আসন্ন ডাকসু নির্বাচনের গঠনতন্ত্র সংশোধনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আট দফা দাবি পেশ করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। দীর্ঘ ২৮ বছর পর হতে যাওয়া ডাকসু নির্বাচনের জন্য গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে তারা দাবিগুলো উত্থাপন করে।
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গতকাল সোমবার দুপুরে গঠনতন্ত্র সংশোধন কমিটির আহবায়ক অধ্যাপক মিজানুর রহমানের কাছে লিখিত আকারে দাবিগুলো তুলে ধরেন ছাত্রদলের বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সভাপতি আল মেহেদি তালুকদার এবং সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার সিদ্দিকি। পরে সন্ধ্যায় এ বিষয়ে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরেন ঢাবি ছাত্রদল নেতৃবৃন্দ। এসময় সেখানে ছাত্রদলের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সহাবস্থান পাওয়ার ক্ষেত্রে ছাত্রদল প্রশাসনের কেমন সাঁড়া পাচ্ছে এমন প্রশ্নে করা হলে আল মেহেদী তালুকদার বলেন, আমরা গঠনতন্ত্র সংশোধন কমিটির আহবায়ক অধ্যাপক মিজানুর রহমানের সাথে আগের দিন কথা বলেছিলাম। সেখানে তিনি আমাদের কথা দিয়েছিলেন ক্যাম্পাসে সকল ছাত্র সংগঠনের সহাবস্থানের বিষয়ে উপাচার্যের সাথে তিনি কথা বলবেন। আজ (সোমবার) আমরা তার কাছে স্মারকলিপি দেয়ার সময় তার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাই। তিনি (মিজানুর রহমান) আমাদের বলেছেন উপাচার্য নিজেও এই বিষয়ে একমত। ক্যাম্পাসের কোন ছাত্র যাতে আক্রমণের শিকার না হয় সেটা প্রশাসন নিশ্চিত করবে।
ক্যাম্পাসে বারবার আক্রমনের শিকার হয়েছে অভিযোগ করে মেহেদি বলেন, আমরা যখনই ক্যাম্পাসে গিয়েছি তখনই আমাদের কর্মীদের আক্রমণ করা হয়েছে। মারধর করে পুলিশে দেয়া হয়েছে। মাত্র দুই মাস পর ডাকসু নির্বাচন অথচ এখনো আমাদের ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে হয় প্রক্টরিয়াল টিমের প্রহরায়। বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতির ইতিহাসে এরকম ঘটনা নজিরবিহীন।
ডাকসু নির্বাচনের ব্যাপারে ছাত্রদল ছাত্রদল আন্তরিক জানিয়ে তিনি বলেন, ছাত্রদল ক্যাম্পাসে থাকবে। ডাকসু নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে শুরু থেকেই ছাত্রদল আন্তরিক। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উপর তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত আস্থা রেখে অপেক্ষা করতে চাই আমরা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আবুল বাশার সিদ্দিকি। তিনি ছাত্রদলের পক্ষ থেকে আট দফা দাবি তুলে ধরেন।
ছাত্রদলের দাবিগুলো হলো-
এক. পরিবেশ পরিষদের সর্বসম্মত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে ক্রিয়াশীল সকল ছাত্র সংগঠনের সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে।
দুই. ভোটার হওয়ার উপযুক্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল পর্যায়ের ছাত্রছাত্রীর প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতামূলক ধারা সংশোধন করে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।
তিন. হলে হলে ভোট গ্রহণের পরিবর্তে কেন্দ্রীয়ভাবে কলা ভবন ও কার্জন হলে গ্রহনের ব্যবস্থা করতে হবে।
চার. সচ্ছ-সুষ্ঠু ও নিরাপদ ভোট অনুষ্ঠানের লক্ষ্য গ্রহণের সকল প্রক্রিয়া এবং সমগ্র বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ক্লোজসার্কিট ক্যামেরার আওতায় আনতে হবে।
পাঁচ. ডাকসু নির্বাচন সচ্ছভাবে অনুষ্ঠিত করার লক্ষ্যে ছাত্র সংগঠনের কাছে গ্রহণযোগ্য শিক্ষকদের সমন্বয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে।
ছয়. ডাকসু গঠনতন্ত্রে সন্নিবেশিত ৫(ধ)-এর অগণতান্ত্রিক ধারার সংশোধন করে ছাত্র সংসদ বিলুপ্তি অথবা কার্যক্রম স্থগিত নেয়ার ক্ষেত্রে সভাপতি ও ছাত্র সংসদের যৌথ সিদ্ধান্তের বিষয় সংযোজন করতে হবে।
সাত. ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের তাফসিল ঘোষণার পর ছাত্র সংগঠনগুলো কোন প্রার্থী ও নেতাকর্মীদের কোন প্রকার হয়রানি, মামলা অথবা গ্রেফতার না করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
আট. সদস্য পদের ক্ষেত্রে ১৯৯১ সালের ডাকসু গঠনতন্ত্র বাতিলকৃত ৪ অনুচ্ছেদের ন, প ও ফ ধারা পুনরায় সংযোজন করতে হবে।