রক্তস্নাত, হিংসাদীর্ণ জম্মু ও কাশ্মির উপত্যকার অন্যতম উজ্জ্বল মুখ শাহ ফয়জল ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস থেকে পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলেন। ফেসবুক মাধ্যমে এক বিবৃতি মারফত তিনি জানিয়েছেন, “কাশ্মির উপত্যকায় ক্রমবর্ধমান গণহত্যা এবং কেন্দ্রীয় সরকারের সহৃদয় হস্তক্ষেপে অনীহার প্রতিবাদে আমি আইএএস থেকে পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” তার পদত্যাগকে কেন্দ্র করে ভারতীয় রাজনীতিতে তুমুল চর্চা শুরু হয়েছে।
কে এই শাহ ফয়জল? জম্মু ও কাশ্মিরের ইতিহাসে নজির তৈরি করে প্রথমবার ২০১০ ব্যাচের সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় শীর্ষস্থান অধিকার করেন শাহ ফয়জল। তখন তার বয়স ছিল মাত্র ২৬ বছর। সেই প্রেক্ষিতে তাকে অভিনন্দন জানান তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ডক্টর মনমোহন সিংহ। সঙ্গত কারণেই তিনি উপত্যকার এক অন্যতম ‘ইউথ আইকন’। জম্মু ও কাশ্মির উপত্যকার কুলওয়ারার সোগাম লোলাব অঞ্চলের বাসিন্দা শাহ ফয়জল সম্মানজনক ফুলব্রাইট স্কলারশিপ পেয়ে হার্ভার্ড কেনেডি স্কুলে শিক্ষালাভ করেন। হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি থেকে ডিগ্রি অর্জন করে তিনি সদ্য দেশে ফিরেছেন। আইএএস টপার হওয়ার পর আমেরিকা পাড়ি দিয়েছিলেন পড়াশোনা সম্পূর্ণ করার জন্য, পাশাপাশি যুক্ত ছিলেন গবেষণায়। দেশে ফেরার পর অপেক্ষা করছিলেন পোস্টিং পাওয়ার জন্য। শেষতক আমলা হওয়ার সিদ্ধান্ত ত্যাগ করলেন তিনি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকাকালীন তিনি সামাজিক মাধ্যমে সমালোচনা করেছেন কেন্দ্রীয় সরকার এবং জম্মু ও কাশ্মির রাজ্য সরকারের। তাকে সতর্কবার্তা দিয়েছিল রাজ্য সরকার, তাতেও দমেননি তিনি। কিছুদিন আগে টুইটার মাধ্যমে দেশে খুন, ধর্ষণ ইত্যাদি অভিযোগের প্রসঙ্গে তিনি লেখেন, “জনসংখ্যা, পিতৃতন্ত্র, অশিক্ষা, মদ, পর্নোগ্রাফি, প্রযুক্তির অপব্যবহার এবং অরাজকতার কারণে আমাদের দেশ রেপিস্তান হয়ে গিয়েছে!” জম্মু ও কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা সংক্রান্ত সংবিধানের ৩৫এ ধারাকে তিনি ব্যঙ্গ করে বলেন, ভারত এবং সংশ্লিষ্ট রাজ্যের ‘বিয়ের দলিল’। নরেন্দ্র মোদির সরকারকে কাঠগড়ায় তুলে তার বক্তব্য, “রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, সিবিআই, এনআইএ ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানে সরকারি হস্তক্ষেপ এই দেশের সাংবিধানিক কাঠামোকে বিনষ্ট করতে পারে। আমি জানাতে চাই, দেশের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ দীর্ঘদিন চুপ করে থাকবেন না”।
৯ জানুয়ারি নিজস্ব ফেসবুক প্রোফাইলে শাহ ফয়জল লিখেছেন, “কাশ্মিরের আমজনতার উপর অত্যাচার, কেন্দ্রীয় সরকারের অবিচার এবং হিন্দুত্ববাদী শক্তির হাতে ভারতের ২০ কোটি মুসলিম নাগরিক দুরবস্থার শিকার। কাশ্মিরি আমজনতার হত্যা থামাতে সদিচ্ছা দেখাচ্ছে না কেন্দ্রীয় সরকার। রাজ্যের বিশেষ মর্যাদার উপরেও আঘাত হানার চেষ্টা হচ্ছে। হিন্দুত্ববাদের চাপে দেশের ২০ কোটি মুসলিম কার্যত দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত হয়েছে।”
ফেসবুকে এই মন্তব্য পোস্ট করার পর রাজনীতি মহলে প্রশ্ন উঠছে, তবে কি সক্রিয় রাজনীতি শুরু করবেন শাহ ফয়জল? গুঞ্জন ওঠে, শাহ ন্যাশনাল কনফারেন্স দলে যোগদান করেছেন। সামাজিক মাধ্যমে ন্যাশনাল কনফারেন্স শীর্ষনেতা ওমর আবদুল্লা লিখেছেন, “আমি ফয়জলকে রাজনীতিতে স্বাগত জানিয়েছি। তিনিই জানাবেন তার রাজনৈতিক পরিকল্পনা।” ওমর আবদুল্লা অন্য বিবৃতিতে লিখেছেন, “আমলাতন্ত্রের ক্ষতি হলেও রাজনীতির লাভ হল। রাজনীতিতে তিনি স্বাগত।” তবে কি গুঞ্জন সত্য? শাহ ফয়জল বলেছেন, আগামী শুক্রবার অর্থাৎ ১১ জানুয়ারি তিনি সাংবাদিক সম্মেলন করে তার ভবিষ্যত পরিকল্পনা জানাবেন। কাশ্মির উপত্যকার হিতসাধনায় তিনি নিবেদিতপ্রাণ। কাশ্মিরি মানুষেরা যেন এভাবেই তার পাশে থাকেন। আপামর কাশ্মিরি আমজনতার বয়ান কার্যত শাহ ফয়জলের মন্তব্যে যেন ধরা রয়েছে। বিরোধী শিবিরের উপর্যুপরি প্রশ্নবাণে বিধ্বস্ত নরেন্দ্র মোদি আরও একটি বিপাকে পড়লেন, মনে করছে রাজনৈতিক মহল।