অনেক সিনেমা দেখি, কিন্তু খুব উচ্ছ্বসিত হয়ে রিভিউ লেখা হয় খুব কম। কিন্তু কিছু সিনেমার রিভিউ না লিখলেই নয়। হলিউড’র মূলধারার কোন সিনেমাতে ইসলামী ইতিহাস, বেদুইন ট্রাইব এবং আরবীয় কালচারের এতো ভালো উপস্থাপন পাইনি, লরেন্স অফ এরাবিয়াতে মোটামুটি ভালো উপস্থাপন ছিল।
তবে এখন যে সিনেমাটার আলোচ্য তা হল ‘দ্যা কুইন অব দি ডেজার্ট’। সিনেমাটিতে ছিল দারুণ গল্প, স্ক্রিনপ্লে, ব্যাকগ্রাউন্ডে অ্যারাবিয়ান ফোক অন্যদিকে আজান’র অদ্ভূত সুন্দর নান্দনিক উপস্থাপন আর এসবের সাথে নিকোল কিডম্যান, এককথায় জাস্ট অসাধারণ ইচ্ছে করছে প্রতিটি দৃশ্যের ডিটেইল বয়ান লিখি কিন্তু এখনও যারা দেখেন নাই তোদের জন্য একটা উস্কানি হিসেবে এই লেখায় কিছুই বলবো না। বলবো এমন সিনেমা দেখে মুগ্ধ হওয়ার যে অনুভূতি তা পুরোটা ব্যাখ্যায় ধরা মুশকিল। আমি খুশি হবো, পাঠক নিজ দায়িত্বে মুভিটি দেখে আরও সুন্দর ও বলিষ্ঠ বিশ্লেষণ হাজির করলে। তবে সিনেমাটা সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত। বেল গার্থট্রুড, একজন বিত্তশালী ব্রিটিশ পরিবারের সন্তান। যে কিনা প্রেমিকার বিরহে চষে বেড়িয়েছে আরবের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। যার একক অনুসন্ধান। এই চষে বেড়ানো পরে গবেষণার বিষয় হয়েছে। পরবর্তীতে আরবদের মানচিত্র এঁকে দেয়া, তাদের আলাদা আলাদা বর্ডার তৈরি করে দেয়া এইসবই করতে হয়েছে তাকে। বেচারি দুইটা প্রেম করে, দু’জনই বিয়ের আগে মারা যায়, শেষ পর্যন্ত আর বিয়ে করেন নাই, অবিবাহিত হয়ে মারা যায় ১৯২৬ সালে বাগদাদে। বলা হয় বেদুইনরা আজও একমাত্র বেলকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্বরণ করে। একমাত্র তিনি নাকি এই বেদুইনদের জীবনকে খুব গভীরে গিয়ে বুঝার চেষ্টা করেছেন। এইখানে আরো দেখা যায় কিভাবে ব্রিটিশ কলোনি অটোম্যান সাম্রাজ্য পতনের জন্য এক পায়ের উপর খাড়া হয়ে সমস্ত আরবের ভেতর হিংসা, বিবেদ’র সৃষ্টি করে। একদিকে তারা নিজেরাই কলোনি প্রতিষ্ঠা করে আবার অটোম্যান সালতানাত’র সমালোচনা করে। এরা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগেও আরবের অশান্তির কারণ ছিল আর সাম্প্রতিক কালেও আছে। হিপোক্রেসির কি সুন্দর উদাহরণ!
এই ছবির সিনেমাটোগ্রাফি আমাকে বেশ মুগ্ধ করেছে। মরুর বুকে উট, সাইমুম (বালি ঝড়), ওয়াদির জল, আরবি গাহওয়া, অ্যারাবিয়ান ফোকের উপস্থাপন, পারস্য কবি ও তাদের কবিতার সুন্দর উপস্থাপন, ওমর খৈয়াম, রুমির কবিতা পাঠ আহ কি সুন্দর! কোথায় যেনো পড়েছিলাম— একজন আমেরিকান’র হৃদয় একই সাথে খুনে, জেদি এবং ভালোবাসায় ভরপুর। সিনেমাটার একটা দৃশ্য আছে এমন, বেল’র হাতে তার প্রেমিকের আত্মহত্যার চিঠি এসে পৌঁছায় বেল তার রুমের জানালা দিয়ে তাকিয়ে থাকে বাহিরে। সেখানে একটি হরিণ দূরদৃষ্টে তাকিয়ে থাকে, আর দূরে একটা জলাশয়ে একটা সাদা রাঁজহাস একা পানিতে ভাসতে থাকে। এই একটা দৃশ্যে, জীবন, বিরহ আর কবিতা কি অদ্ভূত সুন্দরভাবে ফুটে উঠে সেটা দেখে বুকটা হু হু করে উঠে।
সিনেমার মাধ্যমে একটি ভূখন্ডের রাজনীতি ইতিহাস ও সংষ্কৃতিকে এতো সুন্দর ও ব্যাপকভাবে উপস্থাপনের নজির খুব বেশি নেই। সেই দিক থেকে এই সিনেমা একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তাই বিশেষ আর কিছু বলে শেষ করাই শ্রেয়। আশা করি সিনেমাটি দেখে আপনাদের ভালো লাগবে।