গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী আবরার’র নিহত হওয়া নিয়ে আবারও ফুঁসে উঠেছে শিক্ষার্থীরা। ওই দিন সকালে দাঁড়িয়ে থাকা বাসে উঠার সময় সুপ্রভাত পরিবহনের একটি বাস তাকে চাপা দেয়। এতে করে গত বছর শুরু হওয়া ‘নিরাপদ সড়ক’ আন্দোলন পুনরুজ্জীবিত হয়েছে।
গতকাল বিচ্ছিন্নভাবে নদ্দায় ঘটনাস্থলে আন্দোলন হলেও আজ সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে নেমেছে। ২০১৮ সালের আন্দোলনে সরকার শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশ ও ছাত্রলীগ দিয়ে নির্মম হামলা চালিয়েছিল। তারপরও ৯টি দাবি মেনে নিলে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের সমাপ্তি টানে। কিন্তু পুনরায় সড়কে শিক্ষার্থী চাপা দেওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে পুরনো দাবি নিয়ে। দেখা গেছে ৯টি দাবির ৭টি পালনে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। যার ফলে শিক্ষার্থী ঢাকা উত্তরের নব-নির্বাচিত মেয়রের প্রতিশ্রুতিও আন্দোলন স্থগিত করেনি।
আজ বুধবার সারাদেশেই সড়ক অবরোধের ডাক দিয়েছে তারা। নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালেয়ের শিক্ষার্থীরা। বেলা সাড়ে ১২টা থেকে তারা অবরোধ করে রাখে শাহবাগ মোড়।
শিক্ষার্থীদের অবরোধের ফলশ্রুতিতে শাহবাগ এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তবে অ্যাম্বুলেন্সসহ গুরুত্বপূর্ণ যানবাহন চলাচলে সহায়তা করছেন শিক্ষার্থীরা।
অবরোধে শিক্ষার্থীরা প্ল্যাকার্ড হতে নিরাপদ সড়কের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকে। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘সড়ক সড়ক সড়ক চাই, নিরাপদ সড়ক চাই’, ‘আমার ভাই মরলো কেনো, প্রশাসনের জবাব চাই’সহ বিভিন্ন স্লোগানে দিতে থাকে।
অন্যদিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা সম্মিলিতভাবে অবরোধ করে রেখেছে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক। যেখানে বিইউপি’র শিক্ষার্থীরাও রয়েছে। আন্দোলনে নেমেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও। এছাড়া দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করছে।
এবারের আন্দোলনে আট দফা দাবি করেছে শিক্ষার্থীরা। আটটি দফা হলো:
১. পরিবহন সেক্টরকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে হবে এবং প্রতিমাসে বাসচালকের লাইসেন্সসহ সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চেক করতে হবে।
২. আটক হওয়া চালক ও সম্পৃক্ত সকলকে দ্রুততম সময়ে সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
৩. আজ থেকেই ফিটনেসবিহীন বাস ও লাইসেন্সবিহীন চালককে দ্রুততম সময়ে অপসারণ করতে হবে।
৪. ঝুঁকিপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় সকল স্থানে আন্ডার পাস, স্পিড ব্রেকার ও ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ করতে হবে।
৫. চলমান আইনের পরিবর্তন করে সড়কে হত্যার সঙ্গে জড়িত সকলকে সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
৬. দায়িত্ব অবহেলাকারী প্রশাসন ও ট্রাফিক পুলিশকে স্থায়ীভাবে অপসারণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৭. প্রতিযোগিতামূলক গাড়ি চলাচল বন্ধ করে নির্দিষ্ট স্থানে বাসস্টপ এবং যাত্রী ছাউনী করার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৮. ছাত্রদের হাফপাস অথবা আলাদা বাস সার্ভিস চালু করতে হবে।