চকবাজরে আগুনের ঘটনায় সেক্যুলার মিডিয়ার ইসলাম প্রীতির নামে জনগনের ধর্মানূভুতিকে বাণিজ্যিক ফায়দার লক্ষ্যে ব্যবহরের বিষয়টি সবারই ইতমধ্যে জানা হয়ে গেছে। এই ধরণের মিডিয়া মূলত ইসলামবিদ্বেষী তথাকথিত প্রগতীশীলতার ধারক-বাহক হওয়ার পরেও জনপ্রিয়তার জন্য মুসলমানদের আবেগ ও অনুভূতিকে উস্কে দিতে এমন সব খবর প্রকাশ করে যা চিন্তাশীল মানুষ ও প্রকৃত ভাবে ইসলামের সাথে মশকারির শামিল। চকবারের ঘটনার আলোকে আমরা দেখব এই ধরনের খবরের বাইরে আসলে ইসলাম কি বলে।
“হজরত নাফে সূত্রে বর্ণিত, একদিন হজরত ইবনে ওমর রা. কাবা শরিফের দিকে তাকিয়ে বললেন, ওগো আল্লাহর ঘর তুমি কত বিশাল মর্যাদাবান! কত্তো সম্মানের অধিকারী! কিন্তু একজন মুমিন ব্যক্তি, আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে তোমার থেকেও বেশি মর্যাদাবান! (তিরমিজি শরিফ: ২/২৪)
এই রেওয়াত দ্বারা আমরা বুঝতে পারছি ক্বাবার চেয়ে যদি একজন মুমিনের দাম বেশী হয় তবে একজন মুমিনের দাম একটি মসজিদের চেয়ে কয়েকগুন বেশী হবে এটাই স্বাভাবিক। চকবাজারে মসজিদের ক্ষতি হয়নি। চারপাশের সবকিছু পুড়ে গিয়েছে। এমন খবর প্রচারের দ্বারা এটা বুঝায় না যে মসজিদ আগুনে পুড়তে পারে না বা ধ্বংস হতে পারে না। স্বয়ং ক্বাবাতেও আগুন লেগেছিল। কেয়ামতের আগে ক্বাবা শরীফ ধ্বংস হওয়ার ব্যাপারও হাদীসে এসেছে।
এটাও আমরা জানি যে, নূহ আ. এর প্লাবনের সময় কা’বা অক্ষত ছিল না। কা’বা সে সময়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল। ইব্রাহিম আ. যিনি নূহ আ. ১৭ তম প্রজন্ম, তাঁর মাধ্যমে কা’বা পুনরাবিষ্কারিত হয়। তিনি ও ইসমাঈল আ. কা’বা নির্মাণ করেন।
রাসুল সা. এর নবুওয়্যাত লাভের আগে, সে বছর মক্কা এবং এরপাশে প্রবল বৃষ্টিপাত হয়। বন্যার পানি কা’বার দেয়াল ধ্বসিয়ে দেয়। মূল কাঠামোও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ফলত সম্পূর্ণ কা’বার সংস্কার অত্যাবশক হয়ে পড়েছিল।
রাসুল (সঃ) সেই সংস্কার কাজে অংশ নিয়েছিলেন। এরপর আরও প্রায় ১০০০ বছরের কিছু অধিককাল পরে পুনরায় মক্কা ঐতিহাসিক এক অতিবৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি ও বন্যার কবলে পড়ে। কা’বা শরিফের এবং আশপাশের যাবতীয় অবকাঠামো প্রায় সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। ১০ ফুট পর্যন্ত পানি উঠে যায়। পূর্ব ও পশ্চিম পার্শ্বস্থ দেয়াল বন্যার ২য় দিনেই ভেঙে পড়ে। ১৬২৯ খ্রিস্টীয় বছরের ঘটনা ছিল এটি। সে সময় উসমানি খেলাফতের খলিফা ছিলেন মুরাদ বিন আহমাদ। তিনি কা’বার আমূল সংস্কার করেন।
এই ৩ বার কা’বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হয় এবং এর অবকাঠামো ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়। সুতরাং প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিম্বা দুর্ঘটনায় কা’বা কিম্বা কোনও মসজিদ ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়।
হযরত আবু হুরাইরা রা. থেকে একটি হাদিসে জানা যায়, রাসূল সা. ইরশাদ করেন, ‘(কিয়ামতের পূর্বে) কাবা শরীফকে হাবশার (বর্তমানে আবিসিনিয়া) জনৈক ব্যক্তি ধ্বংস করবে। যার পা হবে চিকন।’ (বুখারি : ১৫৯১) আল্লাহ তাআলা দুনিয়াতে বিভিন্ন কুদরত দেখান এতে কোন সন্দেহ নেই। আল্লাহ তাআলার হুকুম ছাড়া আগুন জ্বালতে পারে না। পানি ডুবাতে পারে না। কিন্তু উনি দুনিয়াতে একটি সিস্টেম দিয়েছেন। এই সিস্টেমে আগুন,পানি ইত্যাদি তার কাজ সম্পাদন করবে। মসজিদ আগুনে পুড়ে না অথবা পানিতে ডুবে না এগুলো ঠিক নয়। তবে আল্লাহ তায়ালা চাইলে হেফাজত করতে পারেন। কিন্তু এমন ধারনা পোষন করা উচিৎ নয় যে মসজিদ পুড়ে না বা ধ্বংস হয় না। একজন মুমিনের দাম মসজিদ থেকেও বেশী। কারণ মসজিদের জন্য মানুষ নয় বরং মানুষের জন্য আল্লাহ তায়ালা মসজিদ বানানোর হুকুম দিয়েছেন।”
আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় আমাদের সেক্যুলার মিডিয়াগুলো পর্যন্ত এসমস্ত নিউজ ব্যাপকারে পাবলিশ করে যাচ্ছে। এদের কিন্তু ইসলামের প্রতি ভক্তি, শ্রদ্ধা কোনোটি নেই। এদের উদ্দেশ্যটা কি? এরা আসলে আমমুসলিমদের উস্কে দিয়ে লাইক শেয়ারের মাধ্যমে নিজেদের রেটিং বাড়িয়ে নিচ্ছে এবং সেই সাথে সুক্ষ্মভাবে ইসলামকে হেয় করা হচ্ছে। ইসলাম যে আসলে উদ্ভট কিছু বিশ্বাস এর উপর চলে এমন কু ধারণা প্রচার হচ্ছে এইসব খবর পরিবেশনের মাধ্যমে। ফলে এইসব নিউজ আসলে ইসলামের ক্ষতিই করছে।
আর আমরা না বুঝে নির্বোধ এর মত এসমস্ত নিউজ শেয়ার করে নিজেরাই ইসলামকে অন্যদের নিকট হাস্যকর করে তুলছি। আজ বাদে কাল (যেকোনো কারণে) যদি কোনো মসজিদে (অথবা কুরআন শরীফে) আগুন লাগার খবর পান তখন কি করবেন? বিশ্বাস নড়ে যাবে? নিশ্চই না। সুতরাং, ইসলাম পূর্ণাংগভাবে জানুন, সেক্যুলার মিডিয়া কি চায় বুঝুন।
সেক্যুলার মিডিয়া ইসলামিক হয়েছে দেখে আপ্লুত হওয়া যাবে না। এসব আবেগী রঙচড়ানো স্ক্রিপ্ট নির্বিচারে বাজারজাত হচ্ছে মানুষকে বোকা বানারো জন্য।
অথচ আফসোস, আমাদের মৌলিক আলোচনা-সমালোচনার বিষয় হওয়া উচিত ছিল এই যা কিছু ঘটল সেসবের জন্য যাবতীয় ব্যর্থতার প্রসঙ্গ! রাষ্ট্রীয় অব্যাবস্থাপনা ও হাস্যকর মিথ্যাচারের বলি হল এতোগুলো প্রাণ। এখন তাদের কিছু টাকা দিয়ে সরকার দায়িত্ব পালন করে আবারও বাহবা নিবে। মানুষ নিজের কাজের কারণেই আজ ক্ষতির মুখে পতিত হচ্ছে। আল্লাহ আমাদের সঠিক বুঝ দান করুণ।