দেরিতে হলেও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ‘সুষ্ঠুতা’ নিয়ে সত্য প্রকাশ করলেন বিদেশি পর্যবেক্ষকেরা। নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়মের সাক্ষী ছিল স্বয়ং জনগণ। তারপরও বিদেশি পর্যবেক্ষকেরা গেয়েছিলেন সরকারের সাফাই। জানিয়েছিলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু ও গণতান্ত্রিক হয়েছে। এবার তারাই সংশয় প্রকাশ করছে নির্বাচনের সুষ্ঠুতা নিয়ে। অন্যদিকে ‘সার্ক হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন’র কোন সম্পর্কই নেই ‘সার্ক’র সাথে।
সংবাদ মাধ্যম রয়টার্স’র এক প্রতিবেদনে কানাডার পর্যবেক্ষক তানিয়া ফস্টার্স এই সংশয় প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে যে সার্ক হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের যোগসূত্র রয়েছে বা সংগঠনটি যে সার্কের কেউ নয়, তা তিনি জানতেন না। তিনি রয়টার্সকে বলেন, “বিষয়টি আমার ভালো লাগেনি। আমার মনে হচ্ছে সবকিছু আমি একটু বেশি সরলভাবে নিয়েছিলাম।”
একই রকম মনোভাব নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী সংগঠন সার্ক হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট হাইকোর্টের সাবেক বিচারপতি মোহাম্মদ আবদুস সালামেরও (৭৫)। তিনি বলেছেন, ভোটার ও নির্বাচন কর্মকর্তাদের কাছ থেকে তিনি শুনেছেন, আওয়ামী লীগের কর্মীরা ভোটের আগের রাতেই ব্যালট বাক্স ভরেছেন, ভোটারদের ভয়ভীতি দেখিয়েছেন। আমার মনে হচ্ছে নতুন ভোট হওয়া উচিত। আব্দুস সালাম বলেন, “ আমি সবকিছু জানতে পেরেছি এবং বলতে পারি, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি।”
সার্ক হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের সঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যোগাযোগ আছে বলে অভিযোগ আছে। সংগঠনটির উপদেষ্টা কমিটিতে আছেন আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির দুই সাংসদ। এ ছাড়া নাম ও লোগোতে মিল থাকলেও দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থার (সার্ক) সঙ্গে সার্ক হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের কোনো সম্পর্কই নেই।
সার্ক হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন কানাডা, ভারত, নেপাল ও শ্রীলঙ্কা থেকে কয়েকজন পর্যবেক্ষক নিয়ে আসে। ওই দলেই ছিলেন তানিয়া ফস্টার। ৩০ ডিসেম্বর ভোট গ্রহণের দিন এবং তার পরদিন ওই পর্যবেক্ষকেরা সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে।
তানিয়া ফস্টার আরও বলেন, ‘আমরা কেবল ঢাকার নয়টি ভোটকেন্দ্রে গিয়েছিলাম, তারপরও আমাদের প্রতিবেদন যে এতটা গুরুত্ব পাবে, তা বুঝতে পারিনি। আমরা অপেক্ষাকৃত প্রতিকূল এলাকাগুলোয় যাইনি।’
এসকল অভিযোগ অস্বীকার করে উল্টো পর্যবেক্ষকদের দোষারোপ করছে সংগঠনটি। তবে এটি এখন পুরোপুরি নিশ্চিত যে সরকার জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে যে ‘সাজানো’ নির্বাচন আয়োজন করেছেন। ঠিক তেমনি নির্বাচনের পর্যবেক্ষকদের এনেছিলেন ‘সাজিয়ে’। যাদের কাজেই হবে— তোতাপাখির মতো বলা। অবশ্য নির্বাচন কমিশনতো ‘মূর্তি’র মতো পর্যবেক্ষক চেয়েছিলেন। কিন্তু সেই নাটক এখন জনগণের সামনে প্রকাশ হতে শুরু করেছে। এখন দেখার বিষয়, নির্বাচনের এই কারচুপি আর কতভাবে আড়াল করে রাখে সরকার।