সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামীকাল সোমবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বহুল কাঙ্ক্ষিত ডাকসু নির্বাচন। দীর্ঘ ২৮ বছরের বন্ধ্যাত্ব কাটিয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই নির্বাচন ঘিরে চলছে নানান জল্পনাকল্পনা।
আগামীকাল সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত চলবে ভোটগ্রহণ। পূর্বনির্ধারিত সময়ানুযায়ী গতকাল রাত ১২টায় শেষ হয়েছে প্রচার-প্রচারণার শেষ সময়।
জানা গেছে, বর্তমানে ছেলেদের ১৩ ও মেয়েদের ৫ হলে মোট ভোটার রয়েছে ৪৩ হাজার ২৫৬ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ২৬ হাজার ৯৪৪ যা মোট ভোটারের ৬২ দশমিক ২৯ শতাংশ এবং নারী ১৬ হাজার ৩১২ জন; যা মোট ভোটারের ৩৭ দশমিক ৭১ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি (৪ হাজার ৬০৮ জন) ভোটার রয়েছে রোকেয়া হলে এবং সবচেয়ে কম (১ হাজার ৩৪৬ জন) ভোটার রয়েছে অমর একুশে হলে। এর মধ্যে ছেলেদের বিজয় একাত্তর হলে ৩ হাজার ১৫৫, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলে ২ হাজার ৫২, ফজলুল হক মুসলিম হলে ২ হাজার ১৭৫, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে ১ হাজার ৯৮১, জগন্নাথ হলে ২ হাজার ৪৯৬, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হলে ১ হাজার ৭৯৯, কবি জসীমউদ্দীন হলে ১ হাজার ৬৫৮, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের ২ হাজার ৫৭, সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে ১ হাজার ৮১৪, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে ২ হাজার ৩০১, স্যার এ এফ রহমান হলে ১ হাজার ৮৪০, মাস্টারদা সূর্যসেন হলের ২ হাজার ১৭০ জন। এ ছাড়া মেয়েদের বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলে ২ হাজার ২৮৮, বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হলে ১ হাজার ৯২৮, কবি সুফিয়া কামাল হলে ৩ হাজার ৭২৪, শামসুন্নাহার হলে ৩ হাজার ৭৬৪ জন ভোটার রয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, নির্ধারিত সময়ে সুষ্ঠুভাবে শিক্ষার্থীরা যাতে ভোট দিতে পারে, সেজন্য হলগুলোতে পর্যাপ্ত বুথের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোর প্রাধ্যক্ষ ও রিটার্নিং কর্মকর্তা থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে ৩৫, শহীদুল্লাহ হলে ২০, ফজলুল হক মুসলিম হলে ৩৫, অমর একুশে হলে ২০, জগন্নাথ হলে ২৫, জসিম উদ্দীন হলে ২০, মাস্টারদা সুর্যসেন হলে ৩৫, মুহসীন হলে ৩০, রোকেয়া হলে ৫০, কবি সুফিয়া কামাল হলে ৪৫, শামসুন্নাহার হলে ৩৫, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলে ২০, কুয়েত-মৈত্রী হলে ১৯, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে ২২, স্যার এ এফ রহমান হলে ১৬, বঙ্গবন্ধু হলে ২৪, জিয়া হলে ২০ ও বিজয় একাত্তর হলে ৪০টি পোলিং বুথ তৈরি করতে কাজ করছে প্রশাসন।
তেতাল্লিশ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রায় বিশ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থীর বসবাস হলের বাইরে। ভোটের মাঠে এরা হবে মূল ফ্যাক্টগুলোর একটি। এই বিশাল অংশের শিক্ষার্থীর ভোট নিয়ে ভাবতে হচ্ছে প্রার্থীদের। হলে দখলদারিত্ব, কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের মনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগ বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে বলে বলছেন অধিকাংশ অনাবাসিক শিক্ষার্থী। এদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতাকর্মীরা অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের কাছে প্রার্থী হিসেবে আছেন জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের আতিকুর রহমান নামক অনাবাসিক এক শিক্ষার্থী বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের শেষের দিকে ছাত্রলীগের ভূমিকা, নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে তাদের অবস্থান এবং হলগুলোতে দখলদারিত্বের রাজনীতির জন্য অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের ভোট পাওয়া থেকে বঞ্চিত হতে পারে ছাত্রলীগ।
এদিকে ভোটের মাঠে অন্য আরও একটি বড় ফ্যাক্ট মেয়েদের হলগুলোর ভোট ব্যাংক। মোট ভোটারের ৩৭ দশমিক ৭১ শতাংশ নারী, যা সংখ্যায় ১৬ হাজার ৩১২ জন। বেশ কয়েকজন আবাসিক নারী শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছেলেদের হলগুলোর মতো মেয়েদের হলগুলোতে দখলদারিত্বের পরিবেশ তেমন নেই। যার কারণে এই বিরাট অংশের ভোট ব্যাংক নিয়ে ক্ষমতাসীন ছাত্রলীগ খানিক চিন্তায় থাকলেও অন্যান্য প্যানেলের কিংবা স্বতন্ত্র প্রার্থীরা দেখছেন আশার আলো।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সুফিয়া কামাল হলের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা যোগ্য প্রার্থীকেই ভোট দেব। এই ক্ষেত্রে ছেলেদের হলগুলোর মতো আমাদের হলগুলোগে ক্ষমতাসীনদের দৌরাত্ম্য অনেক কম।
ছেলেদের হলগুলোতে ভোট পাওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকবে ছাত্রলীগের প্রার্থীরা। ছেলেদের ১৩টি হলে ছাত্রলীগের শক্ত অবস্থান আছে বলে জানায় সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো। এছাড়া ছেলেদের হলগুলোর গণরুমের শিক্ষার্থীদের ওপর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের প্রভাবের কারণে ছাত্রদের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ভোট পেতে পারে ছাত্রলীগ।