নির্বাচন নিয়ে অনিয়মতো জনগণই প্রত্যক্ষ করেছিল। কিন্তু তার পরিমাণ পরিমাপ করা সম্ভব হয়নি। মূলত সে কাজটিই করে দিয়েছে বেসরকারি সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। তাদের মতে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অনিয়ম হয়েছে ৯৪ শতাংশ।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর মাইডাস সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য উপস্থাপন করেন। দ্বৈবচয়নের ভিত্তিতে ৫০টি আসন বাছাই করে তা পর্যবেক্ষণ করে টিআইবি। নভেম্বর ২০১৮ থেকে ১০ জানুয়ারি ২০১৯ পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহ করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে প্রতিষ্ঠান যেখানে স্পষ্ট ভাবেই নির্বাচন তার ‘গ্রহণযোগ্যতা’ হারিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে তারা এই সকল অনিয়মের বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছেন। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ভোটে নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে পারেনি। সবার জন্য সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারেনি। নিশ্চিত করতে পারেনি সব দলের প্রার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টিও।
টিআইবি’র ওই প্রতিবেদনে দাবি উল্লেখ করা হয়— তাদের নির্বাচিত ৫০টি আসনের মধ্যে ৪৭টিতেই অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। আর জালভোট পড়েছে ৪১টি আসনে। ৩৩টি আসনে আগের রাতে ব্যালটে সিল মারা হয়েছে। এসব আসনের প্রায়ই কেন্দ্রে একই রকমের ঘটনা ঘটেছে। নির্বাচনে জাল ভোট পড়েছে ৮২ শতাংশ আসনে। আর ৬৬ শতাংশ আসনে নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালট বাক্সে সিল মারা হয়েছে। আচরণবিধি লঙ্ঘনে এগিয়ে আওয়ামী লীগ। এমন কোন আসন নেই যেখানে তারা আচরণবিধি লঙ্ঘনে করেনি আর তার পরিমাণ কোথাও ৭০ শতাংশের নিচে নামেনি।
টিআইবি’র প্রতিবেদনের পর এক রকম অস্বস্তিতে পড়েছে সরকার দলীয় নেতৃবৃন্দ। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরতো বলেই ফেলেছেন ‘টিআইবি রূপকথার গল্প’ শোনাচ্ছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনারও সরকারের সাথে সুর মিলিয়ে প্রত্যাখান করছে প্রতিবেদন। কিন্তু তাতেই কি সত্য ঢাকা পড়ে যাবে!
জনগণতো দেখেছেই ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে কি ঘটেছিল। টিআইবি’র প্রতিবেদন লিখিত দলিল হিসেবেই কাজ করছে। অনিয়ম এবং ব্যালট মুঠোবন্দি করে আয়োজন করা নির্বাচনে ফলাফল ক্ষমতাসীনরা তাদের পক্ষে নিলেও দ্রুতই অবসান ঘটবে এই কর্তৃত্ববাদী মনোভাবের। ফিরে আসবে গণতন্ত্র।