গত বছরটা বেশ খরায় কেটেছে বিশ্বের অন্যতম সেরা তারকা লিওনেল মেসির। বিশ্বকাপ, উয়েফা বর্ষসেরা, ফিফা বর্ষসেরা ও ব্যালন ডি’অর— এমন চারটি ব্যক্তিগত বড় পুরস্কারের তালিকায় ছিল না মেসির নাম। অবাক করার মতো হলেও সত্য, হতাশা দিয়েই বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে বড় তারকার বছর শেষ হয়েছে। রাশিয়া বিশ্বকাপের আসরে অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে মূল পর্বে জায়গা পেলেও ফ্রান্সের কাছে হেরে শেষ ষোলো থেকে ছিটকে পড়েছিল মেসির আর্জেন্টিনা। পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে মেসি ছিলেন একেবারেই নিষ্প্রভ। খুবই হতাশ করেছেন তিনি আর্জেন্টাইন সমর্থকদের। অবশ্য বিশ্বকাপের আগে ক্লাবের হয়ে সাফল্য পেয়েছেন। বার্সেলোনার হয়ে মেসি স্প্যানিশ লিগ ও কাপ শিরোপা জয় করেছেন। আর্জেন্টিনার জাতীয় দলের জার্সি গায়ে মেসি ব্যর্থ হলেও ক্লাবে ছিলেন সবার আগে। এবারও সবার আগে দৌড়াচ্ছেন তিনি। সেরার লড়াইয়ে পেছনে ফেলছেন সবাইকে। নিজের দল বার্সেলোনাকে শক্ত অবস্থান গড়ে দেওয়ার পাশাপাশি নিজের ব্যক্তিগত ঝুলিকেও সমৃদ্ধ করে তুলছেন।
ক্যারিয়ারের শুরুতে গোল করাটাই ছিল মূলত মেসির কাজ। সে কাজ তিনি নিয়মিত করেই যাচ্ছেন, উপরন্তু ধীরে ধীরে প্লে-মেকার হিসেবেও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে যাচ্ছেন এই ৩৩ বছর বয়সী তারকা। বার্সেলোনার সেরা তারকা মেসি। তাকে ঘিরেই সব পরিকল্পনা গড়ে থাকে দলটি। সাম্প্রতিক সময়ে দারুণ ছন্দেও আছেন এ তারকা। চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ গোলদাতা তিনি। শুধু তাই নয়, এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি অ্যাসিস্ট করেছেন, সুযোগও তৈরি করেছেন অন্যদের চেয়ে সবচেয়ে বেশি। আর ড্রিবলিংয়ে তো বরাবর তিনিই সেরা। সবচেয়ে বেশি পাসও এসেছে এই আর্জেন্টাইনের পা থেকে।
ইউরোপিয়ান শীর্ষ লিগের সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে মৌসুমের সর্বোচ্চ গোলদাতা পান ‘গোল্ডেন শু’ পুরস্কার। গতবার বার্সেলোনার হয়ে ৩৪ গোল করে পুরস্কারটা বগলদাবা করেছিলেন আর্জেন্টাইন জাদুকর লিওনেল মেসি। পঞ্চমবারের মতো পুরস্কারটা জিতেই ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর চারবার জেতার রেকর্ড পেছনে ফেলেছিলেন তিনি। গত মৌসুমটা যেখানে শেষ করেছিলেন, এবার ঠিক সেখান থেকেই যেন শুরু করেছেন মেসি। ইউরোপের সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় সবার ওপরে আছেন তিনি। মেসি (২১ গোল) প্যারিস- সেইন্ট- জার্মেই (পিএসজি) তারকা কিলিয়ান এমবাপে (১৮), জুভেন্টাস তারকা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো (১৮), লিভারপুল তারকা মোহাম্মদ সালাহ (১৭), পিএসজি তারকা এডিনসন কাভানি (১৭), ম্যানচেস্টার সিটি তারকা সার্জিও আগুয়েরোকে (১৭) সহজেই টপকে এবারও গোল্ডেন শু বগলদাবা করবেন, সহজেই অনুমেয়।
শুধু কি তাই? এ মৌসুমে দারুণ এক রেকর্ডেরও দেখা পেয়েছেন আর্জেন্টাইন জায়ান্ট মেসি। প্রথম ফুটবলার হিসবে স্প্যানিশ লিগে ৪০০ গোলের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন মেসি। অবশ্য উপলক্ষটা সাজানোই ছিল। শুধু বাকি ছিল আনুষ্ঠানিকতা। সেটিও হয়ে গেল লা লিগার ক্যাম্প ন্যু স্টেডিয়ামে। এইবার ক্লাবের বিপক্ষে সর্বশেষ দেখায় এই স্টেডিয়ামেই ৪ গোল করেছিলেন মেসি। এবার দরকার ছিল মাত্র ১ গোলের। সেই কাঙ্ক্ষিত গোলেই লা লিগার অনন্য চূড়ায় উঠলেন মেসি। শুধু বার্সেলোনাই নয়, ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগের ভেতর মেসিই একমাত্র ফুটবলার যিনি কিনা লিগে এক ক্লাবের হয়ে ৪০০ গোল করলেন। এই মাইলফলক স্পর্শ করতে মেসির খেলতে হয়েছে ৪৩৫ টি ম্যাচ। যেখানে অ্যাসিস্ট রয়েছে ১৫৯ টি। লা লিগায় ৪০টি দলের মুখোমুখি হয়ে ৩৭টি দলের বিপক্ষেই গোলের দেখা পেয়েছেন মেসি।
দিনদিন মেসি যেন নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার মিশনে নেমেছেন। ২০০৪ সালে লা লিগায় অভিষেক হয়েছিল মেসির। লা লিগার ৯০ বছরের ইতিহাসে সেরা গোলদাতাদের তালিকাতেও বেশ বড় ব্যবধানে এগিয়ে শীর্ষে আছেন আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড। ২০১৮-১৯ মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে মেসি ক্লাবে গোল পেয়েছেন ২৯টি। ১৪টি গোলে সরাসরি তার অবদান আছে। এর মধ্যে লা লিগায় ২১ গোল সাথে ১০ অ্যাসিস্ট, চ্যাম্পিয়নস লিগে ৬ গোল সাথে ১ অ্যাসিস্ট ও অন্যান্য প্রতিযোগিতায় ২ গোল ও ৩ গোলে অবদান রেখেছেন।
মেসি রেকর্ড পাঁচটি ব্যালন ডি অর জয় করেছেন যার মধ্যে চারটি তিনি জিতেছেন টানা চার বছরে। ব্যালনের মঞ্চে এমন আধিপত্য রেখেও গত বছর ফুটবল দুনিয়ার সেরা তারকা মেসিকে দেখা যায়নি ব্যালন ডি’অরের মঞ্চে। ক্রোয়েশিয়ার তারকা খেলোয়াড় লুকা মদ্রিচ মেসি-রোনালদোদের ব্যালন ডি’অরের রাজত্বে ভাগ বসান। এমনকি গত বছর সেরা তিনের তালিকাতেও ঠাঁই মেলেনি মেসির। কিন্তু এবার নিজেকে যেভাবে মেলে ধরেছেন মেসি, তাতে ষষ্ঠবারের মতো ব্যালন মেসির শোকেসে শোভা পেলে অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না।