শেষ আট : প্রিমিয়ার লিগের প্রতিদ্বন্দ্বীতায় ভরা সমীকরণ

শেষ আট : প্রিমিয়ার লিগের প্রতিদ্বন্দ্বীতায় ভরা সমীকরণ

  • প্রিমিয়ার লিগ প্রস্তুত প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ শিরোপার লড়াইয়ের জন্য
  • এক ম্যাচ বেশি খেলে শীর্ষে উঠে এসেছে লিভারপুল
  • আন্তর্জাতিক প্রীতিম্যাচ খেলতে সিটির দশ এবং লিভারপুলের তেরোজন ডাক পেয়েছেন জাতীয় দলে

আন্তর্জাতিক বিরতি 

বলাই বাহুল্য লিগের এমন সময়ে আন্তর্জাতিক বিরতি ছন্দ পতনের জন্য যথেষ্ট। যদিও দু’দলেরই মূল দুই তারকা সার্জিও আগুয়েরো এবং মোহাম্মদ সালাহ কেউই যোগ দিচ্ছেন না জাতীয় দলে। সিটির রক্ষণ তারকা লাপোর্তেকেও খেলবেন না ফ্রান্সের হয়ে। দু’দলেই রয়েছে ব্রাজিলিয়ান তারকার আধিক্য। দু’দল থেকেই তিনজন করে উড়াল দিচ্ছেন জাতীয় দলের হয়ে খেলার জন্য। আন্তর্জাতিক বিরতির সবচেয়ে ভয়ানক যে বিষয় সেটি হচ্ছে ইনজুরিতে পড়ার সম্ভাবনা। এছাড়াও কেটে যায় ছন্দ, সুতরাং বলতে গেলে একদম শূন্য থেকেই শুরু করতে হয় সবকিছু। এক পা একদিক সেদিক হলে যেখানে লিগ হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে সে মুহুর্তে এ বিরতি যে দু’দলের কেউই চায়নি বলাই বাহুল্য। সিটির খেলোয়াড়দের মধ্যে জাতীয় দলে ডাক পেয়েছেন দশজন ফুটবলার। যার মধ্যে রয়েছেন জেসাস, স্টার্লিং, সানের মত নির্ভরযোগ্য ফুটবলাররা। অপরদিকে লিভারপুল থেকে ডাক পেয়েছেন তেরো জন। যার মধ্যে রয়েছেন এলিসন, ফিরমিনহো, ভ্যান ডাইক, সাদিও মানেরা। এদের যে কোনো এক জনের ইনজুরিই বিপদ ডেকে আনতে পারে নিজ দলের জন্য।

লিভারপুলের সুবিধা

শুধু মাত্র লিগ এবং চ্যাম্পিয়ন্স লিগে টিকে থাকা লিভারপুলকে একটি বাড়তি সুবিধা দিচ্ছে। তাদের জন্য আরো সুবিধাজনক হয়েছে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ড্রটি। নক আউট পর্বে যদিও সহজ ম্যাচ বলে কিছু নেই, যা এ মৌসুমে পরিষ্কারভাবেই প্রমাণিত; তারপরেও প্রতিপক্ষ পোর্তো হওয়ায় লিভারপুল কিছুটা এগিয়েই থাকবে। এবং কোয়ার্টারের প্রথম লেগটি নিজেদের মাঠে হওয়াটাও ক্লপের দলের পক্ষেই গিয়েছে। মাঝে পথ হারালেও বায়ার্নকে বিধ্বস্ত করায় রেডসদের আত্নবিশ্বাস স্বভাবতই তুঙ্গে থাকবে। লিভারপুলের ক্ষেত্রে সমস্যা হয়ে দেখা দিতে পারে সময় মতো গোল করতে পারার সক্ষমতা এবং শিরোপা নির্ধারণী সময়ে এসে ক্লপের খেই হারিয়ে ফেলার অতীত ইতিহাস। ফেব্রুয়ারি মাসে খেলা পাঁচ ম্যাচের দুটিতে গোল করতে পারেনি ক্লপের শিষ্যরা, যার একটি ছিল লিগে। সে ধারা অব্যাহত রেখে চলতি মাসের শুরুতে এভারটনের সাথে গোলশূন্য ড্র করে শীর্ষস্থান তুলে দিয়েছিলো সিটির হাতে। তবে, রক্ষণ এখনো যথেষ্ট জমাট ক্লপের দলের।

সিটির অসুবিধা 

ইতিহাস সৃষ্টির প্রচেষ্টাই শেষ পর্যন্ত কাল হয়ে যেতে পারে সিটির জন্য। লিগ, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ’র সাথে এফএ কাপের জন্যও লড়াই করছে গার্দিওলার দল। এটিকে লিগ জয়ের ক্ষেত্রে অসুবিধা বলা হচ্ছে এই জন্য যে, লিভারপুল যেখানে বাড়তি কিছু বিশ্রাম পাবে সেখানে এফএ কাপের জন্য সিটিকে আরো বেশি সময় কাটাতে হবে মাঠে। গার্দিওলা যেমনটি বলেছেন, সাম্ভাব্য সব শিরোপার জন্য লড়াই করতে চান তিনি সেটার জন্য এফ এ কাপে পুরো শক্তির দল খেলানোর প্রভাব পড়তে পারে লিগে। প্রতিপক্ষ যেহেতু ব্রাইটন তাই সিটি পরের পর্ব খেলবে এটা সহজেই অনুমেয়। সেটা হওয়া মানেই আরো একটি বাড়তি ম্যাচ খেলা। চ্যাম্পিয়ন্স লিগেও সিটির প্রতিপক্ষ লিভারপুলের চেয়ে কঠিন। স্বদেশের ক্লাব টটেনহ্যাম। এখন চ্যাম্পিয়ন্স লিগকে প্রাধান্য দিতে গেলে লিগে কিছুটা হলেও ছাড় দিতে হতে পারে সিটিকে, যা সুবিধা করে দিবে লিভারপুলের। তবে, গার্দিওলার কিন্তু ইতিহাস রয়েছে মৌসুমের সব শিরোপা নিজের করে নেয়ার। এ দিকটি যদি আশা দেখায় আশংকার দিক হচ্ছে সিটির এ দলটি বার্সার ঐ দলের মত না। সব নৌকায়ই পা রাখতে গিয়ে শেষে সব হারানোর ঝুঁকিও তাই থাকবে। আর, গার্দিওলাকে এমনিতেও চ্যাম্পিয়ন্স লিগকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে কেননা এটি জয়ের স্বপ্নেই তার শরণাপন্ন হওয়া।

ফিকশ্চার কি বলে? 

লিগে দু’দলেরই কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে দুটি ম্যাচে। দু’দলই একবার করে মুখোমুখি হবে স্পার্সদের। এছাড়া সিটির অপর পরীক্ষাটি দিতে হবে ম্যানচেস্টার ডার্বিতে। যেখানে ইউনাইটেড তাদের আতিথ্য দিবে। আর লিভারপুল আতিথ্য দেবে চেলসিকে। লক্ষ্যণীয় যে, রেডসদের দু’টো বড় ম্যাচই নিজেদের মাঠে। এবং চেলসি নামে বড় ক্লাব হলেও চলতি মৌসুমে কিভাবে ধুকছে তা সবাই দেখছে। অপরদিকে সোলসকায়ারের যেন নেতৃত্বে নতুন রূপ পেয়েছে ইউনাইটেড। সে হিসাবেও বলা যায় ফিকশ্চারটা সিটির জন্যই কঠিন।

উপসংহার 

সবদিক দিয়েই বলা যায় এটি লিভারপুলের লিগ শিরোপা খরা ঘুচানোর সেরা সুযোগ। ক্লপ বাহিনী এটি নিতে পারে কি না সেটিই এখন দেখার বিষয়। তবে, যা অবস্থা তাতে জমজমাট একটি সমাপ্তিই যে হতে যাচ্ছে তা বলাই যায়।