ভারত অধ্যুষিত জম্মু ও কাশ্মিরে আত্মঘাতী বিস্ফোরণে নিহত হয়েছে ভারতীয় রিজার্ভ পুলিশ সিআরপিএফ’র ৪৬ জন সদস্য। গতকাল বিকেলে জম্মু-শ্রীনগর ৬ নাম্বার মহাসড়কে এই হামলা ঘটে। গত দুই দশকে সেনাবাহিনীর উপর হওয়া সবচেয়ে বড় হামলা ছিল এটি। হামলার পরপরই কাশ্মিরি সশস্ত্র সংগঠন ‘জৈশ-ই মুহাম্মেদ’ এ হামলার দায় স্বীকার করে নিয়েছেন। গতকাল থেকেই আন্তর্জাতিক মহল থেকে মন্তব্য আসতে দেখা গেছে।
এ হামলায় ভারতীয় প্রশাসন দায়ী করেছে পাকিস্তানকে। এ বিষয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, “স্বাধীন ভারতে কাশ্মিরে এটাই সবচেয়ে বড় হামলা। দোষীদের ছাড়া হবে না। প্রতিবেশী রাষ্ট্র ষড়যন্ত্রের কোনভাবেই ছাড় পাবে না। এক জোট হয়ে মোকাবেলা করতে হবে।” একই সুরে সুর মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রও দায়ী করছে পাকিস্তানকে। গতকাল বৃহস্পতিবারই হোয়াইট হাউজের মিডিয়া সচিব সারা স্যান্ডার্স বলেন, “অবিলম্বে জঙ্গিদের সহায়তা করা বন্ধ করে তাদের বিরুদ্ধে চরম পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য পাকিস্তানকে নির্দেশ দিল আমেরিকা। পাকিস্তানে জঙ্গিদের আশ্রয় দেওয়া বন্ধ হোক। যে সব জঙ্গিদের আসল উদ্দেশ্য হিংসা ও বিদ্বেষ তৈরি করা, তাদের এই মুহূর্তে কঠোর শাস্তি দেওয়া উচিত।” অন্যদিকে এই অভিযোগ জোরালোভাবে প্রত্যাখান করেছে পাকিস্তান। আজ শুক্রবার পাকিস্তান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতি বলা হয়েছে, ভারতের সংবাদ মাধ্যম এবং দেশটির সরকার কোনো তদন্ত ছাড়াই কাশ্মিরের হামলায় পাকিস্তানের জড়িত থাকার যে অভিযোগ করছে ইসলামাবাদ তা জোরালো ভাষায় প্রত্যাখান করছে।
আত্মঘাতী এ বিস্ফোরণে আমেরিকা ছাড়াও বিবৃতি দিয়েছে জার্মানি, মালদ্বীপ, সৌদি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিশ্বের অনেক দেশ। তারা ঘটনা নিন্দা জানিয়ে ভারতের পাশে থাকারও ঘোষণা দিয়েছে। ভারতের প্রতিবেশী চীনও পাশে থাকার ঘোষণা দিলেও মাসুদ আজহারের বিষয়ে তারা ব্যক্তিগত অভিমত ব্যক্ত করতে নারাজ। ভারত এ ঘটনার জন্য দায়ী করছে হাফিস সাইদকে। এবং তাকে আন্তর্জাতিক জঙ্গি ঘোষণা। সেই সাথে মাসুদ হাজহারকে আন্তর্জাতিকভাবে নিষিদ্ধের দাবিও তুলছে ভারতীয় মিডিয়া। মাসুদ আজহারের নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারেই মুখ খুলতে নারাজ হয়েছে চীন। এ বিষয়ে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জেঙ সুয়াং বলেন, “এই বিষয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ১২৬৭ কমিটির স্পষ্ট কিছু শর্ত রয়েছে। তাছাড়া আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনের তালিকায় নামও রয়েছে জৈশ–এর। অত্যন্ত সাবধানতা এবং দায়িত্বের সঙ্গে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি নিয়ে পদক্ষেপ করবে চীন।”।
তবে ভারতীয় প্রশাসনের উচিত হবে, দোষারোপের সংস্কৃতি থেকে মুক্ত হয়ে কাশ্মিরের ঐতিহাসিক এই সংকট সমাধান করা। না হলে আফজাল গুরুরা পুনরায় ফিরে আসবে এবং আদিল দারেরা বিস্ফোরক নিয়ে ঢুকে যাবে সেনা বহরের মাঝে!