বিতর্কের সাথে বিপিএল’র রসায়ন এতটাই জমেছে যে, বিসিবি কর্তাদের তাতে বাগড়া দেয়ার প্রয়াস বুমেরাং হয়ে তারাই পরিণত হয়েছেন পরিহাসের পাত্রে। এ থেকে পরিত্রাণের পথ কী, বা আদৌ কোনো পথ আছে কি না, তা অদৃষ্টেরই জ্ঞাত। তবে, চলতি বিপিএল’এ হালত দেখে বিসিবি কর্তাদের জন্য মায়া লাগছে। এবার তারা এহসাস করেছিলেন ভুলগুলো, তা কবুল করে কর্মেও নেমেছিলেন। কিন্তু ঐ যে, বিপিএল আর বির্তকের এতদিনের প্রণয়; সহজ বিষয়গুলোও শায়েস্তা করে ছাড়ছে যেন।
আপনি রিভিউ এর বিষয়টাই দেখুন। যে কর্তারা নিয়ত ঘরের মাঠে এ প্রযুক্তি ব্যবহারের বিষয়ে জ্ঞাত, তারা আচানকই স্নিকোর কার্যকারিতা ভুলে যান কি করে? রিভিউ না রাখলেই বরং নিত্য নতুন বিচিত্র সব বয়ান দেয়া থেকে বেঁচে যেতেন তারা। লিখে রাখুন, আসরটি যদি বিপিএল না হয়ে ভিন্ন হতো তাহলে এরকম ভীমরতিতে ধরতো না তাদের। অন্তত আমার অভিজ্ঞতা তাই বলে। আমাদের আম্পায়ারদের অদ্ভূতুড়ে সব সিদ্ধান্তের বিপরীতে রিভিউ ব্যবস্থা বাহবার দাবিদার ছিলো। সেখানে উল্টো এখন স্নিকো বা আল্ট্রার এজের অনুপস্থিতিতে রিভিউতে আম্পায়াররা যে সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন সেটিই বরং জনম দিচ্ছে নয়া সব বিতর্কের। হালত দেখে মায়াই লাগে। এবার বিভিন্ন প্রযুক্তি যুক্ত করে আসরটিকে আকর্ষনীয় করার বেশ একটা প্রচেষ্টা শুরু থেকেই দেখা যাচ্ছিল। সেটি কি না মার খেয়ে গেল, এমন একটি প্রযুক্তির কাছে যেটির সাথা জানাশোনা মেলা দিনের।
এ অবস্থায় মায়া না লাগাটাই বরং অন্যায্য ঠেকে। ঝামেলা শুধু রিভিউ নিয়ে হলেও রক্ষা ছিলো। এবার বিন বুলায়ে বারাতির মত যোগ হয়েছে সম্প্রচারে সমস্যা। খালেদ আহমেদের বয়স ১৯ থেকে বেড়ে একলাফে হয়ে গিয়েছে ১১৯! বান্দা এমন দৃশ্য দেখলে ধরণীর ওপর দেখেই ইয়াকিন হারিয়ে ফেলতেন। বয়স লুকানোর বিষয়ে আমাদের পুরোনো সুনাম! রয়েছে; সেটি শুদ্ধ করার বোধকরি একটি প্রয়াস ছিলো এবার। তবে, এ প্রয়াস পরিহাসে পরিণত এখন। কারো বয়স আর যাই হোক ১৯ থেকে ১১৯ হয়ে যেতে পারে না।
এটাকে শুধুই সংখ্যার ভুল বলে উড়িয়ে দেয়া যেত যদি না আমরা বাকি দৃশ্যগুলোর সাথে পরিচিত না হতাম। ওভারের শেষে যে স্কোরকার্ড দেখানো হয়েছে তা আরো বড় বিভ্রান্তি জনম দিয়েছে। দু’জন ব্যাটসম্যানের খেলা বলের যোগফল ওভারের মোট বলের চেয়ে কম! অতিরিক্ত বল ব্যাটসম্যানের খেলা বলের হিসাবে যুক্ত হয় না বলেই আমরা জানি। সে হিসাবে দু ওভার শেষে দুই ব্যাটসম্যানের খেলা বলের সংখ্যা হবার কথা বারো। কিন্তু স্কোর কার্ডে আমরা দেখেছি দু’জনের খেলা বলের সংখ্যা দাড়াচ্ছে এগারোতে! আপনি চাইলে এটিকে ছোট ভুল বলে এড়িয়ে যেতে পারেন। কিন্তু এটি মাথায় রাখা আবশ্যক যে, এ আসরটিই বাংলাদেশের একমাত্র ঘরোয়া আসর যা বিশ্বব্যাপী সম্প্রচারিত হয়।
গেলোবার ধারাভাষ্য নিয়ে বিস্তর সমালোচনা হয়েছে, তা আমলে এনে বিসিবি জানিয়েছিলো তারা এবার চেষ্টা করবে এই সমস্যার সমাধার। চেষ্টা বিসিবি করেছে বটে তবে পরিতাপের বিষয় হলো তা থেকে কোনো পরিত্রাণ পাওয়া যায়নি। এ বিষয়টি বিস্তারিত আলোচনার দাবি রাখে, তাই আপাতত এই বিষয়ে কিছু যোগ করছি না আর।
মাঠের বাইরের মতই বেহাল দশা মাঠের খেলারও। অসময়ে খেলা দেয়ার দরুণ দর্শক-খরাও এবার চোখে লাগার মত। হালত এমনই যে, মুশফিককে এখন আহ্বান জানাতে হচ্ছে মাঠে আসার জন্য। অসময়কে খেলার সময় হিসাবে বেছে নেয়ার জন্য বিসিবির যুক্তিটা যৌক্তিক হলেও তা দর্শকদের মন গলাতে পারছে না। খেলার হালতও তথৈবচ। একপেশে ম্যাচ, লো স্কোরিং ম্যাচ এবং সময়ের কারনে এবার বিপিএল ভুগছে দর্শক-খরায়। খেলোয়াড়রা মাঠে গিয়ে খেই হারাচ্ছে কেন তা খেলোয়াড়রাই বলতে পারবেন। পিচের দায় দিয়ে দায়মুক্তি পথ আপাতত দেখা যাচ্ছে না। কারণ, এ পিচেই ভিনদেশের তারকারা বেশ করছেন। কিন্তু, বাস্তবতা হচ্ছে পিছনের হেতু যাই হোক; নিরস মাঠ দর্শক আকর্ষনে ব্যর্থ। টি টোয়েন্টি মানেই যেখানে ধামাকা সেখানে ব্যাটসম্যানদের খাবি খেতে দেখতে কার ভালো লাগে? বোলিং উপভোগ করার জন্য আর যাই হোক টি টোয়েন্টি আদর্শ মঞ্চ না।
সব দিক মিলিয়ে বলা যায়, বিসিবির একান্ত প্রচেষ্টার পরেও এবারের বিপিএল এখন পর্যন্ত হতাশাই উপহার দিয়ে যাচ্ছে। যদিও আসরটি কেবলই শুরু, এবং বিসিবির হাতে বেশ সময়ও রয়েছে সমস্যাগুলোর সমাধা করার, তাই আশা করাই যায়। আশার মাঝে আশঙ্কা হয়ে দেখা দিচ্ছে বিপিএল নামটি। এটা জুড়ে গেলেই সরল অঙ্কও কেমন যেন বিদঘুটে দেখায়। এমন চলতে থাকলে বিপিএল না শেষে বাংলাদেশ প্রিমিয়াল লিগ থেকে বিতর্কের প্রিমিয়ার লিগে পরিণত হয়!