পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের অনুপ্রেরণায় বাঙালির সাংস্কৃতিক পীঠস্থান নন্দন চত্বরে শুরু হয়ে গেল ভারতবর্ষের সবচেয়ে বড়ো কবিতা উৎসব। শুধুমাত্র কবিতাকে কেন্দ্র করে এত বড়ো উৎসব
এর আগে কখনও হয় নি। পশ্চিমবঙ্গ কবিতা আকাদেমির সভাপতি বিশিষ্ট কবি সুবোধ সরকারের কথায়
“কবিতা দিয়ে যুদ্ধ থামানো যায় না, কবিতা দিয়ে ফ্লাইওভার বানানো যায় না, কবিতা দিয়ে ব্যাংক ব্যালান্স করা যায় না, কিন্তু কবিতা সেই আলো, যা বন্ধ দরজায় এসে বলে, ‘দরজা খোলো, আমি এসেছি।”
এবারের অনুষ্ঠানের উদ্বোধক ছিলেন বিশিষ্ট অধ্যাপক ও মাননীয় সাংসদ শ্রী সুগত বসু। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মাননীয় পঞ্চায়েত মন্ত্রী শ্রী সুব্রত মুখার্জী, মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী শ্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, মাননীয় রাষ্ট্রমন্ত্রী শ্রী ইন্দ্রনীল সেন, কবিতা আকাদেমির সভাপতি ও বিশিষ্ট কবি-অধ্যাপক সুবোধ সরকার, কবি দেবদাস আচার্য, কবি মৃদুল দাশগুপ্ত, বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব তথা অভিনেতা দেবশংকর হালদার, সংগীত শিল্পী কোহিনুর সেন বরাট, বাচিকশিল্পী পার্থ ঘোষ, গৌরী ঘোষ, জগন্নাথ বসু, প্রণতি ঠাকুর, ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায় সহ একাধিক বিশিষ্ট কবি ও বাচিকশিল্পী।
কলকাতাসহ রাজ্যের সব জেলা থেকে প্রায় ৫৫০ জন নবীন ও প্রবীন কবি, আবৃত্তিকারকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এই উৎসবে কবিতা পাঠ, আবৃত্তি, সম্মেলক আবৃত্তি ছাড়াও বিশেষ আকর্ষণ হিসাবে থাকছে কবিতা বিষয়ক আলোচনা। চারদিন ধরে বাংলা ভাষার সব থেকে বড়ো এই কবিতা উৎসবটি চলবে আগামী ২৬শে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রবীন্দ্রসদন, শিশির মঞ্চ, নন্দন-৩, বাংলা আকাদেমি সভাগৃহ, অবনীন্দ্র সভাঘর- এই পাঁচটি সভাগৃহে। কথায় কথায় আকাদেমির সভাপতি কবি সুবোধ সরকার বলেন ‘ কবিতাপ্রিয় বাঙালির কাছে কবিতাকে আরও জনপ্রিয় করে তুলতে এবং আপামর জনসাধারণের কাছে কবিতাকে তুলে ধরতে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর ঐকান্তিক ইচ্ছা ও অনুপ্রেরণায় কবিতার প্রসারের জন্য তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের অধীনে পশ্চিমবঙ্গ কবিতা আকাদেমি কাজ করে চলেছে। এই উৎসব আসলে কবিতা শোনার উৎসব। মুদ্রিত অক্ষরের গভীরতা অতিক্রম করে যখন কবিতা কণ্ঠে কণ্ঠে ধ্বনিত হয়ে ওঠে, তখন সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের আলো মিশে গিয়ে নতুন আলো তৈরি হয়। সেই আলোর কাছে আমরা নতজানু হয়ে বসি। পশ্চিমবঙ্গ কবিতা আকাদেমি আমাদের তরুণতম আকাদেমি। কিন্তু এবারের কবিতা উৎসব সব দিক থেকে বাংলা ভাষার বৃহত্তম কবিতা উৎসব। ভারতে আর কোথাও এত বড়ো কবিতা উৎসব হয় না। কবিতা নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ আকাদেমি আর কোথাও নেই। আমেরিকার ম্যানহাটনে দেখেছি একটি চারতলা কবিতার বাড়ি আছে, তার নাম ‘হাউজ অব পোয়েটস’।
এবারের কবিতা উৎসবে বিশিষ্ট কবি দেবদাস আচার্যকে তার সারা জীবনের অবদানের জন্য ‘জীবনানন্দ সম্মান’ প্রদান করা হয়। বাচিকশিল্পী উৎপল কুণ্ডুকে প্রদান করা হয় ‘কাজী সব্যসাচী সম্মান’। কবি মৃদুল দাশগুপ্তকে ভূষিত করা হয় ‘সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় সম্মানে’। কবি অনুরাধা মহাপাত্রকে দেওয়া হয় ‘সুভাষ মুখোপাধ্যায় সম্মান’। দুই তরুণ বাচিকশিল্পী অন্তরা দাস এবং ঈশান চক্রবর্তীকে প্রদান করা হয় যথাক্রমে ‘নীলাদ্রি শেখর বসু সম্মান’ ও ‘আবুল কাশেম রহিমউদ্দিন সম্মান’। তরুণ কবি সেখ সাদ্দাম হোসেনকে উৎসাহিত করার জন্য প্রদান করা হয় ‘বিনয় মজুমদার সম্মান’।
সবচেয়ে বড়ো কথা কবিতা শেষ পর্যন্ত ভালোবাসার কথা বলে, বন্ধুত্বের কথা বলে। এ উৎসব আসলে ভালোবাসার উৎসব, কবিতাকে বুকে জড়িয়ে ধরার উৎসব। ভিড় জ্যাম ধোঁয়া শহরে একবুক মুক্ত অক্সিজেন। যুদ্ধ আর বিদ্বেষের আবহে ভালোবাসার মলম। এত আলো এত আয়োজনে এ উৎসব সত্যিই হয়ে উঠেছে বাঙালির বসন্ত উৎসব।