আই ছি!ছি!!

আই ছি!ছি!!

মেলাদিন আগের একটি ঘটনার জিকর করে এ লেখার আনজাম করি। তখন এটিএম নামক বস্তু নয়া নয়া জেঁকে বসেছে যত্রতত্র। তো, আমাদের এলাকাও বাদ গেলো না। এটিএম কি বা এটি কি কাজে আসে তার চেয়ে বেশি আগ্রহ ছিল আমার এটিএম বুথের সামনে বসে থাকা আদমিটিকে নিয়ে। লিকলিকে গড়নের এক আদমি ঢাউস সাইজের এক বন্দুক নিয়ে ব্যস্ত বুথ রক্ষার কাজে।

মানুষের মন, বোঝেনই তো কৌতুহলের সীমা নাই। একদিন ঠিক করলাম সে আদমির সাথে বাতচিত করবো। যে ভাবা সেই কাজ। কথায় কথায় জানতে পারলাম তার হাতের যে বন্দুক, যা দিয়ে তিনি যাবতীয় হম্বিতম্বি করেন তা আদতে কাজ করে না। এটি মূলত তাকে দেয়া হয়েছে খফ পয়দা করার জন্যি। তা, এমন জিনিস হাতে পেলে যা হয় আরকি, তিনিও কারণে অকারণে বন্দুকের ফায়দা নিয়ে খফ পয়দায় ব্যস্ত সময় কাটাতেন। বিপত্তি বাঁধলো তখনই, যখন বুথ লুটের মাশিয়াত নিয়ে কিছু মরদ তার উপর হামলা চালালো। গুলিবিহীন বন্দুকে হম্বিতম্বি করা যায় হতশ্রীদের সাথে, সবার সাথে না।

তো, আন্তর্জাতিক ক্রীড়া বিশ্বেও এমন একটি বুথ রয়েছে, যার কেতাবী নাম আবার বেশ গালভরা; ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল, সংক্ষেপে আইসিসি। বুথ তো তাও টাকা তোলার কাজে আসে, এই ছি! ছি!! র কাজটা কি খোদা মালুম। এটি দেখভাল করার জন্যি রীতিমত কমিটি বসানো হয়েছে গালভরা সব পদ পদবি দিয়ে। তাদের কম্মো যে কি, সেটা তারাই ভালো বলতে পারবেন।

এই আইসিসির কর্তাদেরও একটি অস্ত্র রয়েছে, সেটার নাম হচ্ছে আইন। এক এটিএম বুথের রক্ষা কর্তা বন্দুক হাতে পেয়ে হম্বিতম্বি করে যখন একাকার করে ফেলছে সেখানে কেতাদুস্তর পোষাকে সুরম্য ভবনে বসে আইসিসি’র কর্তারা কিছু করবেন না, তাই হয় নাকি? তারাও করেন। কিন্তু কি করেন, কেন করেন তার কোনো ব্যাখ্যা নাই। জেরার মুখে এরা কাচুমাচু হয়ে যায়, আউড়ে যায় মুখস্ত কিছু কথাবার্তা।

নিকট অতীতে ইংলিশ অল রাউন্ডার মঈন আলি ফিলিস্তিনে ইসরাইলের আগ্রাসনের প্রতিবাদে সেভ গাজা লেখা রিস্ট ব্যান্ড পরে মাঠে নেমেছিলেন। কর্তার পদে যখন আসীন, কর্মতো দেখাতে হয়, আইসিসি দিলো মঈন আলীকে শাস্তি দিয়ে। অপরাধ? খেলার মধ্যে রাজনীতি টেনে আনা! এরপর আফ্রিকান স্পিনার ইমরান তাহিরও পড়লেন শাস্তির মুখে। তার অপরাধ? বিমান দুর্ঘটনায় নিহত তাবলিগ ব্যক্তিত্ব জুনায়েদ জামশেদের স্বরণে জার্সির নীচে টি-শার্ট পরা!

রিস্ট ব্যান্ড পরিহিত মঈন আলী

রাজনীতি আর খেলাকে আমরা আলাদা রাখতেই ভালোবাসি। তাই এ নিয়ে উচ্চবাচ্চ হয়নি। তবে, আইসিসি’র মুরোদ যে কতটা সেটা দেখার পর কিছুটা তাজ্জব বোধ করছি। রিস্ট ব্যান্ড আর টি শার্ট পড়ায় আইসিসির পোষাক রীতি লঙ্ঘন হলেও পুরো ভারত দল যখন আর্মি টুপি সমেত মাঠে নেমে গেলো সেটা নাকি আইসিসির জ্ঞাতসারে, সমর্থনেই হয়েছে। দুটো দেশ যখন যুদ্ধ যুদ্ধ অবস্থায় রয়েছে তখন এমন কর্ম কতটা উস্কানিমূলক হতে পারে তা তো বেবোধেও বোঝে। বোঝে না আইসিসির কর্তারা। অবশ্য তারা এমনিতেও তো বেবোধই।

যে সংস্থা একটি দল বিনা কারণে সিরিজ খেলতে অস্বীকৃতি জানানোর পরেও শাস্তি দেবার ক্ষমতা রাখে না তাদের কাছে কে কি আশা করে আমার জানা নাই। সুরম্য অট্টালিকায় ফ্রিতে এসি খাওয়ানোর জন্য কতগুলো অপদার্থকে পুষবার কোনো মানে হয় না। গাজার বিষয়টা যদি রাজনৈতিক হয় পুলওয়ামারটা কেমন করে হয় না কেউ বোঝাবেন আমাকে? ভারতের ক্রিকেটাররা নাকি সেদিনের ম্যাচ ফি শহিদ সৈনিকদের সাহায্যে দান করেছেন। বাহবা জানাই। সেটার জন্য আর্মি ক্যাপ কেন পরতে হবে? আর আইসিসিই বা কি করে সেটি অনুমোদন দেয়?

আজকে যদি পাকিস্তান একই রকম কিছু করে আইসিসির ভূমিকা কি একই থাকবে? মঈন আলী নিজেকে অভাগা ভাবতেই পারেন, রিস্ট ব্যান্ডের বদলে আর্মি টুপি বা উর্দি পরে মাঠে নামলে এ শাস্তি তার পেতে হতো না। পুরো বিষয়টাকে ভারতীয় ক্রিকেট দল যে পর্যায় নিয়ে যাচ্ছে তা ন্যাক্কারজনক। খেলোয়াড়রা শান্তির বার্তা বাহক। যুদ্ধের উস্কানিদাতা না। আর এ ঘটনার সত্যতা নিয়ে খোদ ভারতেই সংশয় দেখা দিয়েছে। এমন অবস্থায় এহেন কর্ম ঘটতে দিয়ে আইসিসি নিজেদের অযোগ্যতারই প্রমাণ দিলো আরও একবার।

আর আমরা আইসিসির কাছে আশাই বা করি কেন? সর্বোচ্চ সংস্থা হিসাবে যে ভূমিকা থাকার কথা সেটি পালন করার মুরোদই তো তাদের নাই। দ্বিপাক্ষিক সিরিজে তারা নাকি মধ্যস্ততাকারীর ভূমিকা পালন করে! সর্বোচ্চ সংস্থার কাজ যদি এটা হয় তাহলে তার দরকারটা কি? পিচ নিয়েও সাহস করে কিছু বলার হিম্মত তাদের নাই। দু’চারটা ডিমেরিট পয়েন্ট দিয়েই খালাস। কোন অপরাধের কি শাস্তি সেটা সম্পর্কেও তারা নিশ্চিত না। সত্য বলতে কি আইসিসি কিছু কমেডিয়ানকে গালভরা পদ দিয়ে মোটা অংকের মাসোহারা এবং ফ্রিতে এসির বাতাস খাওয়ার বন্দোবস্ত বৈ কিছুই করতে পারে নাই। ক্রিকেট যেখানে ছড়ায়ে দেয়ার কথা সেখানে তারা বিশ্বকাপের দল কমায়ে আনার মত বৈপ্লবিক! সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে আছে!

পুলওয়ামা ইস্যুর রাজনীতিকরণ করতে গিয়ে ওআইসি’র কড়া এক ধমক খেয়েছে ভারত। আইসিসির সে হিম্মতই নাই। অনেকে মজার ছলে আইসিসি’কে ইন্ডিয়ান ক্রিকেট বোর্ড বলে থাকেন, আমি বলি কি ঐটাও বলার দরকার নাই। যে কর্মের কারণে মঈন আর তাহির শাস্তি পেয়েছে তার চেয়ে বড় কর্ম করেও যখন পুরো দল বর্তে যায় তখন আইসিসি’কে ছি! ছি!! বলাই বেহতার ঠেকে আমার কাছে। সময় এসেছে আইসিসির নাম বদলে ‘আইছি!ছি!!’ রাখার। কর্ম অনুসারে এটাই তাদের প্রাপ্য।

আর ভারতীয় মিডিয়ারও একটা স্যালুট প্রাপ্য। যেসব খেলোয়াড় বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে গিয়েছিলো তাদের বয়ান যে গুরুত্বের সাথে ছাপা হচ্ছে মনে হচ্ছে তারা একেক জন প্রতিরক্ষা বিষয়ক দপ্তরের দুদে সব কর্মকর্তা। এসকল বেখবর না ছাপিয়ে তাদের বরং প্রশ্ন তোলা উচিত ছিল, এত বছর মাঠে কাটানোর পরেও খেলার মূলমন্ত্র তারা শিখতে পারলো না কেন? একজন অবশ্য চেষ্টা করেছিলেন, নভোজৎ সিধু। সেটি করে আদমি পড়েছেন রোষের মুখে। রক্ষা যে, এখন আর তিনি খেলছেন না, নতুবা তার টুইটের জের ধরে আইসিসি বোধকরি তাকেও শাস্তি দিয়ে বসে থাকতো।

যুদ্ধ কখনোই কাম্য নয়। যে খেলোয়াড়রা নির্বোধের মতন এর পক্ষে বলছেন তাদের কিমের কায়দায় কামানের আগায় বসিয়ে গোলা ছোড়া উচিত। তাহলে বুঝতে পারবেন যে এটি কি জিনিস। হুকুমদাতারা তো বাঙ্কারেই ব্যস্ত থাকেন, জীবন যায় সাধারণ মানুষের। এর মধ্যে দু’পক্ষেরই রয়েছে পারমাণবিক বোমা। খোদা না করুণ কেউ যদি তা ছুড়ে বসে হালতটা কি হবে ভেবেছেন? মিডিয়া এটেনশনের জন্য এমন বয়ান মূর্খ্য বৈ কেউ দিতে পারে?

আর সেটিকে উস্কে আইসিসি প্রমাণ করছে তারা কতবড় নির্বোধ। এই ছি! ছি!! ক্রিকেটের কোনো কাজে তো আসেই না, শেষে না কোনো অঘটন ঘটিয়ে সবাইকে জের টানতে বাধ্য করে।