গত বছর অক্টোবরে একজন রাজনীতিবিদ একজন সংবাদিককে ‘চরিত্রহীন’ বলার পর যখন নড়ে চড়ে বসে সাংবাদিক মহল। তখন রাজনীতিবদিকে গ্রেফতার করতে সরকর সময় নিয়েছিল মাত্র নয় দিন। আমাদের সামনে যদি সেই মুহূর্তে সাংবাদিক হিসেবে আমাদের ‘ক্ষমতা’র জন্য ঈর্ষা হয়ে থাকে তবে বলবো আমাদের অপরাধও কম নয়! আমরা প্রকৃত অর্থে সাংবাদিক হিসেবে কলঙ্কিত। আমরা আদায় করতে পারিনি ‘সাগর-রুনি’ হত্যাকাণ্ডের বিচার। আজ ৭ বছর হয়ে গেলেও প্রশাসন ব্যর্থ হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে। অথচ আমাদের সাংবাদিক সমাজের মাথাব্যাথা নেই। আমাদের ব্যথা আটকে রয়েছে ‘খামোশ’ শব্দের আড়ালে। সাংবাদিক হিসেবে আমরা নিশ্চিত করতে পারিনি আমাদেরই হত্যার বিচার।
৭ বছরে মামলার সুরাহাতো দূরের কথা তদন্ত প্রতিবেদনই দেয়া হয়নি। আদালতের নিয়ম অনুযায়ী সামনে ১৭ ফেব্রুয়ারি মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার দিন থাকলেও এখন পর্যন্ত ৬৩ বার সময় চেয়ে নিয়েছেন তদনন্ত কর্মকর্তারা। বিভিন্ন সময়ের তারা তদন্তের অগ্রগতির প্রতিবেদন দিলেও মূল প্রতিবেদন দেয়া হয়নি। এমনকি বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা র্যাবের এএসিপি মো. শাহিদার রহমানও সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারেন না। ঠিক কবে নাগাদ দেয়া হবে তদন্ত প্রতিবেদন।
সর্বশেষ ২০১৭ সালের মার্চে তৎকালীন তদন্ত কর্মকর্তা র্যাবের ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড ফরেনসিক উইংয়ের সহকারী পুলিশ সুপার মহিউদ্দিন আহমেদ একটি প্রতিবেদন দিয়েছিলেন। তিনি তখন বলেছিলেন, গতানুগতিক তদন্তের বাইরে গিয়ে অত্যাধুনিক তদন্ত পদ্ধতি ও বৈজ্ঞানিক তথ্য-প্রমাণ প্রাপ্তির লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের দুটি অত্যাধুনিক ল্যাবকে এ তদন্তের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। ল্যাব থেকে পাওয়া ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদন বিস্তারিত পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে।
সাগর-রুনির ডিএনএ পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছিল বিদেশে। সেখান থেকে কি রিপোর্ট এসেছে সে সম্পর্কেও কোন কিছু জানানো হয়নি। এতো গেল তদন্ত নিয়ে তালবাহানা কিন্তু আসামীদের অবস্থা কি? তারা যদি অপরাধী না হয় তাহলে নিশ্চয় তাদের কারাগারে রাখাটা অন্যায় হবে অন্যদিকে গ্রেফতারকৃত যে দু’জন জামিনে মুক্ত তারা যদি অপরাধী হয়ে থাকে, তাহলেই বা কি। সাংবাদিক হত্যার বিচার করতে গেলেই ক্ষমতাসীন প্রশাসনের মধ্যে এমন গড়িমসি লক্ষ্য করা যায়। এর কারণ কি কখনো খতিয়ে দেখা হয়েছে।
অন্যদিকে ২০১৭ সালের এক হিসেবে দেখা যায়, বিগত একুশ বছরে সারাদেশে ২৮জন সাংবাদিক হত্যার ঘটনা ঘটেছে। হামলার শিকার হয়েছেন অন্তত ২৫জন সাংবাদিক। এসকল মামলার ক্ষেত্রেও একই রকম গড়ি মসি লক্ষ্য করা গেছে। শ্রেফ গত বছর ‘নিরাপদ সড়ক’ আন্দোলনের সময় সরকার দলীয় কর্মীরাই একেরপর এক হামলা করেছে সাংবাদিকদের উপর।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় খুন হন মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার এবং এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি। দুজনকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। ওই রাতে তারা ছাড়া ঘরে ছিল তাদের একমাত্র শিশুসন্তান।