অন্যদের জন্য নিষেধাজ্ঞা, ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বেড়েছে দ্বিগুন, ক্ষুব্ধ জার্মানি

অন্যদের জন্য নিষেধাজ্ঞা, ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বেড়েছে দ্বিগুন, ক্ষুব্ধ জার্মানি

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা নিয়ে ক্ষুব্ধ জার্মানি। দেশটির ইকোনোমিক অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড সাস্টেইনেবল ডেভেলপমেন্ট’র মহাপরিচালক মিগুয়েল বার্জার তার এক টুইট বার্তায় সে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি লিখেছেন, ইরানের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোর বাণিজ্য বেড়ে দ্বিগুন হলেও নিষেধাজ্ঞার জেরে পিছিয়ে পড়েছে ইউরোপ ও এশিয়ার দেশগুলো। মিগুয়েল বার্জার আইএনটিউএক্স’এও কর্মরত রয়েছেন। এই সংস্থাটির দায়িত্ব হলো আমেরিকান ডলারকে পাশ কাটিয়ে তেহরানের সাথে নতুন একটি বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা তৈরি করা। মূলত আমেরিকার নিষেধাজ্ঞাকে পাশ কাটানো।

তিনি ইরানে ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মোট রপ্তানির উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ইউরোপীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর বাণিজ্যে নিষেধাজ্ঞা থাকায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলো সুযোগ নিচ্ছে। তিনি বলেন, “গত দশ বছরে ইরানের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য দ্বিগুন হয়েছে। অন্যদিকে ইউরোপীয় কোম্পানিগুলোকে ইরানের সাথে বাণিজ্য করতে বাধা দেয়া হচ্ছে।”

উল্লেখ্য, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার নির্বাচনী প্রচারণায় ইরানের পরমাণু চুক্তির বিরোধিতা করেন এবং পরবর্তীতে চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। এর ফলে ২০১৮’র মে মাসে ইরানের উপর নতুনভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলে সকল বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সাথে ইরানের বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যায়।

ইউরোপীয় গণমাধ্যমগুলোর সুবাদে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে ইরানের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর তাদের ট্রেজারি দপ্তর ইউরোপের সকল প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগতভাবে ফোন দেয় এবং ইরানের সাথে কোনরকম বাণিজ্য না করতে সতর্ক করে।

জার্মানির একটি সরকারি জরিপ থেকে জানা গিয়েছে, ২০১৮ সালে ইরানের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের মোট বাণিজ্য হয় ৫০৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি ছিলো ৪৩৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের চেয়েও বেশি। অন্যদিকে ইরানের রপ্তানি ছিল ৭০ মিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। গত বছর ইরানের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের মোট বাণিজ্য তারতম্য ছিলো ৩৬৭.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।    এর আগে ২০১৭ সালে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মোট বাণিজ্য ছিল ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। যেখানে ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি ছিল ১৩৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ইরানের রপ্তানি ছিল ৬৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাণিজ্য তারতম্য ছিলো মোট ৭৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের। গত দুই বছরের বাণিজ্যের এমন ফল দেখেই বোঝা যায় ইরানের সাথে যুক্তরাষ্ট্রে বাণিজ্য গত এক বছরে প্রায় পাঁচগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

এই বিশাল বাণিজ্য বৃদ্ধি হয় ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা নবায়নের পর থেকেই। পৃথিবীর যেকোন প্রতিষ্ঠান ইরানের সাথে বাণিজ্য করতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের অনুমতি নিতে হয়। নিষেধাজ্ঞার পর থেকে কোন প্রতিষ্ঠানই সে কারণে ইরানের সাথে বাণিজ্যে যেতে পারছে না।

এদিকে মিগুয়েল বার্জার গত বুধবারে একটি অর্থনৈতিক ফোরামে বসে জার্মানির সকল ব্যবসায়িক নেত্রীবৃন্দের সাথে বৈঠক করেছেন। সেখানে তিনি আইএনএসটিইএক্স’র কার্যকর পরিকল্পনা নিয়ে আলাপ করেন। তিনি বলেন “আমরা আইএনটিইএক্স’র কার্যকর বাস্তবায়ণ নিয়ে আলাপ করব। সেটাই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য।”

আইএনএসটিইএক্স একটি বিশেষ প্রক্রিয়া যার মূল পরিকল্পনায় ছিল ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাজ্য। এতে রাশিয়ারও যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে। এ বছর জানুয়ারিতেই এর মূল প্রক্রিয়া শুরু হয়। ডলার ব্যাতিত ইরানের সাথে বাণিজ্য করাই আইএনএসটিইএক্স’র মূল লক্ষ্য। এর সদর দপ্তর ফ্রান্সের প্যারিসে এবং এর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে জার্মানির ‘জার্মান ন্যাশনাল পার ফিকসার’ সংস্থা যারা জার্মানির কেন্দ্রীয় অর্থনৈতিক সংস্থা কমার্য ব্যাংকের পরিচালনার দায়িত্বে ছিল ২০০৩ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত।

যদিও এই ব্যবস্থা প্রয়োগিক পরিচালনা এখনো শুরু হয়নি। ইউরোপীয় ইউনিয়নের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে জানা গিয়েছে, এই ব্যবস্থা প্রথমে ঔষধ ও খাদ্য সামগ্রীর বাণিজ্যে কাজে লাগানো হবে। অন্যদিকে ইরানের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি জানিয়েছিলেন আইএনএসটিইএক্স কিভাবে কাজ করবে সেটা এখনো তারা ঠিকভাবে জানে না। তবে তিনি ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলোর প্রতি আহ্ববান জানান যেন তারা এই ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেন এবং এই বিষয়টির উপর যথেষ্ট গুরুত্বারোপ করেন।