কিউই সিরিজের পয়লা ভাগ তথা ওয়ান ডে’তে তামিমের ব্যাটিং জনম দিয়েছিলো তাকলিফের। সাফল্যের আশায় যার ব্যাটের দিকে তাকিয়ে ছিল বাংলাদেশ তিনি যেন আচমকাই পরিণত হয়েছিলেন অরিত্রে। সাদা বলে চোখে সর্ষে ফুল দেখা তামিম টেস্টের এসিড টেস্টে কি করেন সেটাই ছিল দেখার। তিনি দেখালেন, মুগ্ধ করলেন এবং বুঝিয়ে দিলেন তার মান।
নিউজিল্যান্ড সফর মানেই যেন শশ্মানের নীরবতা নেমে আসা। ব্যর্থতার ধারাবাহিকতায় দু’একটা সুখ স্মৃতি যেন মরুর বুকে আচমকাই দেখা পাওয়া ফুলের মত। তীব্র তাপ আর বালুর রাজত্বে যার সৌন্দর্য্য সে অর্থে উপভোগ করা যায় না। আর তাই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এর আগে চারবার পঞ্চাশের ঘর পেরোলেও লোক মুখে ঘুরে ফেরে ব্যর্থতার গল্পগুলোই। কখনো নিজে সফল হলেও দলের ব্যর্থতায় ম্লান হয়ে যায় সুখের মুহুর্ত।
বাংলাদেশের বর্তমান দলের তুলনায় তুলনামূলক আনকোরা দল নিয়ে সাউথ আফ্রিকার বধ্যভূমিতে শ্রীলঙ্কার ইতিহাস গড়া জয়ে বাংলাদেশের সামনে একটি অদৃশ্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়িয়েছিলো নিজেদের প্রমাণ করা। সেটি করার পূর্বশর্তই ছিল ব্যাট হাতে ভালো একটা শুরু। আর সেটির জন্য তামিমের কাছেই যে বাড়তি প্রত্যাশা ছিল তা বলাই বাহুল্য।
তামিমও যেন ব্যাকুল ছিলেন ওয়ান ’ডের অপ্রত্যাশিত ব্যর্থতার জওয়াব দিতে। সেটি দিলেনও ঠিক ওয়ান ডে কায়দায় খেলে। ইনিংসের শুরু থেকেই ব্যাটকে তরবারি বানিয়ে তাণ্ডব চালালেন কিউই বোলারদের উপর। কী বোল্ট কী সাউদি, তামিম তাণ্ডবে দিশেহারা সবাই। চোখ ধাঁধাঁনো সব ড্রাইভ, কাট, ফ্লিকে ফানা করে দিলেন কিউই বোলিং লাইন আপ। বোল্টকে বেধড়ক পিটিয়ে মাত্র ৩৭ বলেই তুলে নিয়েছেন ক্যারিয়ারে ২৬ম অর্ধ শতক। ওয়ান ডে ও না ঠিক, টি টোয়েন্টি ধাঁচে টেস্টে খেলা ইনিংসটি আশ্চর্য রকমের নিখুঁত।
লাঞ্চের সময় আশির ঘরে থাকা তামিম ব্যাটে লাগাম পড়াননি লাঞ্চের পরেও। সে একই রকম খুনে মেজাজে খেলে তুলে নিয়েছেন ক্যারিয়ারের নবম টেস্ট শতক। যেটি নিউজিল্যান্ডের মাটিতে তার প্রথম। বেপোরোয়া তামিমকে বশে আনতে ব্ল্যাক ক্যাপসরা বাধ্য হয়েছিলো টেস্টে ওয়ান ডে ধাঁচের ফিল্ডিং সাজাতে। তাতেও আটকানো যাচ্ছিলো না তামিমকে। বাউন্সারে তাকে কুপোকাত করার পরিকল্পনাকে অসহায়ভাবে ব্যর্থ হতে দেখেছেন উইলিয়ামসনরা। কিছু সময় গা বাঁচিয়ে ডাক করলেও পরে বাউন্সারের উপর চওড়া হয়ে মেরেছেন ইনিংসে নিজের একমাত্র ছয়টি।
স্বপ্ন যখন আকাশ ছোয়ার তখনই গ্রান্ড হোমের নীরিহ পেসে মাটিতে নেমে আসলেন তিনি। গালিতে উইলিয়ামসনের সহজ ক্যাচে পরিণত হয়ে অপমৃত্যু ডেকে আনলেন অসাধারণ এক ইনিংসের। আউট হবার আগে ১২৮ বলে ২১ চার এবং এক ছয়ে করেছেন ১২৬ রান। একশ ছুঁই ছুঁই স্ট্রাইক রেট দেখে অনেকেই সমালোচনায় মত্ত হতে পারেন। তবে সেটি হবে অবিচার। স্ট্রোকের পসরা তিনি সাজিয়েছেন বটে তবে সেটি অসাধারণ দক্ষতায়। মেরেছেন মারার বলগুলোকেই।
এমন একটি ইনিংসের পরেও কি হাসতে পারছেন তামিম? মনে হয় না। তার অবিশ্বাস্য ইনিংসটির পরেও বাকিদের অসাধারণ ব্যর্থতায় বাংলাদেশের ইনিংস শেষ ২৩২ এই! ওয়ান ডে’তে বেশ কবারই ব্যর্থতার কারণ হিসাবে বলা হয়েছে টপ অর্ডারের ব্যর্থতার কথা। সে টপ অর্ডার এবার তাসমান দ্বীপে তাণ্ডব তুললেও একই তিমিরে বাংলাদেশ। টপ বা মিডল না, সমস্যা সবখানেই। আর তাই এমন ইনিংস খেলেও তামিমের বদলে তাবাস্সুম উইলিয়ামসদের ঠোঁটে!