বিশ্বের কেবল ছয়টি দেশে রয়েছে নারী পুরুষের কাজের সম অধিকার 

বিশ্বের কেবল ছয়টি দেশে রয়েছে নারী পুরুষের কাজের সম অধিকার 

আধুনিক বিশ্বে নারী-পুরুষ সমানতালে কদম ফেলে চললেও পৃথিবীর মাত্র ছয়টি দেশে নারী এবং পুরুষ কাজের সমান অধিকার পেয়ে থাকে। অতি সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের ‘নারী, ব্যবসা এবং আইন ২০১৯’ শিরোনামের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। ১৮৭টি দেশের ‘লিঙ্গ বৈষম্য’ পর্যবেক্ষণ করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখিত ওই ছয়টি দেশ হলো বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, লাটভিয়া, লুক্সেমবার্গ এবং সুইডেন।

বিগত এক দশক আগেও কোন দেশ নারী-পুরুষের কাজের সমান অধিকার প্রদান করেনি। সেই আইনি চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করে লিঙ্গ সমতায় এই দেশগুলি ব্যাপক উন্নতি সাধন করেছে। এই গবেষণার সূচকটি ৮টি নির্ণায়কের মাধ্যমে মূল্যায়ণ কারা হয়েছে। যেগুলোর মধ্যে  চাকরিকালীন সময়ে অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে ভূমিকা রাখা— পেনশনের আইনি সুবিধা— উদ্যোগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি উল্লেখযোগ্য। ১০০ নাম্বারের মধ্যে এই ছয়টি দেশ পূর্ণ নাম্বার অর্জন করেছে।

গবেষণাটি বলছে, গড়ে ৭০ থেকে ৭৫ স্কোরে বৈশ্বিক উন্নতি ঘটেছে। ৯০ বা এর উপরে মার্কস পাওয়া ৩৯টি দেশের মধ্যে ২৬টি দেশ হচ্ছে সর্বোচ্চ আয়ের দেশ। ৮টি দেশ হচ্ছে ইউরোপের। যুক্তরাজ্য ও মধ্য এশিয়ার দেশসমূহও রয়েছে; যেখানে মাতৃত্বকালীন ছুটি নেওয়া একটি বড় প্রবণতা। লাতিন আমেরিকান ও ক্যারিবীয় দেশ রয়েছে দু’টি, প্যারাগুয়ে ও পেরু। এই দেশগুলোর ভিতরে তাইওয়ানও একটি।

আঞ্চলিক স্কোরে দক্ষিণ এশিয়া সর্বোচ্চ উন্নতি করে দাঁড়িয়েছে ৫৮.৩৬ এ, যেটা গত এক দশক আগে ছিল ৫০ পয়েন্টে। মরিশাসের ব্যাপক উন্নতির মধ্য দিয়ে একই সময়ে সাব সাহারান আফ্রিকা উন্নতি করেছে ৬৪.০৪ থেকে ৬৯.৬৩ তে। এই পরিবর্তনগুলোর অর্ধেক হয়েছে কর্ম ও বিয়ে সম্পর্কিত ক্ষেত্রে। সবচেয়ে কম প্রবৃদ্ধি মধ্য প্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার দেশগুলিতে, যেখানে গড়ে মাত্র ২.৮৬ বেড়ে স্কোর হয়েছে ৪৭.৩৭।

প্রতিবেদনটি  পরিচালিত হয়েছে ব্যাংকটির মধ্যবর্তী প্রেসিডেন্ট ক্রিসতালিনা জর্জিভা যিনি জিম ইয়ং কিম’র পর দায়িত্ব নিয়েছিলেন তিনি বলেন, “লিঙ্গ সমতা অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটা মৌলিক উপাদান। পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার অর্ধেক হচ্ছে নারী পৃথিবীকে আরো সমৃদ্ধ করার ক্ষেত্রে আমাদের রয়েছে গূরত্বপুর্ণ ভূমিকা। কিন্তু আমরা সফলতা পাব না, যদি নিয়ম কানুন বা বিধি বিধান আইন আমাদের পিছনে ঠেলে দেয়।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, নারী অধিকার শালিসি গ্রুপগুলোতে মৌলিক সংস্কার সাধনে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। যদিও প্রতিবেদনটিতে সর্বোপরি তাৎপর্যপূর্ণ উন্নতি লক্ষ্য করার কথা বলা হয়েছে। তবু লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি সম্ভব না হওয়াসহ প্রাতিষ্ঠানিক আইন-কানুনের সংস্কার না হওয়াটা মাঠের পরিবেশ পরিবর্তন করতে পারেনি বলে জানিয়েছে। সেখানে আরও বলা হয়েছে ১০০ নাম্বার অর্জন করাতে আসলে শতভাগ সমতা আনা হয়েছে, সে ধারণা করা সম্ভব নয়। এখানে অসম মজুরি একটা বড় সমস্যা।

ক্রিস্তালিনা জর্জিভা বলেন, “এটা অসম সুযোগের প্রতিনিধিত্ব করে। যদি নারীরা পুরুষের সমান আয় করতে পারত বৈশ্বিক অর্থনীতি সমৃদ্ধ হতে পারত ১৬০ ট্রিলিয়ন (এখন যেখানে ১২০ ট্রিলিয়ন) ডলারে।

নারীদের কাজে অংশগ্রহণ বিশ্ব-অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক। কাজের পরিবেশ, উপযুক্ত পারিশ্রমিক নিশ্চিত করে তা ত্বরাণ্বিত করা জরুরি।