ইমরুলে কি সত্যিই বিরূপ বিসিবি?

ইমরুলে কি সত্যিই বিরূপ বিসিবি?

আসন্ন নিউজিল্যান্ড সফরের জন্য ঘোষিত দল নিয়ে বিতর্কের মুখে পড়েছে বিসিবি। এটি নয়া মাত্রা লাভ করেছে ইমরুলের প্রকাশ্য বয়ানের পর। গণমাধ্যমগুলোতো তার বয়ানের পক্ষে বিপক্ষে চলছে বিস্তর আলোচনা।

এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি যা বলেছেন তার সারমর্ম দাড়ায় এক সিরিজে ৩৪৯ রান করার পরেও তাকে মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হয় পরের সিরিজেই বাদ পড়ার জন্য। এবং কেন তিনি বাদ পড়েন, কি করলেই বা নিয়মিত হবেন সে বিষয়টিও তার কাছে স্পষ্ট করা হয় না। ইমরুলের দাবি অসত্য নয়। এত বছরের ক্যারিয়ারে ইমরুল কেন এখনো নিয়মিত হতে পারলেন না সেটি নিয়ে ভাববার অবকাশ রয়েছে। দেখা প্রয়োজন এখানে আক্ষরিক অর্থে দায়টা কার সেটিও।

ইমরুলের ওয়ান ডে রেকর্ডের দিকে একটু নজর দেয়া যাক প্রথমে। ৭৮ ওয়ান ডে ৩২.০২ অ্যাভারেজে তার সংগ্রহ ২৪৩৪ রান। ১৬ টি অর্ধ শতকের সাথে রয়েছে ৪ টি শতকও (যার দুটিই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে), স্ট্রাইক রেট ৭১.১০ (শুধু ভারত, আয়ারল্যান্ড এবং জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে স্ট্রাইক রেট ৭০ এর উপরে) । পয়লা একটু স্ট্রাইক রেটের বিষয়ে কথা বলা যাক। দ্রুতগতিতে রান তোলার সক্ষমতা এখন সময়ের দাবি। এবস্থায় ৭১.১০ স্ট্রাইক রেট তার বিপক্ষেই কথা বলে। তার স্ট্রাইক রোটেশনের দক্ষতাও প্রশ্নবিদ্ধ। যার ফলে সিঙ্গেল-ডাবলস এর বদলে তাকে নির্ভর করতে হয় বাউন্ডারির উপর। বড় দলগুলোর বিপক্ষে শুরু থেকেই চালিয়ে খেলার বিপদ সম্পর্কে আমরা ওয়াকিফ। তার রেকর্ডও বলে এসব দলের বিপক্ষে তিনি শুরুতেই প্যাভিলিয়নের পথ ধরে বিপদই বাড়িয়েছেন।

এবার দেখা যাক, নিকট অতীতে যারা ওপেনিংয়ের দায়িত্বে ছিলেন তাদের স্ট্রাইক রেটের দিকে। লিটনের স্ট্রাইক রেট ৮১.৩২; সৌম্যের ৯৮.১৫। লিটনের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে ধারাবাহিকতার অভাব। ইমরুলের মতো সৌম্যের স্ট্রাইক রোটেশন নিয়ে সমস্যা থাকলেও সৌম্যের ওপর নির্বাচকদের নেক নজর সম্পর্কে সবাই জানে। এ লেখায় সেটি নিয়ে কোনো আলোচনা করতে চাচ্ছি না। কিন্তু বোবা পরিসংখ্যানেই একটা বিষয় স্পষ্ট যে, বাকিদের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি জায়গায় বেশ পিছিয়েই রয়েছেন ইমরুল।

ইমরুলের বিপক্ষে আরো একটি বিষয়ের জিকর আবশ্যক। এতোদিন জাতীয় দলে খেলার পরেও তিনি তার উইকেটের গুরুত্ব অনুধাবন করতে পেরেছেন বলে জোড় দিয়ে বলার জো নেই। কখনো শুরুতেই কখনো বা সেট হবার পরে খামখেয়ালী শট খেলে উইকেট বিলিয়ে দেয়ার বদ অভ্যাস তার বহু পুরোনো। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে যে সিরিজটির জিকর তিনি করেছেন সে সিরিজে ক্ষণিকের জন্য মনে হয়েছিল তিনি বিষয়টি উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছেন। কিন্তু সেটি যে একটি মায়াবী বিভ্রম ছিলো তা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে উইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজেই।

তামিমের স্ট্রাইক রেট এখনো ৮০ এর নিচে, সৌম্যের আর ইমরুলের সমস্যা যে একই তা তো উপরেই উল্লেখ করা হয়েছে; লিটনও ধারাহিক না, তবু তাদের উপর আস্থা রাখা কেন? সময়ের পরিক্রমায় তামিম নিজেকে নিয়ে গিয়েছেন অন্য উচ্চতায়। আগের তুলনায় একটু ধির গতিতে শুরু করলেও তামিমের ব্যাটে রান বাংলাদেশের বড় সংগ্রহের ভিত গড়ে দেয়ার ক্ষেত্রে মূখ্য ভূমিকা রাখে। সৌম্যকে নিয়ে নিয়ত সমালোচনা হলেও তার বেশ কিছু ইনিংস রয়েছে যেগুলো তার পক্ষে দাড়িয়ে যায়। লিটনের প্রতিভা নিয়ে ক্রিকেট মহলে কোনো সংশয় নেই। কিন্তু ইমরুল এখনো তার পক্ষে এমন কিছু দাঁড় করাতে পারেননি। এটা নিরেট সত্য।

এবার একটু অন্য দিক দিয়ে দেখা যাক বিষয়টি। ইমরুল বরাবরই ওপেনিং ভিন্ন অন্য পজিশনে তার অস্বস্তির কথা জানিয়েছেন। তারপরেও তাকে বারংবার বিভিন্ন পজিশনে খেলানো হয়েছে, এবং সেখানে ব্যর্থতার জেড়ে তাকে বাদও দেয়া হয়েছে। একজন খেলোয়াড়ের সকল পজিশনে ব্যাট করতে পারার যোগ্যতা আবশ্যক বলে মনে করার কোনো যুক্তি নেই। এটি যদি কেউ পারে সেটি তার বাড়তি যোগ্যতা। ইমরুল যেহেতু নিজেই কবুল করে নিয়েছেন যে এ যোগ্যতা তার নেই, তাই এটি সামনে এনে তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার কোনো মানে নেই।

সৌম্য বা লিটনের ক্ষেত্রে আমরা বিসিবিকে যতটা উদার দেখি ইমরুলের বেলায় ততটা না। সৌম্য প্রতি দশ ইনিংস পরপর একটি ইনিংস খেলেও যেখানে বর্তে যান, সেখানে ইমরুল দু ইনিংসে ব্যর্থ হলেই ইনায়াত বঞ্চিত হয়ে পড়েন। এখন, ইমরুলে যদি আস্থার এতোটাই অভাব থাকে তবে তাকে ডাকা কেন? এশিয়া কাপে যখন ইনজুরির দরুণ দলের তথৈবচ হালত, তখন ইমরুলেই আস্থা খোঁজা হয়েছিলো বলেই দেখেছি আমরা। তার প্রতিদানও তিনি বেশ ভালো ভাবেই দিয়েছিলেন। এখন, মিডল অর্ডারে শূন্যতা পূরণে ইমরুলে দ্বারস্থ হওয়া একটি স্পষ্ট বার্তা। সেটি দেয়ার পরে পুরো ইউ টার্ন নেয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলার অধিকার ইমরুলের রয়েছে।

জাতীয় দলে প্রবেশের পথ কি সেটাও তো স্পষ্ট না এখনো। এর দায়টি পুরোপুরি নির্বাচকদেরই। নিউজিল্যান্ড সফরের দলটিই দেখুন, এখানে এক ইনিংস দিয়েই দলের অংশ হয়ে গিয়েছেন সাব্বির। অপর ওপেনার সৌম্যের হালত হতশ্রী। তবু যদি তারা দলের সঙ্গে যেতে পারেন তাহলে সৌম্যের চেয়ে বেহতার করা ইমরুলের অপরাধটি কি? এমন না যে, তিনি নিউজিল্যান্ডে আগে খেলেননি। ইমরুল ভাবনায় রয়েছেন, নির্বাচকদের এ বয়ানটি দিয়ে কি বুঝবেন? ঠিক কি করলে তিনি নিয়মিত হবেন, বা কোন দিক থেকে বাকিরা তার চেয়ে বেহতার সেটি তাকে জানানোর দায় নির্বাচকদের; গণমাধ্যমের না। সেটি যে তাকে জানানো হয় না, তা তো ইমরুলের বয়ানেই স্পষ্ট।

যার বাদ পড়াটা নিয়ে সামান্য সাওয়াল উঠার সুযোগ থাকার কথা না, তিনি শিরোনামে এসেছেন নির্বাচকদের খামখেয়ালীতে। এটি অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। নিউজিল্যান্ড সফরে বিপিএল এর পারফরম্যান্স প্রভাবক না, এমন কথা তারা বলছেন, আবার সাব্বির এবং তাসকিনের ফেরার দুয়ার যে বিপিএল’র বদৌলতেই খুলেছে সেটিও তারাই বলছেন! এখন কোনটাকে সত্য ধরা হবে তা নিয়ে বিভ্রান্তি স্বাভাবিক।

(চলবে…)