পেট্রো ডলার পানিতে গেল পিএসজি’র

পেট্রো ডলার পানিতে গেল পিএসজি’র

  • রিয়ালের পর বিদায় নিলো পিএসজি
  • প্রথম লেগে পরাজয়ের পর ফিরে আসার নয়া গল্প লিখলো ইউনাইটেড
  • টানা তৃতীয়বার দ্বিতীয় পর্ব থেকে বিদায় নিলো পিএসজি

এ সপ্তাহটা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের জন্য ছিলো অনিন্দ্য সুন্দর। আয়াক্সের যুবারা রিয়ালকে ফুটবল পাঠ শিখিয়ে বিদায় করে দেবার ঠিক পরেরদিনই পেট্রো ডলারের দল প্যারিস সেন্ট জার্মেইনের বিপক্ষে ফিরে আসার অসাধারণ এক গল্প লিখেছে সোলসকায়ারের শিষ্যরা। দুটি জয়ের মাজেজা দুরকম। টাকার গরমে আচমকাই বড় ক্লাবে পরিণত হওয়া পিএসজি’র বিপক্ষে ইউনাইটের জয়টা ফুটবলের জন্যই আনন্দের।

পিএসজি, সিটির মত ক্লাবগুলো উত্থান ফুটবল বাজারের বারোটা বাজিয়ে ছেড়েছে এতে কোনো সন্দেহ নাই। এ দু’দলের কতিপয় সমর্থকের জন্য বিষয়টি আনন্দের হলেও ফুটবলের জন্য সামগ্রিকভাবে তা নেতিবাচক। হ্যাঁ, কারো যদি টাকা থাকে তবে সে তা খরচ করবে না কেন? কিন্তু এদের আগমনের পূর্বেও ক্লাবগুলোর টাকা ছিল। কিন্তু তার ব্যবহার ছিল ভদ্রচিত।

আপনি যদি সিটির শুরু সময়ের দিকে যান, ইয়াদ থাকার কথা তারা তাদের পছন্দের ফুটবলার জন্য ব্ল্যাংক চেক ইস্যু পর্যন্ত করতে চেয়েছিলো। যা ছিল ফুটবলের জন্য চরম অসম্মানজনক এবং চূড়ান্ত রকমের ঐদ্ধতপূর্ণ আচরণ। সময়ের সাথে সাথে সিটি অবশ্য ফুটবলিয় কার্টেসি শিখছে। কিন্তু পিএসজির ক্ষেত্রে কি তা বলা যায়?

আইনের ফোকর বের করে বিশাল অংকে তারা নিয়ে এসেছে এমবাপ্পেকে। নেইমারকে যে মূল্যে তারা দলে টেনেছে সেটা নিয়ে অনেকেরই আপত্তি ছিল, এখনো আছে। তারা বলতে পারে, আমাদের আছে আমরা করছি, তাতে কার কী? কথা সত্য। কিন্তু তাদের এই করার জাতাকলে পরে অন্য ক্লাবগুলোর অবস্থা কাহিল। এমন অংকের ট্রান্সফারের ফলে বাজারে তৈরি হচ্ছে একটি অস্থিরতা, যেটির ভোগান্তি পোহাচ্ছে সকল দলই, বিশেষ করে মাঝারি মানের দলগুলো।

কৌলিন্যের জন্য এত কিছু তবু অবস্থা করুণ কেন? এ প্রশ্নটি তো যৌক্তিকভাবেই সামনে আসে। পিএসজির ব্যর্থতার অন্যতম সহজ কারণ তাদের ঘরোয়া লিগ। চলতি মৌসুমেও লিগের শীর্ষে রয়েছে নেইমার-কাভানিরা। সেটিও দ্বিতীয় স্থানে থাকা দলের চেয়ে অনেক এগিয়ে। লিগের কোনো প্রতিযোগিতাতেই পিএসজিকে চ্যালেঞ্জ জানানোর মত কোনো দল ফ্রান্সে নেই। এমন জায়গায় নিজেদের শক্তির জায়গা বা দুর্বলতা বোঝা দুষ্কর বটে।

আপনি যদি খেয়াল করেন, দেখবেন পিএসজি তার পুরো মনোযোগ দিয়েছে আক্রমণভাগের তারকা কেনার পেছেনে। সেটি করে তারা লিগে তো সফল হচ্ছে কিন্তু খেই হারিয়ে ফেলছে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে। গ্রুপ পর্ব আর নক-আউট কিন্তু এক না। গ্রুপ পর্বে বড় দলগুলো যেভাবে খেলে নক-আউটে সেভাবে না। ইউনাইটে প্রথম লেগ হেরে যাবার পরেও হাল ছাড়ার দল না। তাদের ইতিহাসই সে কথা বলে। এ জিনিসটিই পিএসজি বুঝতে পারেনি। তারা অনেকটা নিশ্চিত হয়ে গা ছাড়া ভাবে খেলেছে। যার শেষটা হয়েছে বিদায়ের মধ্য দিয়ে।

বড় লিগগুলোতে দলগুলোকে পড়তে হয় কঠিন প্রতিদ্বন্দিতার মুখে। ইউনাইটেডকেই দেখুন, শীর্ষ চারে থাকার জন্য কতটা কষ্ট করতে হচ্ছে তাদের। যেখানে দুর্বলতা পাওয়া যাচ্ছে তার সুযোগ নিতে সামান্য কসুর করছে না লিগের অপর দলগুলো। সেখানে লিগে পিএসজি বুঝতেই পারছে না তাদের সমস্যাগুলো আসলে কোথায়। নক-আউট পর্বে তা প্রকাশ পেলেও কিছুই করা থাকছে না।

সিটির ক্ষেত্রে বিষয়টা গোলক ধাঁধার মত। তারা যে লিগে খেলছে তাতে তাদের প্রতিনিয়ত কঠিন পরীক্ষা দিতে হয়। কোচ হিসাবে রয়েছে বর্তমান সময়ের অন্যতম সফল কোচ পেপ গার্দিওলা। তবু কেন তারা পারছে না তা একটি রহস্যই বটে। টাকার জোরে কূলীন হবার প্রচেষ্টার অগ্রদূত চেলসি তবু একবার জিতেছে শিরোপাটি। কিন্তু, চেলসির সাথে এ দুলের কিছু পার্থক্য রয়েছে। আব্রাহিমোভিচ’র টাকাতেই চেলসি আজকের চেলসি হয়েছে বটে তবে তা এমন নগ্নভাবে না।

চ্যাম্পিয়ন্স লিগটা আট-দশটা লিগের চেয়ে আলাদা। কেন যেন , এখানে শুধু ঐতিহ্যবাহী ক্লাবগুলোই সফল হয়। এদের যে টাকা নেই তা না, কিন্তু ব্যবহারের ক্ষেত্রে এমন বেপোরোয়া না। আপনি চাইলে ইউনাইটের উদাহারণ নিতে পারেন।

ইউনাইটেড আর্থিকভাবে ফুটবলের অন্যতম স্বচ্ছল ক্লাব। তবে, তারা কিন্তু টাকার জোরে সব করতে যায় নি। ইউনাইটেডের সাফল্যের ভিত্তি গড়ে দিয়েছে তাদের যুব দল। যুব প্রকল্প থেকে উঠে আসা খেলোয়াড়দের সাথে বাইরে থেকে আনা কিছু তারকার সমন্বয়েই ইউনাইটেড আজকের ইউনাইটেড। স্যার ফার্গুসন, স্যার বাসবিদের সে সিলসিলা আজো চলমান।

শুধু টাকার গরমে একের পর এক খেলোয়াড় দলে ভেড়ানো তো যায়, তা দিয়ে মিডিয়া কাভারেজও পাওয়া যায় প্রচুর। তবে, সাফল্যের কিছু সূত্র রয়েছে। এগুলোর চর্চা বৈ আজ অব্দি কেউ সফল হয়নি। তাই বিশাল মূল্যের সব খেলোয়াড়দের নিয়েও পিএসজির দৌড় শেষ হয়ে যাচ্ছে সেকেন্ড রাউন্ডেই। যেখানে যুবাদের দিয়ে রিয়ালকে ধরশায়ী করছে আয়াক্স।