কাশ্মির বিস্ফোরণের দায় স্বীকার করা ‘জৈশ-ই মুহাম্মেদ’ আসলে কী?

কাশ্মির বিস্ফোরণের দায় স্বীকার করা ‘জৈশ-ই মুহাম্মেদ’ আসলে কী?

‘জৈশ-ই মুহাম্মেদ’ আসলে কী?

কাশ্মির বিস্ফোরণ’র দায় স্বীকার করেছে কাশ্মিরি সশস্ত্র সংগঠন ‘জৈশ-ই মুহাম্মেদ’ (জেইএম)। এদের মূল্য লক্ষ্যই ভারত অধ্যুষিত কাশ্মিরের প্রশাসন ও সরকারকে আঘাত করে কাশ্মিরে ভারতীয় আগ্রাসন নির্মূল করা। এদের কর্ম প্রক্রিয়া মূলত আত্মঘাতী ও গুপ্ত হামলা।

‘জৈশ-ই মুহাম্মেদ’র প্রতিষ্ঠাতা মাসুদ আজহার। এর পূর্বে তিনি ‘হারকাত-উল-মুজাহিদিন এর সাথে যুক্ত ছিলেন, এই সংগঠনটি আন্তর্জাতিক সশস্ত্র সংগঠন ‘আল কায়েদা’র সাথে যুক্ত ছিল। মাসুদ আজহার ১৯৯9 সালে ভারতীয় বন্দিবস্থা মুক্ত হন। ১৫০ জন বিমান যাত্রীকে জিম্মি করা হয়ে তার মুক্তির দাবিতে। তার মতাদর্শের যোদ্ধারা ভারতীয় বিমানটি অপহরণ করে আফগানিস্তানের কান্দাহার অঞ্চলে নিয়ে যায়। সেখান থেকেই জিম্মিদের বিনিময়ে আজহারের মুক্তির দাবি করা হয়। ভারতীয় নাগরিকদের তোপের মুখে মুক্ত হয়ে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন জৈশ-ই মুহাম্মেদ।

জাতিসংঘের তথ্য মতে, আল-কায়েদা প্রধান ওসামা বিন লাদেন ও আফগানিস্তানের তালেবানের সহযোগিতায় আজহার জেইএম গঠন করেন। ২০০১ সালে তালেবানদের সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র ন্যাটো বাহিনীর বিরুদ্ধে সক্রিয় ছিলেন আজহার ও তার সংগঠন। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ভারতের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল লক্ষ্যে হামলা চালিয়েছে সংগঠনটি। তাদের বৃহৎ হামলাগুলোর মধ্যে ২০০১ সালে কাশ্মিরের রাজ্যসভা ও রাজধানী নয়াদিল্লীতে অবস্থিত জাতীয় সংসদে আত্মঘাতী হামলা। দুটো হামলায় ৫০ জনেরও অধিক প্রাণহানি ঘটে।

পাকিস্তানে নিষিদ্ধ জৈশ-ই মুহাম্মেদ

পাকিস্তানে নিষিদ্ধ জেইএম। ভারতীয় সংসদে হামলার দায়ে গ্রেফতার হয় আজহার। তবে আদালতে তথ্য-প্রমাণ পর্যাপ্ত না থাকাতে এক বছরের মাথায় মুক্ত হন তিনি। ২০০২ সালে পাকিস্তান জেইএমকে একটি ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে চিহ্নিত করে। তাদেরকে পাকিস্তানের জন্য হুমকি হিসেবে নেয় সরকার। ২০০৩ সালে তৎকালীন পাকিস্তানী রাষ্ট্রপতি পারভেজ মোশারফের উপর দুটি হামলা চালায় তারা। দুটি হামলাই ব্যর্থ হয়। এরপরপরই সে দেশে নিষিদ্ধ করা হয় সংগঠনটিকে।

জৈশ-ই মুহাম্মদের প্রধান মাসুদ আজহার ও বিস্ফোরণে অংশ নেয়া আদিল আহমাদ দার

২০১৬ সালে পুনরায় পাকিস্তান বাহিনীর কাছে আটক হয় মাসুদ আজহার। পাঠানকোটে ভারতীয় বিমান ঘাটিতে হামলার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় তাকে। কমপক্ষে ৬ জনের মৃত্যু হয় সেই হামলায়। এরপর উড়িতে ভারতীয় নিরাপত্তা ঘাটিতে হামলা হয়, নিহত হয় ১৯ জন। এই হামলায়ও জেইএম এর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়।

এই বৃহস্পতিবার ভারত অধ্যুষিত কাশ্মিরের পুলওয়ামা শহরে ভারতের নিরাপত্তা বাহিনীর গাড়িবহরে আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটায় সংগঠনটি। ভারতীয় রিজার্ভ পুলিশের বহরের মধ্যে বিস্ফোরকসহ ঢুকে পড়ে আদিল দার নামক এক সদস্য। প্রাণ হারায় প্রায় অর্ধশত ভারতীয় জওয়ান। এই হামলার দায় স্বীকার করে জৈশ-ই মুহাম্মেদ। কাশ্মিরি মাটিতে এই হামলাই এখন পর্যন্ত ভারতীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় ও নৃশংস।

ভারত অধ্যুষিত কাশ্মিরের ‘বিদ্রোহ দমন বিভাগ’র একজন জ্যৈষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা জানায়, গত দুই বছরে কাশ্মিরের পুলওয়ামা, ট্রালের মত অঞ্চলগুলোতে ভারতীয় বাহিনী ব্যাপকভাবে নাজেহাল হয়েছে। বিশেষত স্বাধীনতাকামী বিদ্রোহীদের তারা কাছেই বেশি আক্রান্ত হয়েছে বলে জানা যায়।

পরিচয় গোপন রেখেই সেই কর্মকর্তা জানান, জেইএম’র এমন বৃহৎ হামলার মাধ্যমে শুধু তারা ভারতে আবার মাথাচাড়াই দিচ্ছে না বরং ভারতে ইসলামিস্ট বিদ্রোহ প্রতিপালনও করছে তারা। এদিকে সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরা সূত্রে জানা যায়, ভারতীয় একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন সেদেশে কাশ্মিরে এখন ৫৬ জন সক্রিয় জেইএম সদস্য অবস্থান করছে।  উক্ত কর্মকর্তা আরও জানান “জেইএম’র বিদেশি বিদ্রোহীরা যারা পাকিস্তান থেকে এসেছে তারা কাশ্মিরের উত্তর দিকে সক্রিয় রয়েছে। এই সন্ত্রাসীদের মধ্যে ২৩ জন আছেন যারা স্থানীয়। দক্ষিণ কাশ্মিরে তাদের নিবাস।”

মাসুদ আজহারের বর্তমান অবস্থান জানা সম্ভব হয়নি। ২০১৬ সালের আটকাবস্থার পর থেকে পাকিস্তানও তার সন্ধান পায়নি এখন পর্যন্ত। শেষ বার মুক্ত হওয়ার পর থেকে পাকিস্তান সরকার তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে কোন অভিযোগ আনেনি এবং জনসম্মুখে তাকে নিয়ে কোন মন্তব্যও করেনি দেশটি।