উত্তেজনা-পর্ব পার করে দুই চির-প্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তান এবং ভারত এখন যুদ্ধের ময়দানে। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ঘটে যাওয়া ‘কাশ্মির বিস্ফোরণ’কে মোক্ষম অস্ত্র করে ভারতের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল বিজেপি যে ‘পাকিস্তানকে অভিযুক্ত’র খেলা শুরু করেছে, তা এখন রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে রূপ নিতে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে দু’দেশ থেকেই হামলা হয়েছে। মূলত কাশ্মিরই এখন পরিণত হয়েছে ‘যুদ্ধক্ষেত্রে’। সামরিক সক্ষমতার দিক থেকে কোনও খাতে পাকিস্তান এগিয়ে, কোনও খাতে আবার ভারত এগিয়ে। তবে কূটনৈতিক দিক থেকে পাকিস্তান অনেক বেশি এগিয়ে গেছে। অন্যদিকে পারমাণবিক অস্ত্রও তাদের বেশি। দেখে নেয়া যাক, যুদ্ধের ময়দানে কার কী আছে?
সামরিক ব্যয়
২০১৮ সালে ভারত তার ১৪ লাখ সক্রিয় সামরিক সেনার জন্য ৫৮ বিলিয়ন ইউএস ডলার বরাদ্দ দিয়েছে যা দেশটির জিডিপির ২.১ শতাংশ। অন্যদিকে পাকিস্তান তার ছয় লাখ ৫৩ হাজার ৮০০ সামরিক সেনার জন্য ১১ বিলিয়ন ইউএস ডলার বরাদ্দ দিয়েছে, যা তাদের জিডিপি’র ৩.৬ শতাংশ।
বাড়তি হিসেবে পাকিস্তান ২০১৮ সালে ১০০ মিলিয়ন ডলার আন্তর্জাতিক সহযোগিতা পেয়েছে তাদের সামরিক খাতে ব্যায়ের জন্য। এই অর্থের পরিমাণ কম হলেও পাকিস্তানের সেনাবাহিনীতে আন্তর্জাতিক মহলের সহযোগিতা যুদ্ধের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। ১৯৯৩ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত এক হিসেবে পাকিস্তান তাদের বার্ষিক ব্যয়ের ২০ শতাংশই ব্যয় করেছে সামরিক খাতে।
মিসাইল ও পারমাণবিক অস্ত্র
পাকিস্তান এবং ভারত, উভয় দেশেরই ক্ষেপনাস্ত্র ও পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। ভারতের যে কোন প্রান্তে আক্রমন করার ক্ষমতাসম্পন্ন ক্ষেপনাস্ত্র রয়েছে পাকিস্তানের, যেখানে চীনের সরাসরি প্রযুক্তিগত সহযোগিতা বিদ্যমান। পাকিস্তানের শক্তিশালী ক্ষেপনাস্ত্র শাহিন-২ প্রায় ২ হাজার কিলোমিটার দূরত্বে আঘাত হানতে সক্ষম।
ভারতেরও রয়েছে শক্তিশালী ক্ষেপনাস্ত্র। অগ্নি-৩ প্রায় ৫ হাজার কিলোমিটার দূরত্বে আঘাত হানতে সক্ষম। এছাড়াও ৯ ধরনের পারমাণবিক অস্ত্রের বাহক তারা। তবে অস্ত্রের পরিমাণে পিছিয়ে ভারত; পাকিস্তানের পারমাণবিক ওয়ারহেড যেখানে ১৪০-১৫০টি, ভারতের সেখানে ১৩০-১৪০টি।
সেনাবাহিনী
পাকিস্তানের রয়েছে ৫ লক্ষ ৬০ হাজার সেনা যাদের ২৪৯৬টি ট্যাংক, ১৬০৬টি ক্যারিয়ার, ৪৪৭২টি আর্টিলারি বন্দুক। অন্যদিকে ভারতের রয়েছে ১২ লক্ষ সেনা, যাদের রয়েছে ৩৫৬৫টি ট্যাংক, ৩৩৬টি ক্যারিয়ার এবং ৭৭১৯টি আর্টিলারি বন্দুক। দু’দেশেরই রয়েছে অসংখ্য রিজার্ভ সেনা।
বিমান বাহিনী
পাকিস্তানের বিমানবাহিনীতে রয়েছে ৫০ হাজার সেনা, যাদের রয়েছে ৪২৫টি কমব্যাট এয়ারক্রাফট যার মধ্যে চীনা-প্রযুক্তির এফ-7পিজি এবং আমেরিকান এফ-16 ফাইটিং জেট। যা তুলনামূলকভাবে আধুনিক।
অন্যদিকে ভারতের রয়েছে ১ লাখ ২৭ হাজার ২০০ সেনা, যাদের ৮১৪টি কিন্তু তাদের শক্তিশালী ফাইটিং জেট রাশান এমআইজি-21’র ২০৩২ সালে মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার কথা। রয়েছে।
নৌবাহিনী
ভারতীয় নৌবাহিনীর রয়েছে ১৬টি সাবমেরিন, ১৩টি ফ্রিগেট এবং ১০৬টি কোস্টাল ভেসেল। পক্ষান্তরে পাকিস্তানের রয়েছে ৮টি সাবমেরিন, ১০টি ফ্রিগেট এবং ১৭টি কোস্টাল ভেসেল। কিন্তু পাকিস্তানের সমুদ্রসীমা সংক্ষিপ্ত হওয়ায় প্রতিরক্ষার জন্য স্বয়ংসম্পূর্ণ।
আন্তর্জাতিক জোট
পাক-ভারত যুদ্ধে ভারতের পাশে দাঁড়াবে বলে এক রকম কথা দিয়েছে ইসরায়েল। তারা বলেছে, যে কোন পরিস্থিতিতে তারা ভারতকে নিঃশর্ত সামরিক সহযোগিতা দেবে। অন্যদিকে আফগান যুদ্ধে পরাজিত হয়ে আমেরিকা শোধ তুলতে চাইবে পাকিস্তানের উপর। যার কারণে গত বছর প্রতিশ্রুত সামরিক সহযোগিতাও দেয়নি তারা। সুতরাং ভারত তাদের পাশে পেতে পারে আমেরিকাকেও।
অন্যদিকে পাকিস্তানের জোট হবে অনেক বেশি শক্তিশালী। তারা ওআইসি’র প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। পাল্টা হামলার আগে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং সৌদির সাথে কথা বলেছেন। তুরস্কও সমর্থন দেবে পাকিস্তানকে। আমেরিকা ভারতকে সমর্থন করলে রাশিয়ার সমর্থন পাবে পাকিস্তান। আর চীনতো পাকিস্তানকে সামরিক সহযোগিতা দিয়েই যাচ্ছে। প্রক্রিয়াধীন রয়েছে যুদ্ধজাহাজ ও সাবমেরিন। যুদ্ধকালীন সময়ে যে কোন সময় পাকিস্তানের সমুদ্র সীমায় চলে আসতে পারে চীনা নৌবাহিনী।