্বাচন, রাজনীতি, এমনকি মিডিয়াও। আসলে সবই তাদের নিয়ন্ত্রণে। গত ২৬ জানুয়ারি ‘আউটলুক ইন্ডিয়া’কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন তিনি।

শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার নতুন বই ‘দি থ্রি জিরো’ নিয়ে কথা বলতে হাজির হয়েছিলে ভারতের জয়পুর সাহিত্য উৎসবে।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আসলে সবকিছু একটি মুখোশের আড়ালে চলে যাচ্ছে। আমাদের নির্বাচন হচ্ছে, আমরা নিজেদের ইচ্ছামতো প্রার্থী বাছাই করছি। অথচ কোনো কিছুর নিয়ন্ত্রণ আমাদের হাতে নেই।’

সারা বিশ্বের ক্রমবর্ধমান বৈষম্যকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস টাইম বোমার সঙ্গে তুলনা করে বলেন, এই অসাম্য ও বৈষম্য প্রতি মিনিটে, প্রতি সেকেন্ডে বাড়ছে। ফলে অসাম্য প্রতিদিন নতুন নতুন চূড়া জয় করছে। তবে একদিন এই টাইম বোমা বিস্ফোরিত হবে বলে বিশ্বাস করেন  সামাজিক ব্যবসার ধারণার উদ্গাতা ড. ইউনূস।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস মনে করেন, পুঁজিবাদী ব্যবস্থা আসলে একটি মেশিনের মতো যার কাজই হচ্ছে সম্পদ গিলে নেয়া। আর তার সঙ্গে আছে মানুষের ভোগবাদিতা। সম্পদ কামানোই যেন আজ মানুষের একমাত্র লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং মানুষ তা অন্ধের মতো করছে।

এর সমাধান কী হতে পারে প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, বর্তমান অর্থ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন দরকার। ওই পরিবর্তন এতাে সহজনেয় যে, সরকার দুটি আইন করে দিল আর সব বদলে গেল। মানুষের ভোগবাদিতা কোনো স্বভাবজাত ব্যাপার নয়, বরং মানুষ আসলে পরার্থপরতা ও স্বার্থপরতার এক অভূতপুর্ব মিশ্রণ বলেই তিনি বিশ্বাস করেন।

ড. ইউনূসের উদ্যোগে প্রচারিত ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচির বিষয়ে নানান সমালোচনার প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, আমি যখন ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচি শুরু করেছিলাম তখন অনেকেই বলেছিলেন এতে কাজ হবে না। কিন্তু আমরা সেটি করে দেখিয়েছি। এটি এখন বাস্তবতা। এটি এখন সারা বিশ্বে আদৃত ধনী দেশ থেকে নিম্ন আয়ের দেশ- সব জায়গায়। আমি মনে করি, এভাবেই আমাদের নতুন ব্যবস্থা বিশ্ব সমাজে প্রতিষ্ঠিত হবে। আমাদের সময় তো অর্ধেক শেষ। তাই আমাদের ভাবতে হবে আগামী প্রজন্মের কথা।

ড. ইউনূস প্রযুক্তির নানান দিক নিয়ে আলাপ করতে গিয়ে প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে আইন করা জরুরি বলে মনে করেন। তিনি বলেন, যেসব প্রযুক্তি মানব জাতির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে সেসব নিয়ন্ত্রণের গাইডলাইন জরুরি। এমনকি ওই কাজে জাতিসংঘকেও এগিয়ে আসার আহ্বন জানান তিনি।

ড. ইউনূস পরিবেশে কার্বন নিঃসরণের মাত্রা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। যে কোনাে মূল্যে কার্বন নির্গমন যেন দুই শতাংশের উপরে না ওঠে এ জন্য সম্মিলিত উদ্যোগ নেয়ার আহবান জানান তিনি।

বর্তমান চাকরি ব্যবস্থা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে চাকরিকে ভাড়া খাটা শ্রমিকের সঙ্গে তুলনা করেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এর মূল কথাই হলাে, নিজের শ্রম দিয়ে তার মালিককে ধনী থেকে আরো ধনী করে তোলা। তিনিওেই অবস্থা পরিবর্তনের কথা বলতে গিয়ে সবাইকে উদ্যোক্তা হওয়ার পরামর্শ দেন।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস মনে করেন, আমরা সবাই আসলে উদ্যোক্তা মন নিয়েই জন্মাই। অর্থনীতির নানান তত্ত্ব নিজেদের অন্যের ভাড়াটে শ্রমিক করে তৈরি করে নেয়। তিনি বলেন, আমাদের সামনে এখন দুটি পছন্দ হাজির আছে। হয় আপনি কিছু টাকার জন্য অন্যের হয়ে কাজ করতে পারেন, অন্যকে বিত্তশালী করে তুলতে দিন-রাত খাটুনি করতে পারেন অথবা নিজেই নতুন কিছু শুরু করতে পারেন। তাহলেই হয়তাে কতিপয় মানুষের হাতে আর এভাবে সম্পদ পুঞ্জীভূত হতে পারবে না।