বাংলাদেশের সব মানুষ অন্তত একটি বিষয়ে ঐক্যমতে পৌছতে পেরেছে। আর তা হল, এই সরকারের আমলে কোন সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না।
অনেক নাটকীয়তা পরে আটাশ বছরের মৌনতা ভেঙে ডাকসু নির্বাচন হয়ে গেল গতকাল। ১১ই মার্চ ২০১৯। নিঃসন্দেহে একটি ঐতিহাসিক দিন বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য। তবে কেন ঐতিহাসিক তা একটু বিস্তারিত আলোচনার দাবি রাখে। ২৮ বছর পর ছাত্ররা তাদের প্রাণের সংসদ ফিরে পাচ্ছে, এইজন্যে না। বরং ১৯২৮ সালের প্রথম নির্বাচনের পর থেকে সবচেয়ে কলঙ্কিত একটি ডাকসু নির্বাচন দেখল বাংলাদেশ।
‘জাতীয় কলঙ্ক’ নামের যে বইটা ছাপা হয়েছিল ইতিহাসের ছাপাখানায় তাতে কয়েক পাতা যুক্ত হল মাত্র। নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি, দুর্নীতি, শিক্ষকদের নির্লজ্জ পক্ষপাতিত্ব সব কিছু মিলিয়ে ডাকসু নাটক ছিল রমরমা। ছাত্রলীগের প্যানেল ব্যতীত সকল প্যানেল বয়কট করে এই নির্বাচন। ফলাফল? কোটা আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের প্যানেল থেকে ভিপি নির্বাচিত করা হয় নুরুল হক নুরকে। সাধারণ সম্পাদকসহ সকল পদেই জয়ী হয় ছাত্রলীগ। টিভি, কাগজের হেডলাইন হয় “নুর ভিপি, জিএস গোলাম রাব্বানী”। নির্বাচন বয়কট করলেও ভিপি হয়েই সন্তুষ্ট নন তিনি। বরং নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গিকার ব্যক্ত করেন নব নির্বাচিত ভিপি নুর। অন্যদিকে ছাত্রলীগ পুনঃনির্বাচনের দাবি তোলে! কারণ ভিপি পদের লোভটা ছাড়তে পারছে না। এই বলি— মানতে পারছে না।
এমন নাটকীয় মুহূর্ত দেখার জন্য জাতি তৈরি ছিল না। এরপরে তবুও বাম-ডান মিলে সবাই ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কিছুক্ষণ পরেই আবার সব কিছু ভুলে আলিঙ্গনপূর্ণ মুলাকাত হয় ছাত্রলীগ সভাপতি শোভন ও নব্য ভিপি নুরের। ব্যস নাটকের সমাপ্তি। মনে করা হল, এতো সুলতান মনসুর সিনড্রোম। কিন্তু নাটক তখনও বাকি।
এর মাঝে ৩০-৪০ জনের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, হামলা, ভোট চুরি সকল কিছুকেই শুভেচ্ছা ভরে ন্যায্যতা দেয়া হয় ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে। এরপর আবারো ঘণ্টা খানেকের বিরতি। তারপর প্রগতিশীল ছাত্রজোট এবং সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ আন্দোলনের নেতারা আবার কিছুটা ভিন্ন সিদ্ধান্তের আভাস দেয়। তারা জানায় ভিপি হিসেবে শপথ নেওয়া নুরের একান্ত ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত! নুরকে তবে কি একঘরে করার চেষ্টা নাকি একটা কৌশলে প্রেসার ক্রিয়েট করার চেষ্টা? এরপরের সংবাদ ‘নুর আবার ডাকসু নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন! ঠাকুমার ঝুলির “গা ছম ছম কি হয় কি হয়” এর মত অবস্থা। অমীমাংসায় মীমাংসিত হয় ঐতিহাসিক ডাকসু নির্বাচন নাটক। নুরের সিধান্ত এখনও পরিস্কার ভাবে জনগণ জানতে পারেনি। তবে যেখানে এই নাটকের বিরতি দেয়া হয়েছে তাতে পজেটিভ একটা মুড আছে। অন্যদিকে মিডিয়ার খবরে দেখা গেছে নির্বাচিত ভিপি নুরকে আক্রমন করা হলে টিএসসিতে ছাত্রদল পাল্টা ধাওয়া করে ছাত্রলীগকে সরিয়ে দেয়। এটা একটা নতুন ডাইমেনশন এই নাটকে। এবং এর রাজনৈতিক গুরুত্ব অনেক। এর মধ্যদিয়ে ছাত্রদলের ঢাবিতে অবস্থান নিয়মিত হলে জাতীয় রাজনীতির জন্য এটা সুসংবাদ বয়ে আনতে পারে। তবে সেই সম্ভাবনা নির্ভর করছে নেতাদের দূরদর্শী কৌশলের বাস্তবায়ণ কতটা সফল ভাবে করা যায় তার উপর।
জাতীয় নির্বাচনের ঘটন-অঘটন বা শুধুই অঘটন সবারই মনে আছে নিশ্চয়। শুরু হয়েছিল যুক্তফ্রন্ট দিয়ে। নেতৃত্বে ছিল ড. কামাল-বি. চৌধুরী। সেখানে যুক্ত হয় বিএনপিসহ বিশ দল। চেতনায় চিরতার জলে ভেসে যায় বি চৌধুরীর বিকল্পধারা। শুরু হয় নতুন ঐক্য প্রক্রিয়া। নাম হয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। বিএনপি ড. কামালের নেতৃত্বে নির্বাচনে আসে। শুরু হয় প্রচার-প্রচারণা। তবে ঐ হামলা মামলায় জর্জরিত হয়ে। এমনকি নির্বাচনী প্রচারণায় হামলার স্বীকার হয়েছেন নারী প্রার্থীরাও! এরপরেও চলেছে নির্বাচনী কাজ কারবার। ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন হয়েছে। দিনে নয় রাতে। ভোট পড়েছে তবে ভোটারের না গুণ্ডা লাঠিয়াল আর প্রশাসনের।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র না হয়েও ডাকসু নির্বাচন নিয়ে কেন এতোটা আগ্রহ নিয়ে লিখছি সেই প্রশ্ন করার অবকাশ আর নিজের কাছে নাই। তবে এই প্রসঙ্গে আর কথা না বাড়ানই ভালো। তবে, জাতীয় নির্বাচন (পূর্ববর্তী ও পরবর্তী) কয়েকটা সমীকরণ মেলানোর চেষ্টা করব আজকে।
জাতীয় নির্বাচনের ঘটন-অঘটন বা শুধুই অঘটন সবারই মনে আছে নিশ্চয়। শুরু হয়েছিল যুক্তফ্রন্ট দিয়ে। নেতৃত্বে ছিল ড. কামাল-বি. চৌধুরী। সেখানে যুক্ত হয় বিএনপিসহ বিশ দল। চেতনায় চিরতার জলে ভেসে যায় বি চৌধুরীর বিকল্পধারা। শুরু হয় নতুন ঐক্য প্রক্রিয়া। নাম হয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। বিএনপি ড. কামালের নেতৃত্বে নির্বাচনে আসে। শুরু হয় প্রচার-প্রচারণা। তবে ঐ হামলা মামলায় জর্জরিত হয়ে। এমনকি নির্বাচনী প্রচারণায় হামলার স্বীকার হয়েছেন নারী প্রার্থীরাও! এরপরেও চলেছে নির্বাচনী কাজ কারবার। ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন হয়েছে। দিনে নয় রাতে। ভোট পড়েছে তবে ভোটারের না গুণ্ডা লাঠিয়াল আর প্রশাসনের। নিরব ছিল সেনাবাহিনী। এর মাঝে নির্বাচনে ব্যাপক ভরাডুবি। বিএনপিসহ গোটা দেশ অবাক। এমন নিরব ও শান্তিপূর্ণ ডাকাতি দেখে জাতি বিষ্মিত।
এখন প্রশ্ন আসতেই পারে বিএনপি তো এখনও টিকে আছে নিঃশেষ হয় কিভাবে? বা অনেক সমর্থক তেড়ে এসে ‘ফিনিক্স’ পাখির উদাহরণ দেবেন জানি। তবে সত্যি কথা বলতে কি, এখন এটা অনেকের কাছেই পরিস্কার যে, খুবই সুকৌশলে বিএনপিকে ঐক্যফ্রন্টের খাঁচায় বন্দি করাটা একটি ফ্যাসিস্ট প্রজেক্ট ছিল মাত্র। সুলতান মুনসুরের বর্তমান পরিস্থিতি তাই প্রমাণ করে। যদিও সুলতান মুনসুরকে গণফোরাম থেকে বহিস্কার করা হয়েছে তবুও হিসেব কিন্তু একই। এতো কিছুর পরেও মাঠের আন্দোলন নয় বরং মিডিয়া বিপ্লবেই বেশি ব্যস্ত এরা। অন্যদিকে ঐরকম একটা দল থেকে কে বহিস্কার করল না করল, সংসদ সদস্য হওয়ার পর সেটা কে দেখতে যায় বলুন। মোট কথা বিএনপি বাংলাদেশের একমাত্র আদর্শিক জাতীয়তাবাদী শক্তি। তারা বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী। আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে যে জাতীয়তাবাদের কথা বলা আছে তা ‘বাঙালি’ জাতীয়তাবাদ। ৭১’র পর এরকম চেতনা সম্পূর্ণ মুক্তিযুদ্ধ পরিপন্থি। কারণ একাত্তরে স্বাধীন হয়েছে বাংলাদেশ। অবিভক্ত বাঙালি জাতি নয়। আর এ কারণেই আওয়ামী ফ্যাসিজমকে স্থায়িত্ব দেওয়ার একমাত্র কৌশল ছিল বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করা। সীমাহীন দূর্নীতি, লুটপাট, রাষ্ট্রীয় ও সাংগঠনিক সন্ত্রাসের মাধ্যমে এই সরকার যখন সাধারণ মানুষকে হতাশায় নিমজ্জিত করে তুলেছিল তখনই তারা বুঝতে পেরেছিল এখন মানুষ আর তাদের পক্ষে নেই। গত বছরের কোটা সংস্কার আন্দোলন ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলন তারই প্রমাণ। মানুষের সামনে একমাত্র বিকল্প তখন বিএনপি। সুতরাং খুব ভালোভাবেই বলা চলে হঠাৎ করে ড. কামালের সাথে বিএনপির ঐক্য এবং কামালের নেতৃত্বে নির্বাচনে যাওয়া সব কিছুই ছিল ছকের অংশ। বর্তমান ফ্যাসিজমের নান্দনিক একটি প্রজেক্ট বা প্রকল্পরূপেই এই জোট উন্মচিত হচ্ছে পদে পদে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নামে যে প্রহসন হয়েছে এরপর সরকারের প্রধান কাজ ছিল আন্তর্জাতিক মহলে এই নির্বাচনের ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা করা। সেটা মোটেও সম্ভব হয়ে ওঠেনি। আলজাজিরা’য় দেওয়া ড. গওহর রিজভীর সাক্ষাৎকারই তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ। এখন ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা করা যখন সম্ভব হয়নি তখন একটি মাত্র পথই খোলা ছিল। এমন একটি বিরোধী শক্তি তৈরি করা যারা মুখে বিরোধিতার ফ্যানা তুলবে ঠিকই তবে সেটা ঘরে বসে ক্যামেরার সামনে। রাজপথে নামতে অপারগ এমন একটি বিরোধী শক্তির ব্যপক প্রয়োজন সরকারের যেই ঘাটতি পূরণ করছে বর্তমান কামালের নেতৃত্বে ঐক্যফন্ট।
বিগত সময়গুলোতে সরকার বিএনপির রাজপথের আন্দোলনগুলোকে এমন ভাবে সাবটেজ করতে সক্ষম হয়েছে যে বিএনপির রাজপথের আন্দোলন মানেই পেট্রল বোমা! অথচ পেট্রল বোমার এই সকল সংস্কৃতির ইতিহাস দেখলেই বোঝা যায় এর শুরু কারা করেছে। ৯০ পরবর্তী ইতিহাস এখনও আয়নার মত পরিস্কার। এই পেট্রল বোমা আতঙ্ক ফ্যাসিস্ট শক্তিকে দুটি উপকার করেছে। প্রথমত, বিএনপির প্রতি জনগণের একটি বিরূপ মনোভাব এবং দ্বিতীয়ত, এই উসিলায় গণগ্রেফতারের স্বাধীনতা।
বিগত সময়গুলোতে সরকার বিএনপির রাজপথের আন্দোলনগুলোকে এমন ভাবে সাবটেজ করতে সক্ষম হয়েছে যে বিএনপির রাজপথের আন্দোলন মানেই পেট্রল বোমা! অথচ পেট্রল বোমার এই সকল সংস্কৃতির ইতিহাস দেখলেই বোঝা যায় এর শুরু কারা করেছে। ৯০ পরবর্তী ইতিহাস এখনও আয়নার মত পরিস্কার। এই পেট্রল বোমা আতঙ্ক ফ্যাসিস্ট শক্তিকে দুটি উপকার করেছে। প্রথমত, বিএনপির প্রতি জনগণের একটি বিরূপ মনোভাব এবং দ্বিতীয়ত, এই উসিলায় গণগ্রেফতারের স্বাধীনতা। এতটা আত্মবিশ্বাসী হয়ে আমি এই কথাগুলো বলতে পারতাম না যদিনা নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে ছাত্রলীগ কর্মীদের আন্দোলনকারীদের ভেতর ঢুকে তাণ্ডব চালাতে না দেখতাম। এরপর বিএনপিকে নির্বিষ করার মাধ্যমে পরোক্ষভাবে বাধ্যকরা হয়েছে আওয়ামী লীগের ছায়া সংগঠনের সাথে নির্বাচনী জোটে যেতে। নির্বাচনের পূর্বে যেমন তেমন নির্বাচন পরবর্তী সরকারকে টিকিয়ে রাখতেই সহায়তা করছে ঐক্যফ্রন্ট নামের এই বিষফোঁড়া। এতে বিএনপি রাস্তায় নামার সাহস পাচ্ছে না এবং এর যে ২০ দলীয় জোট, তাদের হতাশায় তিলে তিলে ধ্বংসের দিকে ধাবিত হচ্ছে বিএনপি। এরকম একটি দলকে বিলীন করে দিলেই অনায়াসে আরো ১৫-২০ বছর ক্ষমতায় টেকার স্বাদ তাদের পূর্ণ হবে। এর একমাত্র কারণ বিএনপিকে দূর্বল করার মাধ্যমে তারা যে রাজনৈতিক শূন্যতা সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে তা দূর হতে অনেকটা সময় ব্যয় হবে। আর এতে নতুন কোন রাজনৈতিক শক্তিরও উত্থানের কোন সম্ভাবনা থাকছে না। আর থাকলেও ছোট ছোট দল বা আন্দোলিত গোষ্ঠিকে থামাতে গুমখুন’র ব্যবস্থা তো রয়েছেই।
এমন পরিস্থিতিতেই চারিদিক ডাকসু ডাকসু রব। এর মাঝে এতকিছু কেন বলছি? এর কারণ খুবই স্পষ্ট। ছাত্র রাজনীতিতেও একই ঘটনা ঘটছে। Manipulative ruling এমন নিপুনভাবে ডাকসু নির্বাচনকে হাত করা হয়েছে যেন ধরি মাছ না ছুই পানি। কোটা সংস্কার আন্দোলনের পর নুরকে যেভাবে আলোকিত করা হয়েছে তার প্রধান কারণও ছিল ঐ Manipulation। ছাত্র রাজনীতিতে ছাত্রদল-লীগ বাদেও আর একটি ধারা আছে বাম ধারা। বাম সংগঠনগুলো সংখ্যায় নগণ্য হলেও এদের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে ছাত্র রাজনীতিতে। স্বাধীনতা পরবর্তী ছাত্র সংসদ নির্বাচনেও এদের প্রভাব লক্ষণীয়। এখন ঢাবিতে যেহেতু ছাত্রলীগ ব্যতীত অন্য সংগঠনগুলো রয়েছে বা কোটা সংস্কার পূর্ববর্তী ছিল তা সবই বাম এবং দু’একটি মধ্যপন্থি ইসলামী সংগঠন। এরই মধ্যে তৈরি হল সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। এদের কাছেই গেল সাধারণ ছাত্রদের নেতৃত্ব। যেহেতু ছাত্রদল ক্যম্পাসগুলোতে ঢুকতে পারছে না বা (নির্বাচনকালীন) ঢুকতে পারলেও ঐভাবে অবাধে কর্মসূচি পালন করতে পারছে না সেহেতু এই বাম সংগঠন ও কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতাদের দিয়েই তৈরি হল আলাদা আলাদা বিরোধী শিবির। আর এখানেই যত রাজনৈতিক জঞ্জাল। আমরা পূর্বেও দেখেছি নুর-রাশেদদের পরোক্ষভাবেই সমর্থন দিয়ে আসছিল গণফোরাম। এতে লাভটা ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রলীগেরই হয়েছে।
এই Manipulation যেমন ছাত্র রাজনীতিতে করা হয়েছে তেমনি বিএনপিকে ঐক্যফ্রন্ট্রের গর্ভে দিয়ে জাতীয় রাজনীতিতেও একই কাজ করা হয়েছে। বর্তমান ফ্যাসিজমের কাঠামোগত সম্প্রসারণ বা Structural Expansion এভাবেই সুকৌশলে করা হচ্ছে। এতে সরকারের বিরোধী শক্তি থাকবে ঠিকই তবে নিষ্ক্রিয় ও বিষমুক্ত যেন তাদের ক্ষমতায় বিন্দু মাত্র আঁচড় না লাগে
তবে এখানেও কোটা আন্দোলনকারীদের দিকেই একটা ব্যপক সমর্থন গিয়েছে। যারা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে রাজনীতিকে দেখতে চায়। এতে যেটা হয়েছে অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের দিকেই গিয়েছে সাধারণ ছাত্রদের সমর্থন। আর ঐক্যফ্রন্টের দোদুল্যমান নীতির ফলেই বিএনপিও ছাত্রদলকে নির্বাচনের আগে তৈরি করতে পারে নাই। এই কারণেই ছাত্রদলও ছাত্রদের দাবিবে উপেক্ষা করেই নির্বাচনে ভরাডুবির সম্মুখীন হয়েছে ঠিক যেভাবে হয়েছিল বিএনপি জাতীয় নির্বাচনে। এখন উপসংহারে দেখা যাচ্ছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে এমন শক্তি দাড়াচ্ছে যাদের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা নেই এবং তারা কোনভাবেই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নয়। নুরের সাথে ছাত্রলীগ সভাপতির আলিঙ্গনই তার প্রমাণ। আমার নিজের অভিজ্ঞতাতেই এটা শোনা, নুরের একজন সমর্থক বলছিলেন যে, শোভন নুরকে জড়িয়ে ধরতে আসলে নুর কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে গিয়েছিলেন। আমি ঠিক এই কথাটাই বলছিলাম। খুব সুকৌশলে ছাত্রদল এবং বাম সংগঠনগুলোকে সরিয়ে দিয়ে ছাত্রলীগের সামনে এমন প্রতিপক্ষ দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছে যারা কিনা ছাত্রলীগের নেতাদের দেখলে ‘কিংকর্তব্যবিমূঢ়’ হয়ে পড়ে! আবার ছাত্রলীগ এখন এই দাবি করবে যে, নুর মূলত তাদের সংগঠনই করত। তাদেরই লোক। ব্যাপারটা হাস্যকর হলেও খুব সুকৌশলে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়েছে।
এই পাতানো বিরোধিতার মধ্যদিয়ে অবৈধ নির্বাচনকে জায়েজ করা হল। এক ভিপি পদকে বলি দিয়ে সবগুলোতেই ছাত্রলীগকে বহাল রাখা হল। ফলে নিয়ন্ত্রণ সেই একই লীগের কাছে। ফ্যাসিবাদ নিজের পছন্দমতই বিরোধিতার যে রাজনীতি পয়দা করে এটা যে তারই উত্তম উদাহরণ।
এই Manipulation যেমন ছাত্র রাজনীতিতে করা হয়েছে তেমনি বিএনপিকে ঐক্যফ্রন্ট্রের গর্ভে দিয়ে জাতীয় রাজনীতিতেও একই কাজ করা হয়েছে। বর্তমান ফ্যাসিজমের কাঠামোগত সম্প্রসারণ বা Structural Expansion এভাবেই সুকৌশলে করা হচ্ছে। এতে সরকারের বিরোধী শক্তি থাকবে ঠিকই তবে নিষ্ক্রিয় ও বিষমুক্ত যেন তাদের ক্ষমতায় বিন্দু মাত্র আঁচড় না লাগে এবং জনগণও এটা ভেবে নিশ্চিত ও নিষ্ক্রিয় থাকে যে “নাহ, বিরোধী দল তো আছেই তবে তাদের শক্তি নাই।”
তবে রাজনীতিতে শেষ কথা বলার কিছু নাই। নুর যদি ভিপি পদে থেকেও এই ক্ষমতার গোলামির বাইরে নিজের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও সাধারণ ছাত্রদের অধিকারের জন্য আগের মতই মাঠে থাকতে পারে তা হলে যারা তাকে নিয়ে খেলতে আসল সেও তাদের বিরুদ্ধে খেলে দেওয়ার সুযোগ পাবে। কথা হল এই নাটকীয় খেলা সাধারণের পক্ষে যাবে কি না?