মাত্র একমাস হল বিনা অপরাধে কারাভোগ করে মুক্ত হয়েছেন টাঙ্গাইলের পাটকলকর্মী জাহালম। এরই মধ্যে ‘জাহালম ট্রাজেডি’র দায় কার? — তা নিয়ে শুরু হয়েছে ‘দায় চাপানো’র চিরচারিত খেলা। সোনালী ব্যাংকের সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জালিয়াতির অভিযোগে নিরাপরাধ জাহালমকে আসামি হিসেবে চিহ্নিত করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নয় কর্মকর্তা। আর এখন তারাই দাবি করছে, এ ঘটনায় তাদের কোন দায় নেই। সব দায় বাংলাদেশ ব্যাংক সোনালী ব্যাংকসহ পাঁচ ব্যাংকের। তবে হাইকোর্ট সে ‘দায়’ দুদককে নিতে হবে বলে রায় দিয়েছেন।
গতকাল মঙ্গলবার হাইকোর্টে এমনই প্রতিবেদন জমা দিয়েছিল দুদক। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার সঙ্গে জড়িতরা এ ঘটনায় জড়িত বলে মন্তব্য করা হয়েছে প্রতিবেদনে। দুদকের ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের নথির ওপর ভিত্তি করেই ঋণ দেওয়া হয়। তদন্ত কর্মকর্তাদের এ ঘটনায় কোনও দায় নেই।
অন্যদিকে এ ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, ইউসিবিএল ও সিটি ব্যাংককে পক্ষভুক্ত করতে আবেদন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুদকের আইনজীবী।
আজ বুধবার বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ঋণ জালিয়াতির সমস্ত মামলার সব কাগজপত্র দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। সেই সাথে কার ‘দায়’ সে সংক্রান্ত্র বিষয়ে হাইকোর্ট বলেন, ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় কতজন ব্যাংক অফিসারের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে? আমরা সব দেখব। দুদক যখন জানতে পারল জাহালম নির্দোষ, তখন তার জামিন করানো উচিত ছিল। এর দায় দুদকেই নিতে হবে।
এদিকে দুদকের যে নয় কর্মকর্তা এই মামলার তদন্ত করেছিল তাদের প্রত্যেকেরই পদোন্নতি হয়েছে। এই কর্মকর্তাদের আটজনই বর্তমানে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদক প্রধান কার্যালয়ে কর্মরত আছেন। পদোন্নতিও পেয়েছেন তারা। অন্যজন প্রশিক্ষণের জন্য বর্তমানে অস্ট্রিয়ায় গেছেন। দুর্নীতি দমনের জন্য গঠিত একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান যদি তদন্তের জন্য ব্যাংকের অভিযোগপত্রের উপর নির্ভর করে, তাহলে তাদের প্রয়োজনীয়তা কতটুকু সে বিষয়েও প্রশ্ন উঠেছে।