সামাজিক আন্দোলন তত্ত্বের আলোকে জামায়াতে ইসলামী’র উত্থান-পতন : শেষ পর্ব

সামাজিক আন্দোলন তত্ত্বের আলোকে জামায়াতে ইসলামী’র উত্থান-পতন : শেষ পর্ব

জিয়ার (জেনারেল জিয়া-উল-হক) শাসনামল, ১৯৭৭-১৯৮৮

জিয়ার শাসনামল ছিল জামায়াতের রাজনৈতিক ইতিহাসে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো তারা রাষ্ট্রক্ষমতার একটি অংশ হলো। তবে এতে বিশ্ববাসীর নজরে জামায়াত পরিচিত হলো সামরিক স্বৈরশাসকের সাথে আপোসকারী দল হিসেবে। জিয়ার সাথে জামায়াতের এই সখ্যতা প্রথম দিন থেকেই ঘোলাটে ছিলো এবং এই সম্পর্কের ভিত্তি কি সে সম্পর্কে কারোরই পরিষ্কার ধারণা ছিলোনা। জিয়া তার ক্ষমতা অধিগ্রহণকে পিএনএর’র আন্দোলনের ফসল বলে উল্লেখ করেন এবং ইসলামী দলগুলোকে আশ্বস্ত করেন যে তারা যে দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলন করছে, অর্থাৎ পাকিস্তানে পরিপূর্ণরূপে ইসলাম প্রতিষ্ঠা, তিনি দেশকে সেদিকেই নিয়ে যাবেন। জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া প্রথম ভাষণে তিনি বলেন, “ভুট্টোবিরোধী আন্দোলনের সময় পাকিস্তান ন্যাশনাল এলায়েন্স (পিএনএ) ইসলামের যে জোশ দেখিয়েছে, তা অতুলনীয়। এই আন্দোলন প্রমাণ করেছে যে পাকিস্তান, যার জন্ম হয়েছিল ইসলামের নামে, তা টিকে থাকবে কেবল ইসলামকে আঁকড়ে ধরে। তাই আমি মনে করি ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রবর্তনের কোন বিকল্প নেই” (মতিন ২০০২, ২৬০)। জামায়াতের পক্ষে একজন সামরিক শাসককে সমর্থন দেয়ার বিষয়টি সহজ ছিলনা কারণ জামায়াত গণতন্ত্রের পক্ষে ছিল। তাই প্রথমে তারা জিয়ার ক্ষমতাগ্রহণকে সমর্থন করেনি; কারণ জিয়াকে, আর যাই হোক, গণতন্ত্রকামী বলার অবকাশ ছিলনা। কিন্তু জিয়া যখন ইসলাম প্রতিষ্ঠায় তার দৃঢ়তা দেখালেন তখন জামায়াত ভেবেছিলো যে হয়তো একটি কোয়ালিশন সরকার গঠিত হলে জিয়াকে নির্বাচনের জন্য চাপ দেয়া যাবে। জিয়া জামায়াতকে গণতন্ত্রে ফিরে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এবং এর প্রেক্ষিতেই জামায়াত সেনাশাসককে সমর্থন দেয় এবং সরকারের অংশ হতে রাজি হয়। জামায়াতের আমীর মিয়া তোফায়েল (মউদুদী ১৯৭২-এ ইস্তফা দেন) তখন মনোনিবেশ করেন দেশে শরিয়াহ আইন বাস্তবায়নে। মউদুদী মনে করতেন রাষ্ট্রপ্রধানকে অবশ্যই ধার্মিক হতে হবে, এবং জিয়াউল হক ধার্মিক মানুষ ছিলেন। তাই তার সরকারে জামায়াতের অংশগ্রহণকে তিনি স্বাভাবিকভাবে নিয়েছিলেন। ১৯৭৮ এর ২১ আগস্ট পিএনএ ও জিয়াউল হকের মাঝে একটি সমঝোতা যেখানে জামায়াতকে উৎপাদন ও শিল্প মন্ত্রণালয়, তথ্য মন্ত্রণালয়, তেল ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়, পানি বিদ্যুৎ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়। ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো ইসলামী দলগুলো শুধু নির্বিঘ্নে কাজ করার সুযোগই পেলোনা,  সেই সাথে তারা পেলো রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতা ও ক্ষমতার স্বাদ। এদিকে ১৯৭৯-র এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মউদুদী মারা যান। জামায়াত বঞ্চিত হয় তার লেখনি থেকে এবং আজ পর্যন্ত দলটিতে তাঁর মাপের লেখক সৃষ্টি হয়নি।

জামায়াত জিয়ার সমালোচনা করলেও সরাসরি জিয়ার শাসনের বিরোধিতা করেনি। কারণ জিয়া সে সময় রাশিয়ার বিরুদ্ধে আফগানিস্তানকে যুদ্ধে প্রচুর সাহায্য-সহযোগিতা করে যাচ্ছিলেন। জামায়াত জিয়ার বিরোধিতা না করলেও জিয়া ঠিকই জামায়াত থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিলেন এবং একধরনের দুরত্ব তৈরি করলেন। জিয়ার বিভিন্ন সিদ্ধান্তে প্রমান হয়ে যায় তিনি আর জামায়াতের পৃষ্ঠপোষকতা করতে আগ্রহী নন। জামায়াতের রাজনৈতিক অবস্থান, শক্তি, ও প্রভাব সম্পর্কে জনগণের যে ভালো ধারণা ছিলো তার অন্যতম কারণ ছাত্রদের মাঝে জামায়াতের ছাত্র সংগঠন জমিয়তে তলাবার ব্যাপক সমর্থন ও প্রভাব।

 

১৯৭৯-এর ২১ জুন ভুট্টোকে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার একমাস পর জিয়া মন্ত্রীসভা ভেঙ্গে দেন। যদিও জামায়াত জিয়ার মন্ত্রীসভা থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল প্রতিশ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানে ব্যর্থতার জন্য। এরপর জামায়াত জিয়ার সমালোচনা শুরু করলেও অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয়ে গঠিত ‘গণতন্ত্র পুনরোদ্ধার আন্দোলন’-এ যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানায়। জামায়াত জিয়ার সমালোচনা করলেও সরাসরি জিয়ার শাসনের বিরোধিতা করেনি। কারণ জিয়া সে সময় রাশিয়ার বিরুদ্ধে আফগানিস্তানকে যুদ্ধে প্রচুর সাহায্য-সহযোগিতা করে যাচ্ছিলেন। জামায়াত জিয়ার বিরোধিতা না করলেও জিয়া ঠিকই জামায়াত থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিলেন এবং একধরনের দুরত্ব তৈরি করলেন। জিয়ার বিভিন্ন সিদ্ধান্তে প্রমান হয়ে যায় তিনি আর জামায়াতের পৃষ্ঠপোষকতা করতে আগ্রহী নন। জামায়াতের রাজনৈতিক অবস্থান, শক্তি, ও প্রভাব সম্পর্কে জনগণের যে ভালো ধারণা ছিলো তার অন্যতম কারণ ছাত্রদের মাঝে জামায়াতের ছাত্র সংগঠন জমিয়তে তলাবার ব্যাপক সমর্থন ও প্রভাব। বিভিন্ন আন্দোলনে এই ছাত্র সংগঠনের জোর দিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে জামায়াত একটি ভালো অবস্থান তৈরি করতে পেরেছে। জমিয়তে তলাবা সে সময় সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-সংসদে নির্বাচিত হয়েছিল। এমতাবস্থায় জিয়া ১৯৮৪ সালে সবধরনের ছাত্র রাজনীতি ও ছাত্র সংগঠন নিষিদ্ধ ঘোষনা করেন এবং জমিয়ত এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গেলে কঠোর হস্তে জমিয়তকে দমন করা হয়। এতে জামায়াত সরাসরি আক্রান্ত হয়, কারণ জমিয়তে তলাবা ছিলো জামায়াতের রিক্রুটিং এজেন্সি স্বরূপ। ছাত্ররা যদি জমিয়তে যোগ না দিতে পারে তাহলে জামায়াতের কর্মী-সদস্যের যোগান যেমন বন্ধ হয়ে যাবে তেমনি রাজনৈতিক অঙ্গনে তারা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবেনা। জামায়াতকে রাজনৈতিকভাবে কোনঠাসা করার জন্য জিয়া করাচিতে ‘মুহাজির কউমি মুভমেন্ট’কে (এমকিউএম) সমর্থন দেয়া শুরু করেন। করাচিকে বলা হতো জামায়াতের ঘাঁটি। করাচির মেয়র নির্বাচনে জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী বিপুল ভোটে নির্বাচিত হবার পর জিয়া মেয়র নির্বাচন বন্ধ করে দেন। এছাড়াও বেশ ক’টি শ্রমিক ইউনিয়ন নির্বাচনে জামায়াতের প্রার্থীরা বিজয়ী হলে জিয়া শ্রমিক ইউনিয়নগুলো ভেঙ্গে দেন এবং দেশের সবচেয়ে বড় তিনটি শ্রমিক ইউনিয়ন: পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্স, পাকিস্তান রেলওয়ে, ও পাকিস্তান স্টিল মিল্স-এর শ্রমিক ইউনিয়নে জামায়াতের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।

রাশিয়ার বিরুদ্ধে আফগানিস্তানকে সমর্থন করার কারণে আমেরিকা ও পশ্চিমা বিশ্ব জিয়ার উপর খুশি ছিল, এবং ঘরের রাজনীতিতেও জিয়া অরাজনৈতিক আলেম-উলামাদের সমর্থন পাচ্ছিলেন। যদিও জিয়া দেশে ইসলামীকরণে কিছু কাজ করেছেন যেমন: তিনি শরিয়াহ কোর্ট চালু করেছিলে, ‘কাউন্সিল অফ ইসলামিক আইডিওলজি’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, কর ব্যবস্থা ও ব্যাংক ব্যবস্থাকে শরিয়াহভিত্তিক করেছিলেন। কিন্তু জামায়াতের কাছে এটা পরিষ্কার ছিল যে জিয়া রাষ্ট্রব্যবস্থার পরিপূর্ণ ইসলামায়নে আগ্রহী নন। কারণ, যদিও তিনি শরিয়াহ কোর্ট চালু করেছিলেন কিন্তু তার পাশাপাশি সাধারণ কোর্ট ইংরেজ আইনের ভিত্তিতেই কাজ করে যাচ্ছিল। পূর্বোক্ত বিচার ব্যবস্থাকে তিনি পরিপূর্ণভাবে বাদ দেয়ার পক্ষে ছিলেন না। যদিও ‘কাউন্সিল অফ ইসলামিক আইডিওলজি’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ইসলামের আলোকে সরকারব্যবস্থার সংস্কার সাধনের পরামর্শ দিতে। কিন্তু কাউন্সিল সামরিক শাসন বিলুপ্তির পরামর্শ দিলে তা শোনা হয়নি। এছাড়াও যদিও বলা হতো বিচার বিভাগ স্বাধীন, বিচার বিভাগের আটজন বিচারপতির প্রত্যেককেই সরাসরি নিযুক্তি দিয়েছেন জিয়া। তাই জামায়াতের কাছে এটা পরিষ্কার ছিল যে কেবল ক্ষমতায় থাকার স্বার্থেই জিয়া ইসলামকে ব্যবহার করছে।

কেন জামায়াত সফল হতে পারেনি?

সামাজিক আন্দোলন তত্ত্ব অনেকভাবেই জামায়াতের ব্যর্থতার ব্যাখ্যা দিতে পারে। প্রথমত, জামায়াত রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্খার জন্য যে প্রতিযোগিতামূলক একটি রাজনৈতিক কাঠামোর ভেতর ঢুকে গিয়েছিল সেখান থেকে একটি সফল সামাজিক আন্দোলন চালানো সম্ভব ছিলনা। নীতি-নির্ধারণী ও সুবিধাভোগী গোষ্ঠী সবসময়ই জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকে। রাজনীতির খেলা ও ক্ষমতার আদান-প্রদান এই ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তাই পাকিস্তানের রাজনৈতিন অঙ্গন কখনোই জামায়াতের জন্য তেমন সুবিধার হয়নি।

দ্বিতীয়ত, জামায়াতকে জামায়াত প্রণীত মূল রূপরেখা অনুসরণ না করার জন্য দোষারোপ করা যায়। মূল রূপরেখা অনুযায়ী কথা ছিল জামায়াত একদল মানুষকে প্রশিক্ষণ দেবে যারা সঠিকভাবে ইসলামকে তুলে ধরতে সক্ষম এবং তারা সমগ্র জনগণকে ইসলামের শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলবে। দেশের জনগণ ইসলামের সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছে এমন প্রতিভাত হলেই কেবল জামায়াত রাষ্ট্রের ক্ষমতা অধিগ্রহণের জন্য কাজ শুরু করবে। যদিও জামায়াত কিছু মসজিদ মাদ্রাসা নির্মাণ করেছিল এবং ইসলামের শিক্ষায় একদল মানুষকে প্রশিক্ষিত করতে পেরেছিল, কিন্তু দেশের আপামর জনসাধারণকে ইসলামের শিক্ষিত করার কাজ তখনও অনেক বাকি। মউদুদীর নিজের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী জামায়াত যখন ১৯৫৭ সালে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয় তখন, “দেশের মাত্র ৫% মানুষ ইসলামকে ঠিকমতো বুঝতো, ৯০% মানুষ ছিল অশিক্ষিত ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন, এবং বাকি ৫% ছিল পশ্চিমা সংস্কৃতির দাস” (খুরশিদ ১৯৮০, ৩৫৬)। এটা অবিশ্বাস্য যে এত বিস্তারিত ও সুনির্দিষ্ট একটি রূপরেখা থাকার পরও জামায়াত সেটা অনুসরণ করতে পারেনি।

তৃতীয়ত, রাজনীতিতে জামায়াতের অংশগ্রহণের সিদ্ধান্তকে একটি চরম ভুল বলা যায়। ম্যাকএ্যাডাম এর মতে যে কোনো সামাজিক আন্দোলন যখন রাজনীতি শুরু করে তখন তারা তাদের মূল লক্ষ্য থেকে সরে যেতে বাধ্য। কারণ রাজনীতি মানেই দেন-দরবার আর আপোষকামীতার রাজনীতি (১৯৮২)। যখনই জামায়াত রাজনীতিতে ঢোকার সিদ্ধান্ত নিলো তখনই তারা গতানুগতিক ব্যবস্থাকে মেনে নিয়ে প্রকারান্তরে এক ধরনের স্বীকৃতি দিলো। সমাজ সংস্কার ও বুদ্ধিবৃত্তিক পরিবর্তনের চেয়ে প্রাধান্য পেলো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড। আর সরকার যতটুকু ছাড় দিতে রাজি ততটুকুতেই সন্তুষ্ট থাকতে হলো জামায়াতকে। যেহেতু জামায়াত ভোট বেশি পায়নি তাই জোর গলায় দাবি আদায়ের রাস্তাও বন্ধ। জামায়াত রাজনীতিতে অংশগ্রহণ না করলে বড় গলায় কথা বলার অবকাশ থাকতো। ড. ইসরার আহমেদ (যিনি রাজনীতিতে যাবার কারণে জামায়াত ত্যাগ করে তানজিম-এ-ইসলাম নামক একটি দল গঠন করেছিলেন) জামায়াতের ব্যর্থতার দু’টি কারণ উল্লেখ করেছেন এবং দু’টোই জামায়াতের রাজনীতি করার সিদ্ধান্তের সাথে সম্পৃক্ত। প্রথমত, তাদের যে লক্ষ্য ছিল সমগ্র বিশ্বে ইসলামের আলোকে সমাজ সংস্কারের – জামায়াত সেটার পরিসরকে পাকিস্তানের রাজনীতির মতো একটি ক্ষুদ্র গণ্ডিতে আবদ্ধ করে ফেলে। অথচ ধর্মপ্রাণ মানুষের কাছে জামায়াতের মূল আবেদনই ছিল এটা যে তারা সমগ্র মানবজাতির কল্যান ও মুক্তির জন্য কাজ করবে। দ্বিতীয়ত, রাজনীতি করার বিষয়টি সম্পর্কে সংগঠন হিসেবে জামায়াত যেমন অপ্রস্তুত ছিলো, তেমনি অপ্রস্তুত ছিল পাকিস্তানের জনগণ। শহরের শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর বাইরে জামায়াতকে তখন কেউই চিনতো না। আর পাকিস্তানের বেশিরভাগ মানুষ ছিলো অশিক্ষিত।

চতুর্থত, ম্যাকএ্যাডাম সামাজিক আন্দোলনের জন্য গুরুত্ব দিয়েছেন তৃণমূল পর্যায়ে গণভিত্তি ও সমর্থনকে। অথচ জামায়াতের নিয়ম ছিল কেবল শিক্ষিতরাই এই আন্দোলনের সদস্য হতে পারবে। এতে পাকিস্তানের ৮০% মানুষ, যারা অশিক্ষিত, তাদের জামায়াতে যোগদান অনিশ্চিত হয়ে যায়। এর ফলে জামায়াতের সমর্থন সীমাবদ্ধ হয়ে পরে বড় বড় শহরের শিক্ষিত মধ্যবিত্তদের মাঝে এবং গ্রাম্য জনগোষ্ঠী, যারা মোট জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ, জামায়াতের আওতার বাইরেই থেকে যায়। এমনকি নির্বাচনে যাবার সিদ্ধান্ত নেয়ার পরও মউদুদী জামায়াতের সদস্যপদ সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করতে রাজি হননি (আহমদ ১৯৯১, ১২)। ১৯৯৩ এর আগ পর্যন্ত জামায়াতের সদস্যপদ সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত ছিলোনা।

স্নো এবং বেনফোর্ডের মতে কোনো দলের মাস্টারফ্রেম, বা মূল কর্মপন্থা, রাজনৈতিক সাংস্কৃতিতে পবির্তনের কারণে স্তিমিত হয়ে যেতে পারে (বেনফোর্ড ১৯৯২, ১৪৯)। ১৯৭০ এর নির্বাচনের ফলাফল যদি আমরা পর্যালোচনা করি তাহলে দেখা যাবে কিভাবে জামায়াতের ইতিহাসে একটি বিপর্যয় ঘটেছিলো। সেই নির্বাচনে প্রথমবারের মতো জনগণের মনস্তত্ব বোঝার সুযোগ হয়েছিলো জামায়াতের। জামায়াত বুঝতে পেরেছিলো যে ধার্মিকতা, সততা, এবং নিষ্ঠা – এগুলো সবই প্রশংসাযোগ্য গুণাবলি কিন্তু কোনোটিই মানুষের ভোট পাবার জন্য যথেষ্ট না (মুরাদ ১৯৮০, ৩০৫)। খুররম মুরাদ জামায়াতের নির্বাচন পরিচালনা পদ্ধতিতে কিছু সমস্যার কথা উল্লেখ করেছেন। প্রথমত, পশ্চিম পাকিস্তানে জামায়াতের নির্বাচনী প্রচারণায় যে বিষয়টিকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে তা হলো “ইসলাম ও পাকিস্তান ধ্বংসের মুখে”, এবং “১৯৫৬ এর সংবিধানে ফিরে যেতে পারলে পাকিস্তানের সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।” অথচ জনগণের কাছে এটা তখন মোটেও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিলনা। জনগণ মূলত উদ্বিগ্ন ছিল দ্রব্যমূল্য, চাকরি ও অর্থনৈতিক মন্দা নিয়ে এবং এবিষয়গুলো জামায়াত তাদের নির্বাচনী প্রচারণায় প্রধান্য দিতে ব্যর্থ হয়েছে। দ্বিতীয়ত, পূর্ব-পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশে) যখন জনগণ কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক নীতি ও বিমাতাসূলভ আচরণের অভিযোগ করছিলো জামায়াত নেতারা তখন তাদের ইসলামের লেকচার দিচ্ছিলেন যে কিভাবে ইসলাম তাদের সব সমস্যার সমাধান এনে দেবে। অথচ শেখ মুজিব সেই সুযোগে তার ছয় দফা আন্দোলনকে জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন এবং তিনি জনগণকে বলেছিলেন এই ছয় দফা পূর্ব-পাকিস্তানকে বৈষম্য থেকে মুক্তি দেবে। অর্থাৎ, উভয় পাকিস্তানেই জামায়াত ব্যর্থ হয়েছে সময়োপযোগী কর্মপন্থা গ্রহণ করতে।

সামাজিক আন্দোলনের সফলতার জন্য যোগাযোগ মাধ্যমের কার্যকারিতাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছেন ম্যাকএডাম, যা পূর্বেই আলোচিত হয়েছে। এই যোগাযোগের ব্যর্থতাও নির্বাচনে জামায়াতের ব্যর্থতার জন্য দায়ী। জামায়াত তখনও সমগ্র পাকিস্তানের জনগণের কাছে পৌছানোর মতো বিশাল নেটওয়ার্ক তৈরি করতে পারেনি। উপরন্তু, বেশিরভাগ আলেম ছিলেন মউদুদীর মতবাদের বিপক্ষে কারণ তারা মউদুদীকে ‘নতুন পথের উদ্ভাবক’ ও ‘ফিৎনা সৃষ্টিকারী’ হিসেবে দেখতেন। তাই অধিকাংশ মসজিদ জামায়াতের প্রচারণার জন্য উপযুক্ত ছিলনা। স্বল্পসংখ্যক যে মসজিদ ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো জামায়াত ও এর শুভাকাঙ্খীদের নিয়ন্ত্রণে ছিল তা দিয়ে কয়েক কোটি জনগণের কাছে তাদের বার্তা পৌছানো অসম্ভব ছিল।

জামায়াত নেতৃবৃন্দ সাধারণ জনগণের সাথে তাদের বোধগম্য ভাষায় কথা বলতে সিদ্ধহস্ত ছিলেন না। নির্বাচনী বা জ্বালাময়ী বক্তৃতা দেয়ার ক্ষেত্রেও ছিলেন একেবারেই অপারঙ্গম। অথচ মুজিব এবং ভুট্টো উভয়ই ছিলেন তুখোড় বক্তা। তাদের বক্তব্য ছিল পরিষ্কার এবং সাধারণ মানুষের কাছে সহজবোধ্য। আর জামায়াতের বক্তব্য ছিল ইসলামী রাষ্ট্র নিয়ে, যার ধরন সম্পর্কে সাধারণ মানুষের কোনো ধারণাই ছিলোনা। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, আর ছয় দফা দাবির কথা মানুষকে বোঝানো যতো সহজ; জনগণের মাঝে একটি কল্যানধর্মী ইসলামী রাষ্ট্রের ধারণা পৌঁছানো তারচেয়ে অনেক কঠিন। তাই এখানে জামায়াতের নির্বাচনী বার্তাটি মার খেয়ে যায়।

 

এদিকে, জামায়াতের নির্বাচনী বার্তাটিও ছিল সাধারণ জনগণের কাছে দুর্বোধ্য। স্নো এবং বেনফোর্ডের তত্ত্ব অনুযায়ী এই বার্তাটি মুখ থেকে মুখে ছড়িয়ে পরার মতো সহজ ছিলনা। যদিও মউদুদী অসংখ্য বই লিখেছেন কিন্তু তার বইগুলো পড়ে বুঝতে পারার মতো মানুষ তখন খুব কম ছিল, ধারণা করা যেতে পারে ২০% এরও কম। আর জামায়াত নেতৃবৃন্দ সাধারণ জনগণের সাথে তাদের বোধগম্য ভাষায় কথা বলতে সিদ্ধহস্ত ছিলেন না। নির্বাচনী বা জ্বালাময়ী বক্তৃতা দেয়ার ক্ষেত্রেও ছিলেন একেবারেই অপারঙ্গম। অথচ মুজিব এবং ভুট্টো উভয়ই ছিলেন তুখোড় বক্তা। তাদের বক্তব্য ছিল পরিষ্কার এবং সাধারণ মানুষের কাছে সহজবোধ্য। আর জামায়াতের বক্তব্য ছিল ইসলামী রাষ্ট্র নিয়ে, যার ধরন সম্পর্কে সাধারণ মানুষের কোনো ধারণাই ছিলোনা। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, আর ছয় দফা দাবির কথা মানুষকে বোঝানো যতো সহজ; জনগণের মাঝে একটি কল্যানধর্মী ইসলামী রাষ্ট্রের ধারণা পৌঁছানো তারচেয়ে অনেক কঠিন। তাই এখানে জামায়াতের নির্বাচনী বার্তাটি মার খেয়ে যায়।

শেষোক্ত যে কারণকে জামায়াতের ব্যর্থতার জন্য দায়ী করা যায় তা হলো যে মউদুদী পুরোপুরি ইসলামী হতে পারছিলেন না আবার উদারপন্থীও হতে পারছিলেন না। তাই তার দল সম্পর্কে জনগণের মাঝে একটি মিশ্র এবং ঘোলাটে ধারণা তৈরি হয়েছিলো। ১৯৬৫-এর নির্বাচনে তিনি ফাতিমা জিন্নাহকে সমর্থন দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। অথচ তখনকার সবগুলো ইসলামী দল নারী নেতৃত্বের বিপক্ষে ছিলো। এর কারণ হিসেবে দেখানো হতো রাসুল (সঃ) এর একটি হাদীস, “কোনো নারীকে যখন জাতির নেতৃত্ব দেয়া হয় তখন সেই জাতির উন্নয়ন-অগ্রগতি স্থবির হয়ে যায়।” তাই আলেমদের অধিকাংশই ফাতেমা জিন্নার বিপক্ষে ছিলেন। জমিয়তে উলামা পাকিস্তানের নেতা মাওলানা আবুবকর সাইদ আহমেদ কাদরি ফাতেমা জিন্নার বিপক্ষে ফতোয়া পর্যন্ত দিয়েছিলেন। কিন্তু সকল ইসলামী দলের মতের বিরুদ্ধে গিয়ে মউদুদী ফাতেমা জিন্নাহকে সমর্থন দেন। এতে জামায়াতের সমর্থনে ভাটা পরে এবং জনগণ এই প্রথম মউদুদীকে ইসলামী আন্দোলনের নেতার পরিবর্তে একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে দেখতে শুরু করে। ১৯৭০ এর নির্বাচনে এবিষয়টি আরো পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়। জামায়াত সারা পাকিস্তানে মাত্র ৪টি প্রাদেশিক আসন পায়। অথচ সংস্কারের পক্ষে কথা না বলে শুধুমাত্র গতানুগতিক ধারার ইসলামী দল হয়েও জমিয়তে-উলামা-ই-পাকিস্তান ও জমিয়তে-উলামা-ই-ইসলাম জাতীয় সংসদে ৭টি আসন পায় এবং মোট ২০টি প্রাদেশিক আসন পায়। তাই এই নির্বাচনে জামায়াতের যে রাজনৈতিক পরাজয়ই হয়েছে তাই নয়, সঙ্গে এটাও প্রমাণ হয়ে গেছে যে জামায়াত পাকিস্তানের একমাত্র ইসলামী রাজনৈতিক দল নয় কিংবা সবচেয়ে প্রভাবশালী ইসলামী দলও নয়। জামায়াত যদি এককভাবে প্রতিদ্বন্দ্বীতা না করে ইসলামী দলগুলোর সাথে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করতো তাহলে ইসালামী ভোটগুলো ভাগ হয়ে যেতো না। যদিও জমিয়তে ইসলামের নেতা মাওলানা এহতেশামুল হক থানভি ইসলামী দলগুলো জোটবদ্ধ নির্বাচনের চেষ্টা চালিয়েছিলেন, কিন্তু জামায়াতের ‘একলা চলো’ নীতির কারণে তা পণ্ড হয়ে যায়। নির্বাচনপূর্ব প্রচার-প্রচারণায় অভূতপূর্ব সাড়া পাওয়ায়, বিশেষ করে ৩১ মে ১৯৭০-এ আয়োজিত শওকত-এ-ইসলাম সম্মেলনের ব্যাপক সাফল্যে, জামায়াতের বদ্ধমূল ধারণা হয় তারা একাই নির্বাচনে জিততে পারবে। তাদের এই ধারণা অচিরেই ভুল প্রমাণিত হয়েছিলো।

উপসংহার

জামায়াতে ইসলামীর অবস্থা বর্তমানে জরাজীর্ণ। যে আন্দোলন শুরু হয়েছিলো সমগ্র মুসলিম জাহানের সংস্কারের স্বপ্ন নিয়ে তা তার পথ পরিবর্তন করেছে। এখন জামায়াত কেবল ইসলামের প্রতি কতিপয় সহানুভূতিশীল শহুরে মধ্যবিত্তের একটি দল। নীচের টেবিলে জামায়াতের ১৯৯৮ সালের নেতৃবৃন্দের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও পেশা বিস্তৃত হলো:

 

নাম দলীয় অবস্থান শিক্ষাগত যোগ্যতা পেশা
কাজী হুসেইন আহমেদ আমীর এমএস ব্যবসায়ী
খুরশিদ আহমেদ ভাইস প্রেসিডেন্ট এমএ (অর্থনীতি) অধ্যাপক
গফুর আহমেদ ভাইস প্রেসিডেন্ট এমএ (বাণিজ্য) কনসালটেন্ট
খুররম মুরাদ ভাইস প্রেসিডেন্ট এমএস (সিভিল ইঞ্জি.) ইঞ্জিনিয়ার
রহমত ইলাহি ভাইস প্রেসিডেন্ট এমএ (রাষ্ট্র বিজ্ঞান) সরকারী কর্মকর্তা
আসলাম সালেমি সেক্রেটারী জেনারেল এলএলবি সাবেক এটর্নি
হাফিজ ইদ্রিস সহ. সেক্রেটারী জেনারেল এমএ (মানবিক) সংগঠনে সার্বক্ষনিক
লিয়াকত বালোচ সহ. সেক্রেটারী জেনারেল এমএ (সাংবাদিকতা) ব্যবসায়ী
ফতেহ মুহম্মদ আমীর, পাঞ্জাব এমএ (মানবিক) সাবেক অধ্যক্ষ
মুনাওয়ার হাসান আমীর, করাচী এমএ (সমাজ বিজ্ঞান) গবেষক
আসাদ জিলানী আমীর, লাহোর এমএ (মানবিক) সাংবাদিক
আজম ফারুকী সদস্য, কার্যনির্বাহী কমিটি এমএ (অর্থ ব্যবস্থাপনা) প্রকাশক
নাইম সিদ্দিকী সদস্য, কার্যনির্বাহী কমিটি উচ্চ মাধ্যমিক সাংবাদিক
ফজলে ইলাহি কোরেশি সেক্রেটারী, বেলুচিস্তান এমএ (খাদ্য ও পুষ্ঠি বিজ্ঞান) খাদ্য প্রযুক্তিবিদ

 

এখানে আলেমরা কোথায়? কোথায় ইসলামী বিপ্লবের ইশতেহার? উপসংহারে এটাই বলা যায় যে, জামায়াত শুরু হয়েছিলো একটি সামাজিক আন্দোলন হিসেবে, কিন্তু তা ধীরে ধীরে ধ্বংসের পথে এগিয়ে গেছে: বিভিন্ন সময়ে স্বৈরাচারী শক্তির উত্থানে, মূল কর্মপন্থা অনুসরণে ব্যর্থতার কারণে, এবং তাদের বক্তব্যকে জনগণের কাছে সহজ ও হৃদয়গ্রাহী করতে না পারার কারণে। সবশেষে ভালি রেজা নাসের কর্তৃক উদৃত মউদুদীর একটি কথা দিয়ে শেষ করতে চাই। মউদুদী বলেছিলেন, “আমার যদি দম থাকতো তাহলে আবার শুরু থেকে শুরু করতাম” (নাসের, ৪৫)।

 

নির্দেশিকা

আহমেদ, খুরশিদ। Islamic Law and Constitution. Lahore: Islamic Publications Limited, ১৯৮৪

আহমেদ, মমতাজ। “Islamic Fundamentalism in South Asia: The Jamaat-e-Islami and the Tablighi Jamaat of South Asia.” Fundamentalism Observed, সম্পাদনা: মার্টিন মার্টি এবং স্কট এপলবি, শিকাগো: ইউনিভার্সিটি অফ শিকাগো প্রেস, ১৯৯১

ব্রেন্নান, ক্যাথরিন। “Can Resource Mobilization Predict the Level of Success Among Social Movement Organizations?” Http://digitalcommons.iwu.edu/polisci honproj/33

ব্লুমিংটন: ইলিনয়েস ওয়েসলিয়ান ইউনিভার্সিটি, ২০০৯

জিলানি, আসাদ। Maududi: Thought and Movement,

লাহোর: ইসলামিক পাবলিকেশন্স লিমিটেড, ১৯৮৪

গ্রেয়ার, ফ্রেডরিক। Political Islam in the Indian Subcontinent: The Jamaat-e-Islami,

নয়াদিল্লী: মনোহর, ২০০১

ম্যাকএ্যাডাম, ডাগ। Political Process and the Development of Black Insurgency, 1930-1970, শিকাগো: ইউনিভার্সিটি অফ শিকাগো প্রেস, ১৯৮২

মউদুদী, আবুল আ’লা। First Principles of the Islamic State,

লাহোর: ইসলামিক পাবলিকেশন্স লিমিটেড, ১৯৬০

মউদুদী, আবুল আ’লা। Unity of the Muslim World, লাহোর: ইসলামিক পাবলিকেশন্স লিমিটেড, ১৯৬৭

মউদুদী, আবুল আ’লা। Nations Rise and Fall – Why?,

লাহোর: ইসলামিক পাবলিকেশন্স লিমিটেড, ১৯৭৬

মউদুদী, আবুল আ’লা। The Process of Islamic Revolution,

লাহোর: ইসলামিক পাবলিকেশন্স লিমিটেড, ১৯৪৭

মউদুদী, আবুল আ’লা। Political theory of Islam, লাহোর: ইসলামিক পাবলিকেশন্স লিমিটেড, ১৯৬০

মউদুদী, আবুল আ’লা। Call to Jihad, লাহোর: ইসলামিক পাবলিকেশন্স লিমিটেড, ১৯৮০

মরিস, এলডন। “Black Southern Student Sit-In Movement: An Analysis of Internal Organization.” Social Movements : Readings on Their Emergence, Mobilization and Dynamics, সম্পাদনা: ডাগ ম্যাকএ্যাডাম এবং ডেভিড স্নো, বস্টন: রক্সবারি কোম্পানি, ১৯৯৭

মতিন, আবদুল রশিদ। Jamaat-e-Islami in the Politics of Pakistan,

সেলাঙ্গর: ইসলামিক বুক ট্রাস্ট, ২০০২

মুরাদ, খুররম। The Islamic Movement: Dynamics of Values, Power and Change,

লিচেস্টার: দি ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ২০০১

মানসুন, জাইদ। Islamic Mobilization: Social Movement and the Egyptian Muslim Brotherhood, The Sociology Quarterly (2001): 487-510

নাসের, সৈয়দ ভালি রেজা। Mawdudi and the Making of Islamic Revivalism,

অক্সফোর্ড: অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, ১৯৯৬

রহমান, খালিদ; আহমেদ, মুশফিক; এবং মুবিবুল হক সাহিবজাদা। Jamaat-e-Islami and National and International Politics, ইসলামাবাদ: ব্লক ট্রেডার্স, ১৯৯৯

স্নো, ডেভিড ও বেনফোর্ড, বরার্ট। “Master Frames and Cycles of Protest.” Frontiers in Social Movement Theory, সম্পাদনা: এলডস মরিস ও ক্যারল মুলার,

নিউ হ্যাভেন: ইয়েল ইউনিভার্সিটি প্রেস, ১৯৯২

পড়ুন : পর্ব ২