সম্প্রতি ভারত অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মিরের পুলওয়ামাতে আত্মঘাতী হামলায় ৪৯ ভারতীয় রিজার্ভ ফোর্সের সেনা নিহত হওয়ার পর থেকে পাক-ভারত উত্তেজনা অনেক তুঙ্গে ওঠে। ভারতীয় মিডিয়ার যুদ্ধাঙদেহী আচরণ দেখে বোঝা যাচ্ছিল, ভারত এই হামলার জবাব দিবে। ভারতের ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে আকাশচুম্বী প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসে বিজেপির নেতৃত্বে এনডিএ জোট। মোদির “আচ্ছে দিন আনেওয়ালা হ্যায়”— এই স্লোগান তখন ভারতজুড়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। উত্তর ও মধ্য ভারতে বিজেপি ভূমিধ্বস বিজয় লাভ করে। সময় যত গড়াতে থাকল, বিজেপির প্রতিশ্রুতির ফানুস ঢলে পড়তে লাগল। মাস তিনেক আগের হিন্দি হার্টল্যান্ড বলে খ্যাত মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান ও ছত্রিশগড়ে রাজ্যসভা নির্বাচনে বিজেপির ভয়াবহ ভরাডুবি হয়। মধ্যপ্রদেশ ও ছত্রিশগড়ে বিজেপি ক্ষমতায় ছিলেন টানা ১৫ বছর আর রাজস্থানে কংগ্রেসের গত নির্বাচনের চেয়ে ৫ গুণ বেশি আসন নিয়ে সরকার গঠন করে। বিজেপি নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া ও ধনিকশ্রেণির শত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও এ পরাজয় ঠেকানো সম্ভব হয়নি।
হিন্দি হার্টল্যান্ডে পরাজিত হওয়ার পর বিজেপির সামনে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে পুনরায় ক্ষমতা ধরে রাখতে গেলে দরকার অভ্যন্তরীণ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা না হয় পাকিস্তান বিদ্বেষ। ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামা হামলা বিজেপির সামনে নিয়ে আসে সেই সুবর্ণ সুযোগ। বিজেপি নিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যম পেয়ে যায় সবচেয়ে কার্যকর মোক্ষম অস্ত্র। মোদির পালিত ভারতীয় মিডিয়া অনবরত এই রিভেঞ্জ ন্যারেটিভ বিকোতে সদলবলে বলে নেমে পড়ে।
হিন্দি হার্টল্যান্ডে পরাজিত হওয়ার পর বিজেপির সামনে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে পুনরায় ক্ষমতা ধরে রাখতে গেলে দরকার অভ্যন্তরীণ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা না হয় পাকিস্তান বিদ্বেষ। ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামা হামলা বিজেপির সামনে নিয়ে আসে সেই সুবর্ণ সুযোগ। বিজেপি নিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যম পেয়ে যায় সবচেয়ে কার্যকর মোক্ষম অস্ত্র। মোদির পালিত ভারতীয় মিডিয়া অনবরত এই রিভেঞ্জ ন্যারেটিভ বিকোতে সদলবলে বলে নেমে পড়ে। সাংবাদিকতার নীতি-নৈতিকতাকে রীতিমতো ধূলিসাৎ করে তামাম ভারতে একটা যুদ্ধের আবহ তৈরি করে ফেলে।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি রাত ২ টা ৫৫ মিনিটে পাকিস্তানের আকাশসীমায় ঢুকে পড়ে ভারতীয় বিমানবাহিনীর ৬টি মিরাজ-২০০০ যুদ্ধ বিমান। তাদের কাভার দেয়ার জন্য আরও ৬ টি মিরাজ-২০০০ ঢুকে পড়ে পাকিস্তান ভূখণ্ডে। ২ টা ৫৯ মিনিটে পাকিস্তান বিমান বাহিনীর তাড়া খেয়ে ভারত সীমান্ত থেকে পাকিস্তানের ৪৯ কিলোমিটার অভ্যন্তরে বালাকোটের ‘জাব্বা গ্রামে’ ভারতীয় যুদ্ধ বিমান প্লেলোড বর্ষণ করে চলে যায়। ভারতীয় বিমান বাহিনী পাকিস্তান আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে বলে প্রথমেই টুইট করে জানায় পাকিস্তানের আইএসপিআর’র ডিজি মেজর জেনারেল আসিফ গফুর সকাল ৬:৫৫ মিনিটে।
এরপর থেকে ভারতীয় মিডিয়ার তরফ থেকে খবর আসে পাকিস্তানের অভ্যন্তরের ৬০ কিলোমিটার ঢুকে ২১ মিনিট অবস্থান করে তন্ন তন্ন করে খুঁজে ‘জইশ এ মুহাম্মেদ’র জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করে প্রায় সাড়ে তিনশ’ সন্ত্রাসীকে মেরে ফেলা হয়েছে। এ খবর শোনার পর থেকে ভারতজুড়ে আনন্দের বন্যা বয়ে যেতে শুরু করে, অনেককেই মিষ্টি বিতরণ করতে দেখা যায়। সময় যত গড়াতে থাকল, ভারতীয় মিডিয়ার এ দাবি ক্ষয়িষ্ণু থেকে ক্ষয়িঞ্চুতর হতে লাগল। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম অনুসন্ধানী ও সরেজমিনে পরিদর্শন করে ভারতের হতাহত ও ঘাঁটি ধ্বংসের কোন আলামত খুঁজে পায়নি। রয়টার্সের এক সাংবাদিক আবিষ্কার করে ভারতের এ বিমান হামলায় ১৫ টি পাইন গাছ ও ১ টি কাক মরে পড়ে থাকতে দেখা যায়।
১৯৭১ সালের পর এই প্রথম ভারত পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ঢুকে বিমান হামলা করছে তা নিয়ে পাকিস্তানে ক্ষমতাসীন দল ও পাকিস্তান আর্মির ক্যাপাবিলিটি নিয়ে প্রশ্ন তুলতে থাকে সেদেশের সিভিল সোসাইটি। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী তড়িঘড়ি করে জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক ডাকেন। উক্ত বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় পাকিস্তান এ হামলার জবাব দিবে এবং ভারতীয় সাড়ে তিনশ’ সন্ত্রাসী হত্যার দাবিকে মিথ্যে বলে উড়িয়ে দেয়। ২৬ তারিখ সন্ধ্যা থেকে শুরু হয় লাইন অফ কন্ট্রোলে তীব্র গোলাগুলি ও মর্টার শেল নিক্ষেপ। ২৭ ফেব্রুয়ারি সকালে পাকিস্তান এয়ারফোর্সের ৬টি জেএফ -১৭ থান্ডার ঢুকে পড়ে ভারতীয় সীমানায়। ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মির রাজ্যের সেনা ঘাঁটিসহ ৬ টি টার্গেটে হামলা করে বসে। ভারতীয় বিমান মিগ-২১ এবং সুখোই -৩০ চ্যালেঞ্জ করে বসে পাকিস্তানি ফাইটার জেটগুলোকে। ভারতীয় যুদ্ধ বিমানের তাড়া খেয়ে জেএফ-১৭ থান্ডার পাকিস্তান সীমান্তে ঢুকে আসা মাত্রই তাদের ব্যাকআপ জেএফ-১৭ থান্ডার এর সাথে এয়ার ডগ ফাইট শুরু হয়। এই ডগ ফাইটে ভারতীয় মিগ-২১ এবং সুখোই -৩০ ভূপাতিত হয়। দুইটা পাইলট হামলায় পুঁড়ে মারা যায় এবং একজন ভারতীয় পাইলটকে পাকিস্তান তাদের অভ্যন্তরে আটক করে। ভারতের অব্যহত যুদ্ধাঙদেহী মনোভাবের কারণে ব্যাকফুটে থাকা পাকিস্তানের জন্য ভারতীয় উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্থমান হয়ে ওঠে আশির্বাদ স্বরূপ।
প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান সবাইকে তাক লাগিয়ে ঘোষণা দেন — “আমাদের হাতে বন্দী ভারতীয় পাইলটকে সদিচ্ছা ও শান্তির প্রতীক হিসেবে আগামীকালের মধ্যে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করব”। ইমরানের এই সিদ্ধান্তকে পাকিস্তানের সকল দল ও সুশীল সমাজ সাধুবাদ জানায়। ইমরানের এই ঘোষণায় ভারতের জ্বলন্ত কড়াইয়ের মনোভাবে পানি ঢেলে দেয়।
অভিনন্দনের পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে আটক হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথেই রণসজ্জায় সজ্জিত ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমে নেমে আসে রাজ্যের হতাশা। আকস্মিক ব্যাকফুটে চলে যাওয়া নরেন্দ্র মোদি বৈঠকে বসেন তিন বাহিনী প্রধানের সাথে। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় রাজস্থান ও গুজরাটের রাজকোট দিয়ে ক্ষেপনাস্ত্র হামলা করা হবে ভাওয়ালপুর ও মুলতান ক্যান্টনমেন্ট ও এয়ারপোর্টে। ঐদিনই বৃহস্পতিবার বিকেলে পাকিস্তানের পার্লামেন্টের জয়েন্ট অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান সবাইকে তাক লাগিয়ে ঘোষণা দেন — “আমাদের হাতে বন্দী ভারতীয় পাইলটকে সদিচ্ছা ও শান্তির প্রতীক হিসেবে আগামীকালের মধ্যে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করব”। ইমরানের এই সিদ্ধান্তকে পাকিস্তানের সকল দল ও সুশীল সমাজ সাধুবাদ জানায়। ইমরানের এই ঘোষণায় ভারতের জ্বলন্ত কড়াইয়ের মনোভাবে পানি ঢেলে দেয়। সারাবিশ্বের শান্তিকামী মানুষ সাধুবাদ ও অভিনন্দনে ভূষিত করেন ইমরান খানকে। ভারতের আমজনতা ও সেক্যুলার সাংবাদিকরাও ইমরানের সদিচ্ছাকে সাধুবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানায়।
ভারতীয় উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্থমানকে মুক্ত করে দেয়ার এই ঘোষণা পশ্চিমা দুনিয়ায় ব্যাপক প্রশংসিত হয়। ইমরান বন্দনায় মেতে ওঠে পশ্চিমা বিশ্বের রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান এ সিদ্ধান্তকে সাহসী ও ইমরানের মহানুভবতা বলে আখ্যায়িত করেন। ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের মন্ত্রী ও সাবেক ক্রিকেটার নভজোৎ সিং সিধুও এক টুইটার বার্তায় ইমরানের এই মহানুভবতায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
পশ্চিমা প্রচারমাধ্যমের কাছে সবসময়ই সেনাবাহিনীর পাপেট হিসেবে বিবেচিত হওয়া ইমরান খান একরাতেই মানবতাবাদী নেতা হিসেবে আবির্ভূত হয়ে গেলেন। ইমরানের জনপ্রিয়তা যে কতটা প্রবল তা যারা সরেজমিনে ইমরানের দলের জনসভা কাভার করেছেন তারা জানেন। সামরিকতন্ত্রে বারবার জর্জরিত হওয়া পাকিস্তানে গণতান্ত্রিকভাবে টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতা হস্তান্তরিত হয় গত আগষ্টে ইমরানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে। সাম্প্রদায়িক মনোভাবের বিজেপির আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে ন্যারেটিভ পাকিস্তান বিদ্বেষে পানি ঢেলে দিলেন রাজনীতিতে অক্সফোর্ড গ্র্যাজুয়েট পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।
ভারত-পাকিস্তানের সাম্প্রতিক উত্তেজনায় সামরিক, কূটনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে ভারত অনেক ব্যাকফুটে চলে গিয়েছে। নিউইয়র্ক টাইমস জানাচ্ছে, ভারত-পাকিস্তান এয়ার ডগ ফাইটে ভারতের ভরাডুবি হয়েছে। ক্রিকেট দুনিয়ায় ইমরান ছিলেন চৌকস অলরাউন্ডার এবং রিভার্স সুইংয়ের মাস্টার। ক্রমশঃ দূরদর্শী রাজনীতিবিদ হয়ে ওঠা ইমরান খানের রিভার্স সুইংয়েই নরেন্দ্র মোদি হয়েছেন ক্লিন বোল্ড।
পাকিস্তানের কাছে মোদির আক্রমনাত্বক কৌশলের এ বিপর্যয়ের প্রভাব সুদূরপ্রসারী। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে ভারতের বিমান বাহিনীর এ ভয়াবহ বিপর্যয় বিজেপির জন্য অশনিসংকেত।