একদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভূমিধ্বস জয় এবং বিএনপি জোটের বিপর্যয় বাংলাদেশকে একদলীয় শাসনব্যবস্থার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এই বিস্তর বৈষম্যের জন্য যেমন দায়ী করা হচ্ছে আওয়ামী লীগের দমন-পীড়নকে তেমনি সামনে আসছে বিএনপি’র অক্ষমতাগুলো। সেই বিষয় নিয়ে আল জাজিরা’র মতামত পাতায় কলাম লিখেছেন— নরওয়ের ইউনিভার্সিটি অব অসলো’র সাউথ এশিয়ান স্টাডিজের অধ্যাপক অরিল্ড ইরেংসেন রুদ এবং একই বিশ্ববিদ্যালয়ের পোস্ট ডক্টরাল ফেলো মুবাসর হাসান। এখানে জবান’র পাঠকের জন্য অনুবাদ করেছেন, মাইনুদ্দিন সেজান।
গত ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে ক্ষমতাশীল আওয়ামী লীগের বিশাল ব্যবধানে জয় একটি আশঙ্কা তৈরি করেছে যে, ১৬ কোটি মানুষের এদেশ কি একদলীয় শাসনব্যবস্থায় পরিণত হয়েছে?
একদিকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন জোট তার ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জয় পেয়েছে, অন্যদিকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন প্রধান বিরোধী দল পেয়েছে মাত্র ৭টি আসন। বিএনপি’র এই হতাশাজনক পরাজয়ে বাংলাদেশের পর্যবেক্ষকদের মনে একটা প্রশ্ন তৈরি করেছে যে, যে দলটি ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে চারটি জাতীয় ও দু’টি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয় লাভ করেছে তারা কি আবার বড় রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হতে পারবে?
বিএনপি’র তার রাজনৈতিক শক্তি পুনরুত্থানে ব্যর্থ হওয়ার তিনটি কারণ বিশ্লেষণ করা হয়েছে:
গণমানুষের সমর্থন হারানো
বিএনপি’র চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া গত প্রায় এক বছর ধরে জেলে। সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান লন্ডনে ১০ বছর ধরে নির্বাসনে। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনার মামলায় তারেক রহমানের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে। অনেক জ্যৈষ্ঠ নেতারা বিভিন্ন মামলায় কারাগারে না হয় আত্মগোপনে রয়েছেন। যদিও বিএনপি নেতাদের অপরাধ সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত নয়। দলটি বারবার বলছে, এসব মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত। তবুও এসব অভিযোগ মিডিয়াতে প্রচার হওয়াতে বিএনপি অনেক জনসমর্থন খুইয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
তদুপরি, বিএনপি ২০১৩ সালে নির্বাচনী পরিবেশ নেই এমন অভিযোগে ২০১৪ সালের নির্বাচন বয়কট করার ঘোষণা দেয়। জামায়াতের সহযোগিতায় হরতাল, অবরোধ ও রাজপথে বিক্ষোভসহ আন্দোলন চালিয়ে যায়। বিএনপি’র বর্জন করা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণ করে সহজে অর্জন করে বড় বিজয়। প্রতিবাদে বিএনপি আন্দোলন অব্যাহত রাখে, বাস পোড়ানো, বোমা হামলা ও জনজীবনে কিছু দূর্ভোগ সৃষ্টির কারণে জনসাধারণ প্রধান বিরোধীদল বিএনপি থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। যদিও এইসব ঘটনার কোন বিচার হয়নি। বরং রাজনৈতিক ফায়দা নেয়ার জন্যই যে এগুলো করা হয়েছে তা পরিস্কার।
২০১৮ সালে বিএনপি শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেয়। বেশিরভাগ নেতা জেলে বা আত্মগোপনে থাকায় এর নির্বাচনী ক্যাম্পেইন ও ভোটের দিন নিজের উপস্থিতি জানান দিতে পারেনি। বিএনপির প্রতি রাষ্ট্রীয় এত অবিচার ও একপেশে আচরণের পরেও জনমনে বিশেষ সহানুভূতি দেখা যায়নি।
এটা বলা হচ্ছে না, যে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে বিএনপি নির্বাচনে জিততে পারত না বা অন্তত বেশি সংখ্যক আসন পেত না। তা সত্ত্বেও বিএনপি ও তার নেতৃবৃন্দ যে অবিচারের সম্মুখীন হচ্ছে জনমনে তার ব্যাপারে অনাগ্রহ এটা ইঙ্গিত করে যে যদি নির্বাচনে বিএনপি জয় লাভ করেও থাকে তবে সেটা হবে সরকারের প্রতি জনগণের ক্ষোভের বহিপ্রকাশ, বিরোধীদলের প্রতি তাদের সমর্থনের কারণে নয়
এটা বলা হচ্ছে না, যে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে বিএনপি নির্বাচনে জিততে পারত না বা অন্তত বেশি সংখ্যক আসন পেত না। তা সত্ত্বেও বিএনপি ও তার নেতৃবৃন্দ যে অবিচারের সম্মুখীন হচ্ছে জনমনে তার ব্যাপারে অনাগ্রহ এটা ইঙ্গিত করে যে যদি নির্বাচনে বিএনপি জয় লাভ করেও থাকে তবে সেটা হবে সরকারের প্রতি জনগণের ক্ষোভের বহিপ্রকাশ, বিরোধীদলের প্রতি তাদের সমর্থনের কারণে নয়।
প্রাসঙ্গিক থাকতে ব্যর্থ হওয়া
দ্বিতীয়ত, বিএনপি গত কয়েক বছর ধরে গণমুখী আন্দোলনগুলিতে তাদের প্রভাব বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। ২০১৩, ধর্মনিরপেক্ষতার উপরে বাংলাদেশ যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তার নীতিগুলো মেনে চলার বা ধর্মনিরপেক্ষতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবিতে ঢাকার শাহবাগে যে বিপুল মানুষের আন্দোলন গড়ে ওঠে। এর কয়েক মাস পর ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তনের দাবিতে ডজন খানেক ইসলামী দল ও সংগঠনের সমন্বয়ে হেফাজতে ইসলাম পাল্টা আন্দোলন শুরু করে । হাজার হাজার মানুষ এই বিপরীতমুখী আন্দোলনের সমর্থনে স্বতস্ফূর্ত ভাবে রাস্তায় নেমে আসে। রাষ্ট্রের মৌলিক মূল্যবোধ ও নীতিমালাগুলো জাতীয় বিতর্কের বিষয় হয়ে ওঠে ।
যাই হোক, বিএনপি এই জাতীয় গণআন্দোলনের সময়ে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করতে পারেনি। একশ্রেণির তরুণরা তাদের বলিষ্ঠ শক্তিতে শাহবাগ আন্দোলন গড়ে তোলে, অন্যদিকে হেফাজত বিএনপি’র সহযোগিতা ফিরিয়ে দেয় যেহেতু কিছু সংঠনের সাথে জোটবদ্ধ হয়ে তারা বেশি শক্তিশালী ভাবছিল। হেফাজত এমন একটি শক্তি যে সংগঠনের প্রভাব রয়েছে সারাদেশ জুড়ে ছড়িয়ে থাকা ২৫ হাজারের বেশি ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।
২০১৫ সাল থেকে তিনটি গূরত্বপূর্ণ তরুণ আন্দোলন হয়েছে। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার উপর সরকারের ভ্যাট আরোপের প্রতিবাদে নো ভ্যাট আন্দোলন, সরকারি চাকরিতে বৈষম্যবিহীন প্রবেশের দাবিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং নিরাপদ সড়ক আন্দোলন। বিএনপি না পেরেছে এসব আন্দোলনে মূখ্য ভূমিকা রাখতে, না পেরেছে এসব বিতর্কে নিজেকে হাজির রাখতে।
২০১৫ সাল থেকে তিনটি গূরত্বপূর্ণ তরুণ আন্দোলন হয়েছে। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার উপর সরকারের ভ্যাট আরোপের প্রতিবাদে নো ভ্যাট আন্দোলন, সরকারি চাকরিতে বৈষম্যবিহীন প্রবেশের দাবিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং নিরাপদ সড়ক আন্দোলন। বিএনপি না পেরেছে এসব আন্দোলনে মূখ্য ভূমিকা রাখতে, না পেরেছে এসব বিতর্কে নিজেকে হাজির রাখতে।
স্বচ্ছ এজেন্ডার অভাব
তৃতীয়ত, বিএনপির স্বচ্ছ এজেন্ডার অভাব। বাংলাদেশের মানুষের চোখে, বিএনপি শুধু ক্ষমতায় যেতে চায় কিন্তু তারা সরকার গঠন করলে কী করবে, কী পরিবর্তন আনবে তার কোন প্রস্তাবনা উপস্থাপন করে না।
ক্ষমতাধারী নেতৃত্বের নিয়মিত পরিবর্তন দেশের জন্য ভাল। কিন্তু প্রধান বিকল্প যদি কোন আকর্ষনীয় প্রস্তাবনা উপস্থাপন করতে না পারে, শুধু ক্ষমতার পরিবর্তনেই জন্য পরিবর্তন চায় তখন এটা জনগণের কাছে গূরত্বহীন হয়ে পড়ে। যা ঘটেছে বিএনপির বেলায়।
তাছাড়া, বিএনপি’র কোন বিশেষ আদর্শিক অবস্থান নেই, এটাও তাকে গূরত্বহীন বিরোধীশক্তিতে পরিণত করেছে। বাংলাদেশের বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল ও সংগঠনগুলো ব্যক্তিকেন্দ্রিক হলেও আদর্শেরও একটা কদর আছে। এমনকি ক্ষমতাসীন আওয়ামা লীগেরও একটা (জাতীয়তাবাদী) আদর্শ আছে , যেটির বয়ান গড়ে ওঠে, মুক্তিযুদ্ধে দলটির গূরত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা জনগণের কাছে প্রচার করার মধ্য দিয়ে।
অপরদিকে বিরোধীরা বারবার আক্রমন করে বলেন যে, বিএনপি কোন লিগ্যাসির উপর গড়ে ওঠেনি যে, এরা আদর্শ গড়ে তুলবে কীভাবে? এর উত্থানই হয়েছে জগাখিচুড়ি উপাদানের মাধ্যমে; সে সকল বাম রাজনীতিবিদ যারা আওয়ামী জাতীয়তাবাদে অসন্তুষ্ট, ইসলামী পুনরুজ্জীবনের জন্য মুখিয়ে থাকা ডান রাজনীতিদি, সুবিধাবাদী ও পাকিস্তান আমলের প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব যারা স্বাধীনতা পরবর্তী শাসকের দ্বারা একপেশে হয়ে পড়েছিলেন, এমনিই একদল লোকের সংমিশ্রনে গঠিত হয়েছে বিএনপি।
২০১৮ নির্বাচনী ক্যাম্পেইনে বিএনপি’র দু’টি প্রতিজ্ঞা ছিল: বেগম জিয়াকে মুক্ত করা, আর নির্বাচন পদ্ধতির সংস্কার। আপাতদৃষ্টিতে মনে হয়, খুব বেশি মানুষ খালেদার জেলে থাকার ব্যাপারে উদ্বিগ্ন নয়। তিনি একজন রাজনীতিবিদ, সব রাজনীতিবিদই দুর্নীতিবাজ, এমনই মনে হয় জনসাধারণের সেন্টিমেন্ট। আর মিডিয়া সরকারের সহযোগী হিসেবে প্রতিনিয়ত বিরোধী দলের নামে এইসব প্রচার করে জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি করতে পেরেছে। মানুষ আর মামলার ন্যায্যতা বা বিচরের বিষয় নিয়ে কথাই বলতে সুযোগ পাচ্ছে না।
বেশির ভাগ মানুষ মনে করে, নির্বাচন পদ্ধতি সংস্কারে ব্যাপারে বিএনপি তার সুযোগ হারিয়েছে। যদিও বেশিরভাগ ভোটারই চায় সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন। ২০১৩-১৪ সালে নির্বাচন পদ্ধতি সংস্কারের কাজটিও শেষ হয়নি। যেটি জনজীবনে অনেক ভোগান্তি বয়ে এনেছিল, বেশির ভাগ মানুষ মনে করে বিএনপি দেশের নির্বাচন পদ্ধতি ঠিক করতে আর সক্ষম নয়।
একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন বিএনপিকে হয়তো ক্ষমতায় নিয়ে আসতে পারে। কিন্তু অনেক ভোটারের কাছে এর মানে দাঁড়ায় এমন কিছু মানুষকে ক্ষমতায় আনা যারা অতীতে নিজেদেরকে যোগ্য প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এই কারণে যখন শাসক দল ও বিএনপির মধ্যে বেছে নেওয়ার কথা আসে অনেক বাংলাদেশি নিজেদের জিজ্ঞেস করে, “বিএনপি এমন কী করতে পারে, যা এখন আওয়মী লীগ করছে না?
একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন বিএনপিকে হয়তো ক্ষমতায় নিয়ে আসতে পারে। কিন্তু অনেক ভোটারের কাছে এর মানে দাঁড়ায় এমন কিছু মানুষকে ক্ষমতায় আনা যারা অতীতে নিজেদেরকে যোগ্য প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এই কারণে যখন শাসক দল ও বিএনপির মধ্যে বেছে নেওয়ার কথা আসে অনেক বাংলাদেশি নিজেদের জিজ্ঞেস করে, “বিএনপি এমন কী করতে পারে, যা এখন আওয়মী লীগ করছে না?”
অপরাজেয় নয় আওয়ামী লীগ
তো এখন কী? আওয়ামী লীগ সফলভাবে রাষ্ট্রে আস্তানা গেড়ে বসেছে এবং বাংলাদেশি রাজনীতির দ্বি-দলীয় ঐতিহ্যকে অস্থিতিশীল করে দিয়েছে। তাছাড়া, দেশটি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও মানব উন্নয়ন সূচকেও কিছু কিছু উন্নতি করেছে। জনগণের আস্থা পুনর্স্থাপন এবং সর্বশক্তিশালী আওয়ামী লীগকে টপকানোর কি কোন সম্ভাবনা বিরোধী দলের আছে? আপাতত না।
বাংলাদেশ এখনো অপরিপক্ক ইন্ডাস্ট্রি, উন্নয়ণের নামে বাড়ছে অসমতা, বিশাল সংখ্যক সম্পূর্ণ ও অর্ধ-বেকারত্ব। অন্যদিকে বিদেশিদের চোখে দেশে গড়ে ওঠা জঙ্গিবাদী হুমকি, শরণার্থী সংকট, সীমান্ত সমস্যা, দূষণ সমস্যায় জর্জরিত একটি দেশ।
এটা বিশ্বাস করার যুক্তি আছে যে, সরকারি দলের সুনিপুণ পারফরম্যান্স দেশটির সেনাবাহিনী, আমলাতন্ত্র, পুলিশি শক্তির উপর দাঁড়িয়ে আছে। যে শক্তিগুলো আসলেই প্রভাবক ভূমিকা রাখে।। যেকোন অর্থনৈতিক সংকট বা রাজনৈতিক ভুল চাল শেখ হাসিনার দলের আনুকূল্য খুইয়ে দিতে পারে, হারাতে পারে তার ক্ষমতা।
এটা বলা যাবে না যে, ক্ষমতাসীনদের প্রকৃত জনসমর্থন আছে। এটা তাদের জন্যও উদ্বেগজনক। অধিকাংশ মানুষ আওয়ামী লীগকে এই বিশ্বাসে বেছে নেয় না যে তারা তাদের বিশ্বাসের প্রতিদান দেবে। বরং মন্দের ভিতর থেকে ভালোটা বেছে নিয়েছে।
এটা বলা যাবে না যে, ক্ষমতাসীনদের প্রকৃত জনসমর্থন আছে। এটা তাদের জন্যও উদ্বেগজনক। অধিকাংশ মানুষ আওয়ামী লীগকে এই বিশ্বাসে বেছে নেয় না যে তারা তাদের বিশ্বাসের প্রতিদান দেবে। বরং মন্দের ভিতর থেকে ভালোটা বেছে নিয়েছে।
বাংলাদেশ ১৬ কোটি মানুষের দেশ। এখানে রয়েছে বামপন্থী, রক্ষণশীল, শহুরে নাগরিক ও প্রান্তিক গ্রামীণ মানুষ। আরও রয়েছে সমাজতান্ত্রি, ইসলামপন্থী, সংখ্যালঘু, পরিবেশবাদী এবং নারীবাদী কর্মী। এই সময়ে এসব নানান চিন্তা-ধারার মানুষের কোন নির্দিষ্ট রাজনৈতিক প্রতিনিধি নেই। তাই তারা আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়।
এই নানান ধারার মানুষকে একই ছাতার নিচে বেশিক্ষণ রাখা সম্ভব নয়, বিশেষত যখন এ দেশের সম্পদের পরিমান সীমিত। এছাড়াও রাজনৈতিক শ্রেণি, রাষ্ট্রের বৈধতার অভাব, ব্যাপক দুর্নীতি, মেধা পাচার, দুর্বল অবকাঠামো, ঘন বস্তিতে বিপর্যস্ত রাজধানীর মতো বিষয়গুলোতে হতাশা প্রকাশের সুযোগ রয়েছে।
ক্ষমতাসীনদের একচ্ছত্র আধিপত্য থাকা সত্ত্বেও সরকারের ভুল তুলে ধরা, গণমানুষের গভীরে প্রোথিত ক্ষোভের বাস্তবসম্মত সমাধান, বাংলাদেশি নির্বাচন পদ্ধতিতে নিজের প্রভাবশালী জায়গা করে নেওয়ার ক্ষেত্রে বিরোধী দলগুলোর এখনো যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। নির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যমুখী তারুণ্যনির্ভর বিরোধী শক্তি দূরদর্শিতা ও রাজনৈতিক দক্ষতা ব্যবহার করে অপ্রতিনিধিত্বশীল কিন্তু রাজনৈতিকভাবে সচেতন গণমানুষকে আন্দোলনে সম্পৃক্ত করতে পারে। সহজতর করতে পারে পরিবর্তন।
শুধু এই কারণে বিরোধীদল ব্যর্থ হয়নি যে, তারা সরকার কর্তৃক নির্যাতিত হয়েছে, বা তাদের নীরব করে রাখা হয়েছে। এটা ব্যর্থ হয়েছে পূর্বের অদূরদর্শি নেতৃত্ব, অনুপ্রেরণামূলক এজেন্ডা উপস্থান করতে না পারার ব্যর্থতা এবং দেশকে নতুন পথে চালানোর রূপরেখা প্রণয়নে অক্ষম হওয়ায়।
এখনো বাংলাদেশে একটি পরিবর্তনের সুযোগ রয়েছে। কিন্তু বিএনপি সে সুযোগ কাজে লাগাতে পারছে না!