১৬ ডিসেম্বর ২০০৪; পোর্ট এলিজেবেথ। টেস্টে মুখোমুখি দক্ষিণ আফ্রিকা-ইংল্যান্ড। মাত্র বিশ বছর বয়সে মাথায় প্রোটিয়াদের ক্যাপ উঠলো ডি ভিলিয়ার্সের। ক্রিকেট কি সেদিন নিজেকে ভাগ্যবান ভেবেছিলো? এমন টি কেন বলছি? ড. বাবার সন্তান এবি ডির স্বপ্ন ছিলো বাবার পথেই হাটার। সেটি তার দ্বারা অসম্ভবও ছিলো না। শুধু ডাক্তারই না, চাইলে হতে পারতেন গায়ক, অ্যাথলেট, শাটলার কিংবা ফুটবলার! শেষ পর্যন্ত নিজেই বেছে নিয়েছিলে ক্রিকেটের বাইশ গজকে।
ব্যাট বল হাতে আমরা তার নাজাকাত তো নিয়তই দেখি। জেনে অবাক হতে পারেন, এবি ডি একটি বৈজ্ঞানিক প্রজেক্টের জন্য নেলসন ম্যান্ডেলার হাত থেকে পুরষ্কারও নিয়েছিলেন। আফ্রিকার যুব ফুটবল দলেও খেলেছেন তিনি। আফ্রিকার জুনিয়র অ্যাথলেটিকসে ১০০ মিটারের রেকর্ড টাইমিং করার রেকর্ডও তার দখলে। চ্যাম্পিয়ন ছিলেন অনুর্ধ্ব ১৯ জাতীয় ব্যাডমিন্টনেরও! ২০১০ সালে বের হয়েছে তার গানের অ্যালবামও! প্রত্যেকটি বিষয়ে এমন নাজাকাত দেখানে আদমি বোধহয় ধরণীতে দ্বিয়ীতটা নেই। সে জন্যই ক্রিকেটকে ভাগ্যবান বলা। কারণ, তিনি শুধু ক্রিকেটটা খেলেনই নি, বরং ব্যাটিংয়ের ব্যাকরণই বদলে দিয়েছেন।
এবি ডি’কে যত জানবেন বিস্ময়ের মাত্রা ততটাই বাড়বে। ওয়ান ডে ক্রিকেটের দ্রুততম এই সেঞ্চুরিয়ানের দখলে রয়েছে টেস্টে ন্যূনতম ১০০ বল খেলা ইনিংসগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ধীরগতির ইনিংসটিও। ওয়ান ডে’তে ৪৪ বলে ১৪৯ করা এবি ডি টেস্টে ৪৩ করতে খেলেছিলেন ২৯৭ বল! ক্রিকেট ইতিহাসে এমন পরস্পরমূখী চরিত্র দ্বিতীয়টি আসেনি। ৬০ বলে ১২০ অথবা পুরো সেশন এক উইকেট হাতে নিয়ে ক্রিজে টিকে থাকতে হবে, এমন সব সমীকরণে যদি কারো ওপর চোখ বন্ধ করে নির্ভর করতে হয় তবে তিনি ডি ভিলিয়ার্স। ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা ব্যাটসম্যান কে, তা নিয়ে তর্ক চলমান, চলবে। শুধু পরিসংখ্যানদের দিকে না তাকিয়ে যদি কার্যকারিতার দিক বিবেচনা করা হয় এবি ডি অন্য যে কারো চেয়ে অনেক এগিয়ে থাকবেন তা বলাই বাহুল্য।
পরিংসখ্যানও যদি বিবেচ্য হয় তাহলেও তাকে ফেলে দেয়ার সুযোগ নেই। একশোর বেশি স্ট্রাইক রেটে পঞ্চাশেরও বেশি অ্যাভারেজে ৫,০০০ এর বেশি রান করার কৃতিত্ব শুধু তারই রয়েছে। ওয়ান ডেতে পঞ্চাশ অ্যাভারেজ ধরে রাখাই একটি দুরুহ বিষয়। সেটি একশোরও বেশি স্ট্রাইক রেটে করার জন্য কতটা অসাধারণ হতে হয় তা বোধ করি বলার প্রয়োজন নেই। ওয়ান ডে তে পঁচিশ ওভারের পর ক্রিজে গিয়ে কোনো খেলোয়াড়ই তিনটি সেঞ্চুরিও করতে পারেননি। সেখানে পঁচিশ ওভারের পরে নেমে ডি ভিলিয়ার্স করেছেন পাঁচটি সেঞ্চুরি!
ইতিহাসে মাত্র দুজন ব্যাটসম্যানেরই টেস্ট এবং ওডিআই গড় পঞ্চাশের ওপরে। একজন ভিরাট কোহলি এবং অপরজন এবি ডি। পরিসংখ্যানের বোবা সংখ্যা অনেক সময়ই বোঝাতে পারে না কারো মাহত্ম্য। এবি ডি পরিংসখ্যানকেও বাধ্য করেছেন তার পক্ষে কথা বলতে। ওয়ান ডে ইতিহাসের দ্রুততম ৫০, ১০০, ১৫০ রানের রেকর্ডও তারই দখলে।
১৯৮৪ সালের আজকের দিনে পৃথিবীতে আগমন আব্রাহাম বেঞ্জামিন ডি ভিলিয়ার্সের। রাগবি ভক্ত ড. আব্রাহাম বি ডি ভিলিয়ার্স এবং মিলি ডি ভিলিয়ার্স দম্পতির তৃতীয় সন্তান এবি ডি। গায়িকা দানিয়েল ডি ভিলিয়ার্স এর সাথে সাত পাঁকে বাধা পড়া এবি ডি দুই পুত্র সন্তানের জনক।