প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে পৃথিবীর সব বড় বড় চিন্তকই ভেবেছেন। হালের সব চেয়ে জনপ্রিয় চিন্তক জিজেক প্রেম নিয়ে অনেক কথা বলেছেন। ‘দ্যা পার্ভার্টস গাইড টু সিনেমা’ এই শিরোনামে একটা ভিডিওতে জিজেক চার্লি চ্যাপলিন’র নির্মিত ও অভিনীত বিখ্যাত সিনেমা ‘সিটি লাইটস’র (১৯৩১) আলোকে কাউকে ভালোবাসার বা কারো প্রেমে পড়ার সাইকোলজিটা ব্যাখ্যা করেছেন।
জিজেক বলছেন, “আমরা যখন কারো প্রেমে পড়ি তখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই পড়াটা হয় ফেইক বা কৃত্রিম। মানে, কোন ছেলে বা মেয়ে বাস্তবে যে স্বভাবের যে মননের সেটা ভালোভাবে বিবেচনায় নিয়ে তারা একজন আরেকজনের উপর ক্রাশিত হয় না। আমরা মূলত সঙ্গী সম্পর্কে আমাদের মস্তিষ্কে যে সেক্স্যুয়াল ফ্যান্টাসি, মানে আমাদের মাথায় পছন্দের নারী বা পুরুষ সম্পর্কে যে ছবিটা আমরা এঁকে রেখেছি সে ছাঁচে ফেলেই কারো প্রেমে পড়ে থাকি।
কিন্তু একজন নারী বা পুরুষ তো আদতে সেরকম নাও হতে পারে যেমনটা তার প্রেমে পড়ার আগে আপনি কল্পনা করেছেন। ফলত পরবর্তীতে যখন আমাদের পার্সোনাল ডিজায়ার বা ব্যক্তিগত আকাঙ্খার সাথে ক্রাশের কোন কিছু মিলেনা তখন ভালোবাসা সহিংসতায় রূপ নেয় এবং এটা হয়ে যায় বিরক্তিকর প্রেম”।
এই ব্যাপারটাকে জিজেক ব্যাখ্যা করেছেন— “কোন নারী বা পুরুষ সম্পর্কে ভালোভাবে না জেনে প্রেমে পড়ার বিপদ” হিসেবে। এখানে চ্যাপলিন সিনেমায় তার ক্রাশকে প্রেম নিবেদন করে এইভাবে, “আমি নির্লজ্জ এবং আমি তোমার কাছে আমাকে সপে দিচ্ছি, এবং একই সাথে ভীত”। এর মাধ্যমে চ্যাপলিন মূলত তার নিজেকে সম্পূর্ণভাবে উন্মূক্ত করেছে একই সাথে দর্শক এবং সিনেমায় তার প্রেমিকার কাছে। এবং জিজেক বলছেন, এটাই মূলত কাউকে প্রোপজ করার জন্য আদর্শ পদ্ধতি। মানে আপনি নিজে যা সেটা সম্পূর্ণভাবে আপনার ভালোবাসার নিকট প্রকাশ করা যাতে আপনাদের মাঝে কোন দেয়াল থেকে না যায়। ব্যক্তি আপনি যেন সম্পূর্ণরূপে উন্মোচিত হন। তাহলে ভালোবাসাটা মরটিফাইং লাভ মানে বিরক্তিকর ভালোবাসায় গিয়ে ঠেকার চান্স কম। তারপরে সিনেমা শেষ হয় স্ক্রিনে ‘দি এন্ড’ লিখা ভেসে ওঠে। জিজেক এইটার ব্যাখ্যা দিলেন এমন : এর আগে সিনেমা আপনি কিভাবে ভালোবাসা অন্যকে জানাবেন,প্রোপজ করবেন, ক্রাশের সামনে আসলেই নিজেকে কিভাবে উপস্থাপন করবেন সেটা দেখানো হল, কিন্তু তারপরে কি রিঅ্যাকশন হয় সেটা আর দেখানো হয় নি। মানে এর ফল পজিটিভ নেগেটিভ দু’টিই হতে পারে, মানে আপনার ভালোবাসা কবুল হওয়ার, নাকচ হওয়ার উভয় সম্ভাবনাই থেকে যায়। কিন্তু আমরা কেউ যেহেতু ভবিষ্যৎ সম্পর্কে শিউর না ফলত এটা নিয়ে উদ্বিগ্ন না হওয়াটা ভালো। ফিল্মে দেখা যায় ‘দি এন্ড’র পরে রোমান্টিক মিউজিক চলমান থাকে তার মানে ভালোকিছুই হবে হয়তো।
এই লেখায় জিজেকের লেকচার পুরোপুরি অনুবাদ না করে তিনি মূলত কি বলতে চেয়েছেন সে বিষয়টি আলোকপাত করা হয়েছে।