ভাবুন তো, ১০ নম্বর জার্সিটা লিওনেল মেসি না পরে অন্য কেউ জার্সিটা পরে মাঠে দৌঁড়াচ্ছে। কেমন বেখাপ্পা লাগবে, তাই না? নম্বর ১০ আর বার্সেলোনার তারকা খেলোয়াড় মেসি যেন ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে । ১৯৯০ এর দশকের আগে কিন্তু এমনটা ছিল না। তখন ১ থেকে ১১ নম্বর খেলোয়াড়কে ধারাবাহিক নম্বরের জার্সি পরে মাঠে নামতে হতো। এমনকি খেলোয়াড়েরা কৌশলগত ও মাঠে অবস্থানের উপর নির্ভর করে এক মৌসুমে একাধিক নম্বরের জার্সিও পড়তেন। তবে যাই হোক, আমেরিকান লিগ এনএএসএল তাদের জন্মের সূচনালগ্ন থেকেই খেলোয়াড়দের জন্য নির্দিষ্ট জার্সি রেখেছিল। ব্রাজিলিয়ান তারকা খেলোয়াড় পেলের ১০ নম্বর জার্সিটা প্রথমে অবসরপ্রাপ্ত হয়েছিল। ফুটবলে স্থায়ী জার্সি নম্বর ব্যবহারে মেক্সিকোও পথিকৃৎ ছিল।
খেলোয়াড়ের জার্সি নম্বর অবসরপ্রাপ্ত হয়, যখন খেলোয়াড়টি দল থেকে অবসর নেয় কিংবা অন্য ক্লাবে যোগ দেয় অথবা খেলোয়াড়ের মৃত্যু ঘটলে। মাত্র কিছুদিন আগেই আর্জেন্টাইন খেলোয়াড় এমিলিয়ানো সালার ক্ষেত্রে ঘটল মর্মান্তিক ঘটনা। তিনি খেলতেন ফ্রান্সের নঁতে। ৯ নম্বর জার্সি পড়ে মাঠ মাতাতেন এই উঠতি তারকা। এ মৌসুমে নঁতের হয়ে ১৯ ম্যাচ খেলে ১২ গোল করেছেন সালা। নঁতের হয়ে ক্যারিয়ারে ১৪৪ ম্যাচে ৪৮ গোল করা সালার এই প্রতিভা দেখেই তাকে দলে আনতে চেয়েছিল ইংলিশ ক্লাব কার্ডিফ সিটি। কার্ডিফ সিটিতে যোগ দেওয়ার পথে উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান এই তরুণ। সালার প্রতি সম্মান জানিয়ে এই স্ট্রাইকারের ৯ নম্বর জার্সিকে অবসরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে নঁতে।
তবে শুধু নঁতেই নয়, নিজেদের সাবেক খেলোয়াড়কে সম্মান জানিয়ে অনেক ক্লাবই সেই খেলোয়াড়ের ব্যবহার করা জার্সি নম্বরকে অবসরে পাঠিয়েছে। আসুন জেনে নিই এমন কিছু খেলোয়াড় সম্পর্কে।
লুইস হেনরিক, বার্সেলোনা
বার্সেলোনার নগর প্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদ থেকে ১৯৯৬ সালে বার্সেলোনায় যোগ দেন মিডফিল্ডার লুইস হেনরিক। এই ক্লাবে তিনি আট বছর অতিবাহিত করেন। ক্লাবে শেষ বছরে তিনি অধিনায়ক হন। অবসরের পর তার পরিহিত ২১ নম্বর জার্সিটা ক্লাব মাত্র দুই বছর (২০০৪-২০০৬) তুলে রাখতে সক্ষম হয়েছিল। কারণ লা লিগা স্থায়ীভাবে নম্বর প্রত্যাহারের অনুমতি দেয়নি।
জিয়ানফ্রাঙ্কো জোলা, চেলসি
জিয়ানফ্রাঙ্কো জোলা একজন ইতালিয়ান ফুটবলার ছিলেন। তিনি ১৯৯৬-২০০৩ সাল পর্যন্ত চেলসি ক্লাবের ফরোয়ার্ড ছিলেন। অবশ্য বর্তমানেও তিনি চেলসি ক্লাবের সহকারি হিসেবে দায়িত্বে আছেন। চেলসির ২৫ নম্বর জার্সি পরে খেলতেন ৫২ বছর বয়সী জোলা। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে ক্লাব কতৃপক্ষ ২৫ নম্বর জার্সিকে অবসরে পাঠায়নি, তবে ২০০৩ সালে ক্লাব ছেড়ে জোলা চলে যাওয়ার পর ২৫ নম্বর জার্সি পরে চেলসির হয়ে কেউ মাঠে নামেনি।
দিয়েগো ম্যারাডোনা, আর্জেন্টিনা
১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপে দিয়েগো ম্যারাডোনার কল্যাণেই আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ নিজেদের ঘরে তুলতে পেরেছিল। আর্জেন্টিনার ফুটবল ইতিহাসের এই কিংবদন্তির কীর্তিকে স্মরণীয় করে রাখতেই ম্যারাডোনার পরিহিত ১০ নম্বর জার্সিকে অবসরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল আর্জেন্টিনার ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন। ২০০২ সালের বিশ্বকাপের আগে, এএফএ টুর্নামেন্টের জন্য ২৩ জন খেলোয়াড়ের একটি তালিকা তৈরি করে যেখানে ১ থেকে ২৪ পর্যন্ত নম্বর থাকে। কারণ ম্যারাডোনার ১০ নম্বর বাদ দিয়ে তালিকাটি করা হয়। তবে ফিফা আর্জেন্টিনার তালিকা প্রত্যাখ্যান করে। ফিফার গভর্নিং বডির সভাপতি সেপ ব্লাটার ১০ নম্বর জার্সি আর্জেন্টাইন তৃতীয়-পছন্দের গোলরক্ষক রবার্টো বোনানোকে দিতে বলেন। পরবর্তীতে ১০ নম্বর জার্সির দখলদারিত্ব পান আর্জেন্টাইন জায়ান্ট লিওনেল মেসি যাকে ম্যারাডোনার উত্তরাধিকারী ধরা হয়।
পাওলো মালদিনি, মিলান
ইতালিয়ান ফুটবলার পাওলো মালদিনি মিলানের একজন ডিফেন্ডার ছিলেন। ১৯৮৫ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত দীর্ঘদিন তিনি মিলান দলের সাথে ছিলেন। যদিও তার শার্ট পুরোপুরি অবসরপ্রাপ্ত ছিল না। মালদিনি তার ৩ নম্বর জার্সি তার সন্তানদের জন্য বরাদ্দ করেছেন যদি তাদের মধ্যে কেউ ক্লাবের জন্য পেশাদারভাবে খেলতে পারে।
মিকি রুকি, রিয়াল বেটিস
স্প্যানিশ ডিফেন্ডার মিকি রুকি ২০১১ সালে নিয়মিত শারীরিক পরীক্ষার অংশ হিসেবে ডাক্তারের কাছে যান। এই ডিফেন্ডারের অন্ত্রে ক্যান্সার ধরা পড়ে। এক বছর ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করার পর ২০১২ সালের ২৪ জুন মারা যান তিনি। রুকির সম্মানে ২৬ নম্বর জার্সি অবসরে পাঠায় বেটিস।
ববি মুর, ওয়েস্ট হাম ইউনাইটেড
ইংলিশ সেন্টার ব্যাক ববি মুর ওয়েস্ট হামে খেলেছেন দীর্ঘ ১৬ বছর। বলা যায়, ক্যারিয়ারের অধিকাংশ সময়জুড়ে তিনি ক্লাবটিতে কাটিয়েছেন। বিশ্বকাপজয়ী কিংবদন্তি মুরের মৃত্যুর পর ক্লাবটি তার প্রতি সম্মান দেখিয়ে ৬ নম্বর জার্সিকে তুলে রাখে।
মার্ক-ভিভিয়েন ফো, ম্যানচেস্টার সিটি
মার্ক-ভিভিয়েন ফো লোনে খেলতে এসেছিলেন ম্যানচেস্টার সিটিতে। ফরাসি ক্লাব লিওঁ থেকে ২০০২-০৩ মৌসুমে সিটিতে খেলতে এসেই বাজিমাৎ! ৩৫ ম্যাচে ৯ গোল করে ফেলেছিলেন ২৩ নম্বর জার্সি পরিহিত এই খেলোয়াড়। ক্যামেরুন জাতীয় দলেও অনেক অবদান রেখেছেন ফো। দলকে ২০০৩ সালের কনফেডারেশনস কাপের সেমিতে পৌঁছে দিয়েছিলেন। কলম্বিয়ার বিপক্ষে সেই সেমিফাইনাল খেলতে গিয়েই জীবনাবসান ঘটে তার। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ফুটবল মাঠ থেকেই বিদায় নেন ফো। এই ফুটবলারের সম্মানে ২৩ নম্বর জার্সি অবসরে পাঠায় সিটি। ফো লেন্সে খেলতেন ১৭ নম্বর জার্সি পরে। লেন্সও তাদের ১৭ নম্বর জার্সিকে অবসরে পাঠায়।
জুনিয়র মালান্দা, ভলফসবুর্গ
বেলজিয়ামের তরুণ তারকা মিডফিল্ডার জুনিয়র মালান্দা ২০১৫ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। এ সময়ে তিনি জার্মান ক্লাব ভলফসবুর্গের হয়ে খেলতেন। মালান্দার মৃত্যুর পরে ১৯ নম্বর জার্সিকে অবসরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় ক্লাবটি।
মিকলোস ফেহের, বেনফিকা
হাঙ্গেরি জাতীয় দলের স্ট্রাইকার মিকলোস ফেহের ২০০৪ সালে বেনফিকার হয়ে খেলতে নেমে মাঠেই লুটিয়ে পড়েন। আর মাঠে ফেরা হয়নি এই তারকার। ফেহেরের সম্মানে বেনফিকার হয়ে ২৯ নম্বর জার্সিটা এখনো তোলাই আছে।
সেনজো মেইওয়া, অরল্যান্ডো পাইরেটস
দক্ষিণ আফ্রিকা জাতীয় দলের গোলরক্ষক সেনজো মেইওয়া ২০১৪ সালে আততায়ীদের গুলিতে প্রাণ হারান । তার সম্মানে ক্লাবে তার পরিহিত ১ নম্বর জার্সিকে অবসরে পাঠায় তার ক্লাব অরল্যান্ডো পাইরেটস।