উইঘুর মুসলমানদের উপর নির্যাতন বন্ধের আহবান জানিয়েছে তুরস্ক

উইঘুর মুসলমানদের উপর নির্যাতন বন্ধের আহবান জানিয়েছে তুরস্ক

উইঘুরের মুসলমানদের উপর চলা চীনের নির্যাতনকে ‘মানবতার জন্য তীব্র লজ্জা’ বলে আখ্যা দিয়েছে তুরস্ক। এর সাথে সেখানকার কনসেনট্রেশন ক্যাম্পগুলো বন্ধ করার আহ্বানও জানিয়েছে দেশটি।

শনিবার এক বিবৃতিতে তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হামি অকসয় জানিয়েছেন চীন ইচ্ছেমত উইঘুরদের আটক করছে। এখন পর্যন্ত দশ লাখেরও বেশি উইঘুর আটক রয়েছে। তিনি বলেন, পশ্চিম চীনে তুর্কীয় মুসলমান জনগোষ্ঠীকে জোরপূর্বক ও কঠিন শৃঙ্খলায় দমিয়ে রাখা হচ্ছে।

হামি অকসয় বলেন, “দশ লক্ষেরও বেশি উইঘুর তুর্কি মুসলমানকে সেখানে ইচ্ছামত আটক করা হয়েছে। তাদেরকে রাখা হয়েছে কনসেনট্রেশন ক্যাম্পগুলোতে। সেখানে তাদের উপর চলছে নানাবিধ নির্যাতন এবং তাদেরকে রাজনৈতিকভাবে মগজ ধোলাইয়ের কাজ চলছে। এসব এখন আর গোপন নেই”।

তিনি আরও বলেন “আমরা চীনের কতৃপক্ষকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। আমরা তাদের অনুরোধ করেছি যেন তারা উইঘুর তুর্কিদের মৌলিক ও মানব অধিকার নিশ্চিত করে এবং সকল কনসেনট্রেশন ক্যাম্প বন্ধ ঘোষণা করে।”

এদিকে তুরস্কের রাষ্ট্রপতি এরদোগান একবার চীনের বিরুদ্ধে উইঘুরে ‘গণহত্যা’র অভিযোগ এনেছিলো। তবে তারপর থেকেই তিনি চীনের সাথে সফল ভাবে রাজনৈতিক ও কূটনীতিক সম্পর্ক জোরদার করেছেন।

উল্লেখ, চীনের জিনজিয়ান প্রদেশে প্রায় এক কোটি উইঘুর জনতার বাস। জিনজিয়ানের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪৫ শতাংশই তুর্কীয় মুসলমান সম্প্রদায়। অনেক আগে থেকেই সেখানে মুসলমানদের উপর চীনের সংস্কৃতিক, ধর্মীয় এবং অর্থনৈতিক বৈষম্যের অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। চীনের অনেক জায়গায় ইসলাম ধর্ম পালনে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কোন মুসলমান সেখানে নামাজ আদায় করলে, রোজা রাখলে, দাড়ি রাখলে, বা কোন মুসলমান নারী হিজাব পরলে, মাথায় স্কার্ফ দিলে মোট কথা ইসলামের যেকোন রকম বাহ্যিক নির্দেশ মেনে চললেই তাদেরকে গ্রেফতার করা হচ্ছে।

উইঘুর জনগোষ্ঠীর উপর চীনের নির্যাতনের খবর এখন পুরো বিশ্বগণমাধ্যমে শিরোনাম। গত বছর আগস্ট মাসে জাতিসংঘ জানিয়েছিলো তারা চীনে উইঘুরদের অবস্থা নিয়ে কিছু বিশ্বাসযোগ্য তথ্য পেয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয় ১০ লক্ষেরও বেশি উইঘুর ও তুর্কি ভাষী মানুষকে আটক করে ‘রি- এডুকেশন’ ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে তাদেরকে বাধ্য করা হচ্ছে ইসলাম পরিত্যাগে।

এদিকে বেইজিং বরাবরই এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলেই দাবি করে আসছে। তাদের দাবি সেখানকার উইঘুর জনতা স্বেচ্ছায় ক্যাম্পগুলোতে যাচ্ছে যেন কর্মমুখী শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে তারা চাকরির বাজারে প্রবেশ করতে পারে। এতে তারের মধ্যে চরমপন্থা বা সন্ত্রাসীমূলক চেতনাও বিনাশ হচ্ছে বলে দাবি করে চীন।

২০০৯ সালের রক্তক্ষয়ী এক দাঙ্গার পর থেকেই চীন প্রশাসন উইঘুরদের উপর অত্যাচারের মাত্রা বাড়িয়ে তুলেছে বলে জানা যায়। অনেক উইঘুর পালিয়ে তুরস্কে চলে যাচ্ছে। গত মাসে চীন একটি নতুন আইন পাশ করেছে। যার মাধ্যমে ইসলামকে সমাজতন্ত্রের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা যাবে বলে আশা করছে তারা। তবে মুসলমানদের উপর এত অত্যাচারের পরেও মুসলিম অধ্যুষিত কোন রাষ্ট্র এখনো এর বিরুদ্ধে কোন কথা বলেনি। বেশিরভাগ মুসলিম দেশের জন্যই চীন অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিধায় এই নিরবতা।