সরকারি বিজ্ঞাপন বন্ধ, অভিনব প্রতিবাদে শামিল কাশ্মিরের সংবাদমাধ্যম

সরকারি বিজ্ঞাপন বন্ধ, অভিনব প্রতিবাদে শামিল কাশ্মিরের সংবাদমাধ্যম

বিগত কয়েক বছরে অভিযোগ উঠছিল, ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার কন্ঠরোধ করছে সংবাদমাধ্যমের। বিশেষত, যে-সমস্ত সংবাদমাধ্যম বিজেপি সরকারের সমালোচনা করতে পিছপা হয়নি, রাজশক্তি তাদের ধ্বংস করতে চেষ্টা করছে- সমীক্ষাও সাক্ষ্য দিয়েছে এই বক্তব্যে। সংবাদপত্রের আর্থিক কোষাগার দূর্বল করার মতো অন‍্যায‍্য কাজ করল কাশ্মির প্রশাসন। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি কাশ্মিরের পুলওয়ামায় আত্মঘাতী বিস্ফোরণে ৪৯ জন ভারতীয় সৈনিক নিহত হওয়ার পর ‘গ্রেটার কাশ্মির’ এবং ‘কাশ্মির রিডার’ প্রকাশিত সংবাদ, মন্তব্য মনঃপূত হয়নি কাশ্মির প্রশাসনের। তাই বর্তমানে রাজ‍্যপাল শাসনাধীন কাশ্মির সরকার এই দুই দৈনিক সংবাদপত্রে কোনও বিজ্ঞপ্তি না দিয়েই বন্ধ করে দিয়েছে সরকারি বিজ্ঞাপন। কী কারণে বিজ্ঞাপন বন্ধ করা হয়েছে এবং ভবিষ্যতে যে বিজ্ঞাপন দেওয়া হবে না, সেই মর্মে সংবাদপত্র দফতরে কোনও চিঠি দেয়নি প্রশাসন। কোনও লিখিত বিবৃতি না দিয়ে এভাবে হঠাৎ বিজ্ঞাপন বন্ধের কারণ জানতে প্রশাসনকে জিজ্ঞাসা করা হয় ওই দুই সংবাদপত্রের তরফে। কোনও জবাব না পেয়ে ‘কাশ্মির এডিটরস গিল্ড’ (কেইজি) সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, সরকারি বিজ্ঞাপন বন্ধের প্রতিবাদে প্রথম পাতা ফাঁকা রেখে একদিন প্রকাশিত হবে কাশ্মির থেকে প্রকাশিত সংবাদপত্রগুলি। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১০ মার্চ, রবিবার প্রথম পাতা ফাঁকা রেখে প্রকাশিত হল ‘গ্রেটার কাশ্মির’, ‘কাশ্মির রিডার’, ‘কাশ্মির মনিটর’, ‘কাশ্মির অবজার্ভ’ এবং আরও কিছু সংবাদপত্র। প্রথম পাতায় লেখা হয়, “কোনও অব‍্যাখ‍্যাত কারণে ‘গ্রেটার কাশ্মির’ এব‌ং ‘কাশ্মির রিডার’ সংবাদপত্রে সরকারি বিজ্ঞাপন বন্ধের প্রতিবাদ করা হল।”

সরকারি বিজ্ঞাপন বন্ধের প্রতিবাদে আগেও সোচ্চার হয়েছিল ‘কাশ্মির এডিটরস গিল্ড’। এক বিবৃতি মারফত গিল্ড জানিয়েছিল, “সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করতে সচেষ্ট বর্তমান প্রশাসন। রাজ্যে সংবাদমাধ্যমের প্রতিষ্ঠানগুলিকে ধ্বংস করে দেওয়ার অপচেষ্টা চলছে।” শুক্রবার কেইজি’র তরফে রাজ্য প্রশাসনের কাছে লিখিত জবাবও চাওয়া হয়। গিল্ড মুখপাত্র প্রশ্ন তোলেন, “পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম গণতন্ত্র ভারতে লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি তুঙ্গে। সেই পরিস্থিতিতে কাশ্মিরের দু’টি গুরুত্বপূর্ণ সংবাদপত্রের সরকারি বিজ্ঞাপন বন্ধ রাখা হয়েছে। ভারতের সংবিধানে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় সংবাদমাধ্যমকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়ার উল্লেখ আছে। রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তে সংবিধানের ওই ধারাকে আঘাত করা হয়েছে।”

সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, সরকারি বিজ্ঞাপন বন্ধ করার নেপথ্যে আছেন ‘জম্মু এবং কাশ্মির’ রাজ‍্যের বর্তমান রাজ‍্যপাল সত‍্য পাল মালিক। তার সমালোচনা করে প্রাক্তন মুখ‍্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি নিজস্ব টুইটার হ‍্যান্ডেলে লিখেছেন, ‘‘গ্রেটার কাশ্মির জম্মু-কাশ্মিরের অন্যতম জনপ্রিয় সংবাদপত্র।  তাদের সরকারি বিজ্ঞাপন থেকে বঞ্চিত করার সিদ্ধান্তে আরও স্পষ্ট হল সংবাদমাধ্যমের প্রতি সরকারের আচরণ। বোঝা যাচ্ছে যে, ওদের পক্ষপাতদুষ্ট এজেন্ডা প্রচার করে সাষ্টাঙ্গ প্রণাম করো, গুণগান গাও; নইলে এভাবে দুর্ভোগ পোহাতে হবে।’’ সরব হয়েছেন প্রাক্তন মুখ‍্যমন্ত্রী ওম‍র আব্দুল্লাও। নিজস্ব টুইটার হ‍্যান্ডেলে তিনি লিখেছেন, ‘‘উপত্যকার বাইরে ব্যাপারটা নিয়ে কেউ বিশেষ মাথা ঘামাচ্ছে না। এভাবে বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দিয়ে আদতে সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করতে চাইছে সরকার। আশা রাখি কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য প্রশাসন অবিলম্বে নিজেদের অবস্থান থেকে সরে আসবে।’’

মুদ্রিত সংবাদমাধ্যমে সরকারি বিজ্ঞাপন থেকে আয় হয় মোটা অঙ্কের অর্থ। সরকারি বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দেওয়ায় বিপাকে পড়েছে ‘গ্রেটার কাশ্মির’ এবং ‘কাশ্মির রিডার’। পাতার সংখ্যা কমাতে বাধ্য হয়েছে ওই দুই সংবাদপত্র। শ্রীনগর থেকে প্রকাশিত ‘গ্রেটার কাশ্মির’ নিয়মিত ২০ পাতা থেকে কমিয়ে ১২ পাতা এবং ‘কাশ্মির রিডার’ ১৬ পাতা থেকে কমিয়ে ১২ পাতা প্রকাশ করছে।

উপত‍্যকায় সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক ‘গ্রেটার কাশ্মির’ অতীতেও সরকারি বিজ্ঞাপন থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এই সংবাদপত্রে ২০০৮ সালে সরকারি বিজ্ঞাপন বন্ধ রাখে কেন্দ্রীয় সরকারের ‘ডিরেক্টরেট অব অ্যাডভার্টাইজিং অ্যান্ড ভিসুয়াল পাবলিসিটি’ দফতর। ২০১৬ সালে উপত্যকায় বিজেপি-পিডিপি সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন তিনমাস বিজ্ঞাপন পায়নি ‘কাশ্মির রিডার’। বিজেপি-পিডিপি জোট সরকার ভেঙে গেলে ২০১৮ সালের জুন মাসে জম্মু-কাশ্মিরে রাজ্যপাল শাসন জারি হয়। এবং ছয় মাস পর তার মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে ডিসেম্বর থেকে চালু হয়েছে রাষ্ট্রপতি শাসন। বর্তমানেও প্রশাসনের বিরাগভাজন এই দুই সংবাদপত্র।