রেডসদের শিরোপা জয়ের স্বপ্ন এবং বাস্তবতা

রেডসদের শিরোপা জয়ের স্বপ্ন এবং বাস্তবতা

  • ২১ ম্যাচ শেষে লিভারপুলের পয়েন্ট ৫৪, সিটির ৫০
  • লিভারপুলের বিগ ম্যাচ বাকি তিনটি। প্রতিপক্ষ ইউনাইটেড, টটেনহাম এবং চেলসি
  • সিটির বিগ ম্যাচ বাকি চারটি। প্রতিপক্ষ আর্সেনাল, চেলসি, ইউনাইটেড এবং টটেনহাম
  • লিভারপুল লিগ বাদে টিকে রয়েছে শুধু চ্যাম্পিয়ন্স লিগে। অপরদিকে সিটি লড়াই করছে ইএফএল কাপ, এফ এ কাপ, চ্যাম্পিয়ন্স লিগেও

সেই ১৯৮৯/৯০ মৌসুমে শেষবার প্রিমিয়ার লিগ রাঙ্গিয়েছিল রেডসরা। কালে কালে কতকিছু বদলে কিন্তু রেডসের হাতে আর প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা উঠলো না। আধুনিক কালে প্রিমিয়ার লিগের শিরোপার স্বাদই কোনোদিন পায়নি ব্রিটিশ রাজের সবচেয়ে কুলীন দলটি। অধরায় রূপ নেয়া শিরোপার স্বাদটি পাবার সবচেয়ে ভালো সম্ভাবনা গত কয়েক মৌসুমের মধ্যে এবারই জাগিয়েছে ক্লপের দল। ২১ ম্যাচ শেষে এখনো পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে তারা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এ হাঁসি কী থাকবে?

মৌসুমের এ পর্যায়ে এসে যখন প্রথম এবং দ্বিতীয় দলের মধ্যকার পয়েন্ট ব্যবধান মাত্রই চার; তখন কে শিরোপা জিতবে সেটি নিয়ে ভবিষ্যৎবাণী করা বেশ কঠিনই। সরাসরি সেটি আমি করতে চাইও না, আমি বরং দেখতে চাই রেডস সমর্থকদের স্বপ্ন কতটা বাস্তব তা নিয়ে।

লিভারপুল পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে রয়েছে বেশ কিছুদিন। সিটি মুখোমুখি হওয়া শেষ ম্যাচে লিভারপুলকে হারিয়ে পয়েন্ট ব্যবধান কমিয়েছে বটে, তবে এখনো যে ব্যবধান রয়েছে তা লিভারপুলের জন্য ভালোই বলা যায়। লিভারপুলের জন্য শাপেবর হয়েছে ঘরোয়া সব আসর থেকে ছিটকে যাওয়া। তারা এখন শুধু লড়াই করছে লিগ এবং চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপার জন্য। অপরদিকে সিটি লড়াই করছে সাম্ভাব্য সবগুলো শিরোপার জন্যই। সে হিসাবে ক্লপের জন্য কাজটা কিছুটা সহজ।

চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ ষোলোতে রেডসদের প্রতিপক্ষ জার্মান জায়ান্ট বায়ার্ন মিউনিখ। গেলোবার লিভারপুল ফাইনাল খেললেও এ ম্যাচে বাভারিয়ানরাই স্পষ্ট ফেভারিট। যদি বায়ার্ন লিভারপুলকে বিদায় করে দেয় তাহলে ক্লপ পুরো মনোযোগই দিতে পারবেন লিগে। যেটি লিভারপুলের জন্য বর্তমান অবস্থা বিবেচনায় আশির্বাদই বলা যায়।

সিটির সাথে হারের আগ পর্যন্ত লিগে লিভারপুল রীতিমতো উড়ছিল। একটি হার কিছুটা ছন্দপতন ঘটালেও তাতে রেডসরা একদমই ছিটকে যাবে বলে মনে হয় না। গত কয়েকটি ট্রান্সফার উইন্ডোতেই ক্লপের বুদ্ধিদীপ্ত কিছু সিদ্ধান্ত দেখেছি আমরা। জানুয়ারির মার্কেট যেহেতু খোলা এটি তিনি ভালো ভাবেই কাজে লাগাতে পারেন। লিভারপুলের যে মূল সমস্যাটা ছিল, রক্ষণে; সেটি এ মৌসুমে অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছে রেডসরা। তার মূলে অবশ্যই ভ্যান ডাইক এবং বেকারের জুটি। ভ্যান ডাইক এর মধ্যে জিতেছেন প্রিমিয়ার লিগের গেলো মাসের সেরা খেলোয়াড়ের পুরষ্কার। যেটি গত ছয় বছরের মধ্যে কোনো ডিফেন্ডারের প্রথম। স্বাভাবিক ভাবেই এটি তাকে আরো ভালো খেলতে অনুপ্রেরণা যোগাবে। আর তার ভালো খেলা মানেই প্রতিপক্ষের স্ট্রাইকারদের জন্য কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হওয়া।

লিগে লিভারপুলের বড় ম্যাচ বাকি রয়েছে তিনটি। যে তিনটিতে তাদের প্রতিপক্ষ ইউনাইটেড, চেলসি এবং স্পার্স। তিনটি ম্যাচের মধ্যে ইউনাইটেডের বিপক্ষে খেলতে হবে তাদের মাঠে গিয়ে। বাকি দুটি ম্যাচই রেডসরা খেলবে নিজেদের মাঠে। এটা অবশ্যই লিভারপুলকে বাড়তি সুবিধা দিবে। যদিও চলতি মৌসুমের হিসাবে ম্যাচ তিনটি ভীষন কঠিনই হবে বলা যায়। মোরিনহোর বিদায়ে ডেভিলসরা যেন নয়া জনম পেয়েছে। চেলসি আর স্পার্সরা তো শুরু থেকেই ছন্দে রয়েছে। লিভারপুলের জন্য দুশ্চিন্তা একটি বড় বিষয় হতে পারে বড় ম্যাচগুলোতে দলের মূল ভরসা সালাহর নিষ্প্রভ থাকা। এ তিনটি ম্যাচে তার জ্বলে উঠার বিকল্প নেই।

অপরদিকে সিটি লড়াইয়ে রয়েছে চারটি শিরোপার। এর মধ্যে সিটিকে বাড়তি মনোযোগ দিতে হবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে। পেপ গার্দিওলাকে উচ্চ বেতনে কোচ করে আনার মূলেই ছিল এ শিরোপা স্বাদ নেয়াটা। ট্রান্সফার মার্কেটে পেপকে যথেচ্ছা খরচের সুযোগও দেয়া হয়েছে সে জন্যই। শেষ ষোলোতে তাদের প্রতিপক্ষ তুলনামূলক সহজ; জার্মান ক্লাব শালকে। সিটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে যতদুর যাবে লিগটা তাদের জন্য ততই কঠিন হয়ে উঠবে। কারণ, যেমনটা বললাম, সিটিকে মূল লক্ষ্য হিসাবে নিতে হবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগকেই।

লিগে সিটির বিগ ম্যাচ রয়েছে চারটি, যার মধ্যে আবার দুটি ম্যাচ পরপর। আর্সেনাল, চেলসি, ইউনাইটেড এবং এবং স্পার্সদের মুখোমুখি হবে সিটিজেনরা। সুবিধা হচ্ছে এক ম্যাঞ্চেস্টার ডার্বি বাদে সিটির বাকি সব ম্যাচই নিজেদের মাঠে।

সিটির জন্য সমস্যা হতে পারে দু’টি। প্রথম যে সমস্যা সেটি খেলোয়াড়দের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত না হলেও তার প্রভাব খেলায় পড়তে বাধ্য। সিটির দুর্নীতির বিরুদ্ধে ইতোমধ্যেই তদন্ত হচ্ছে। এবং তাতে দোষী সাব্যস্ত হলে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে নিষিদ্ধ হতে পারে তারা। যা, আগুয়েরো বা ডি ব্রুইনির মত তারকাদের জন্য বিশাল বড় একটি ধাক্কা হবে। অপরদিকে দলের অন্যতম মূল তারকা ডি ব্রুইনি পেপের সিদ্ধান্তে নাখোশ মনোভাবের প্রকাশ ঘটিয়েছেন প্রকাশ্যেই। যেটি নেতিবাচক প্রভাব পরার বেশ সম্ভাবনা রয়েছে।

সিটির জন্য আরো একটি নেতিবাচক বিষয় হতে পারেন খোদ গার্দিওলাই। বার্সার হয়ে মৌসুমের সব শিরোপা জেতার স্বাদ নেয়ার ফলে তিনি পুনরায় এটি ঘটানোর জন্য বুভুক্ষ থাকবেন এটাই স্বাভাবিক। সেটি যে তিনি করতে চান, তার প্রমাণও ইতোমধ্যে দেখা গিয়েছে। শঙ্কার বিষয় হচ্ছে, ইংলিশ ফুটবল আর স্প্যানিশ ফুটবলে ফারাকটা ব্যাপক। এখানে এফ এ কাপের মতো আসরে মূল দল খেলানোর ঝুঁকিটা কেউ সহজে নিতে চায় না। শরীর নির্ভর খেলার কারণে ইংলিশ লিগে চোটে পরার সম্ভাবনা সব সময়ই থাকে প্রবল। এখন পেপ যদি সবগুলো শিরোপাকেই পাখির চোখ করেন, হারাতে হতে পারে সবই। বার্সার ঐ দলটির সাথে সিটির এই দলের কোনো দিক দিয়েই তুলনা চলে না।

এসব কিছু বিবেচনায় বলা যায় চলতি শতাব্দীতে পয়লাবারের মতো প্রিমিয়ার লিগ জেতার আশার রেসডরা করতে পারে। এমন সুযোগ কালভেদ্রেই পাওয়া যায়। এটি কাজে লাগাতে না পারলে অমানিশার প্রহর যে দীর্ঘ হবে তা বলাই বাহুল্য।